আজ থেকে ১০০ বছর আগে, ১৯১৯ সালের ৬ নভেম্বর স্যার আর্থার এডিংটন তার এক্সপেডিশনের রেজাল্ট প্রকাশ করে বলেন - আইনস্টাইনের থিউরিই ঠিক। ভারী বস্তুর পাশ দিযে আসার সময় আলো বেঁকে যায়। এ যেন কোন সুন্দরী মেয়েকে পাশ কাটানোর সময় তাকে কুর্নিশ করা। বিশেষ করে মেয়েটি যদি মেরিলিন মনরো হন।
অনেকের ধারণা গ্র্যাভিটির ফলে আলোর বেঁকে যাওয়ার ব্যাপারটা আইনস্টাইনই প্রথম বলেছেন। তবে, কথাটা সত্য নয়। ১৭০৪ সালে আইজ্যাক নিউটনও কথাটা বলেছেন। তবে, সেভাবে কোয়ান্টিফাই করতে পারেননি।
আইনস্টাইন অবশ্য একটু সরে আসলেন। তিন বললেন - আলো যে বাঁকে সেটা আসলে পথটা বাঁকা বলে। সূর্যের মতো একটি ভারীবস্তু তার আশেপাশের স্থানকালকে বাঁকিয়ে দেয়। শূণ্যে ভাসমান একটি চাদরে যদি একটা বল ছেড়ে দেন তাহলে সেটি ঘুরে ঘুরে এর কেন্দ্রে গিয়ে হাজির হবে এবং চাদরের মাঝখানে ঝুলে পড়বে। এরপর আপনি যাইই গড়িয়ে দেন না কেন সেটা ঘুরে টুরে ঐ বলের কাছেই যাবে। কারণ এছাড়া আর কোন পথ নাই।
আইনস্টাইন হিসাব করে সেটা বেরও করে ফেললেন ১৯১৬ সালে। প্রকাশের জন্য যখন তিনি তাঁর সাধারণতত্ত্ব প্রকাশকের কাছে পাঠান তখন ফুটনোটে লিখেছেন -"এ নিবন্ধ বোঝার মতো লোক পৃথিবীতে ১২জনের বেশি নাই there were not more than twelve persons in the whole world who would understand it,"
আইনস্টাইনের এই কথা যে কতোটা সত্য সেটা বোঝা যায় কিছুদিন পরে। একদর সায়েন্টিস্ট আইনস্টাইনের বিরোধিতা করে বইই লিখে ফেললেন - 100 Against Einstein'
শুনে আইনস্টাইন বললেন - If I was wrong, one would be enough!
আইনস্টাইনের এই কথাগুলো সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যখন ইংলন্ডে পৌছায় তখন সেটি হয়ে যায় 'তিনজন'। এ প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিক স্যার আর্থার এডিংটনকে একবার কথা প্রসঙ্গে জানায় - আইনস্টাইন নাকি বলেছেন সাধারণত্ত্ব মাত্র তিনজন লোক বুঝতে পারে?"
জবাবে এডিংটন ভ্রূ কুঁচকে বলেন - আর একজন কে?
সে সময় ইউরোপ জুড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। কাজে আইনস্টাইনের জন্য জীবনপাত করার কারও খায়েশ হওয়াার কথা নয়। কিন্তু দেখা গেল স্যার আর্থার এডিংটন এবং ডাইসন, ইংলন্ডে বসে পরিকল্পনা করছেন কেমন করে এটি প্রমাণ করা যায়। কিন্তু ফান্ডিং আর নিরাপদে ব্রাজিল যাওয়ার উপায়?
১৯১৮তে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে সেই সুযোগটা আসে। ২৯ মে ১৯১৯ এর পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য দু্টি ব্রিটিশ দল রওনা হলো দক্ষিণ আমেরিকার উদ্দেশ্যে। ব্রাজিলের দলটির তর সয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি ফটোগ্রাফিক প্লেট ডেভেলপ করেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কারণ আইনস্টাইনই জিতে যাচ্ছেন মনে হয়। এডিংটন অবশ্য ধীরে চলা নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি দেশে ফিরে সকল ছবি নিয়ে বসলেন এবং ৬ নভেম্বর রাজকীয় বিজ্ঞান সমিতির একটি কক্ষে সাংবাদিকদের সামনে সব কিছু তুলে ধরলেন।
আইনস্টাইনকে এক সাংবাদিক বললেন - আ্চ্ছা, আপনার তত্ব যদি সত্য প্রমাণিত না হতো তাহলে আপনি কী করতেন?
হাসতে হাসতে আইনস্টাইন বললেন - ঈশ্বরের জন্য করুণা বোধ করতাম!
এই ঘটনা আইনস্টাইনকে রাতারাতি তারকা খ্যাতি এনে দেয়। ৭ তারিখে লন্ডন টাইমস হেডলাইনে লিখেছে -“Revolution in science NEW THEORY OF THE UNIVERSE: NEWTONIAN IDEAS OVERTHROWN.”
১০ নভেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমস এটিকে প্রধান শিরোনাম করে। সেদিন প্রথম পাতায় ছয় কলামে এই সংবাদ ছাপা হয়।
আর এভাবে আমাদের মিলোভার স্বামী হয়ে উঠেন বিশ্বজন। আইনস্টাইনের ১২ জনের সংখ্যাটা বাড়তে সময় নেয়ে ম্যালাদিন।
[এই শিরোনামে একটি সিরিজ লিখতে শুরু করি আমি বেশ কিছুদিন আগে। ফেসবুকেই লিখেছি। কাল সোহানীর লেখা পড়ে মনে হলে এই সিরিজটা সামহোয়্যার ইনে লিখলে মন্দ হয় না। সেই কারণে এখানে লেখা। মুক্ত সামু ব্লগে লিখতে পারাটাও একটা আনন্দের ব্যাপার। ]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪৯