somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিমরা কি অমুসলিমদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনা?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান বিশ্বে ইসলাম বিরোধীরা, ইসলাম বা মুসলিমদেরকে ‘হেট মঙ্গার’ জাতি বলে প্রচার করছে! বলা হচ্ছে যে, মুসলিমরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি মনে-প্রাণে ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে। এর জন্য নাকি আল-কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে, যা একজন মুসলিমকে অবশ্যই পালন করতে হবে! আর তাদের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তারা যে সকল আয়াত তুলে ধরেন সেগুলোর মধ্যে সূরা আল-মায়েদার ৫:৫১ আয়াত উল্লেখযোগ্য (যে ভাবে বর্তমানে বাংলায় অনুবাদ আছে)-

হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের বন্ধু এবং অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু এবং অভিভাবক। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদের [বন্ধু এবং অভিবাবকরূপে] গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অন্যায়কারীকে [সুপথে] পরিচালিত করেন না। (কোরআন ৫:৫১)

উপরের আয়াতে বাংলা অনুবাদে অনুবাদকগণ 'বন্ধু' ও 'অভিভাবক' শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু মূল আরবীতে এই শব্দ দুটির প্রতিশব্দ রূপে একটি শব্দ দেওয়া হয়েছে, আর তা হল 'আউলিয়া।' সাধারণতঃ সবাই জানেন যে- আরবীতে ‘বন্ধু’ শব্দের সরল প্রতিশব্দ হল ‘সাদিক’, কিন্তু গভীরভাবে খেয়াল করুন, আল্লাহপাক কোরআনের এই নির্দিষ্ট আয়াতগুলোতে ‘সাদিক’ ব্যবহার না করে ‘আউলিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সাদিককে 'সাদিক' না বলে 'আউলিয়া' শব্দটি ব্যবহার করা হল কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের ‘আউলিয়া’ শব্দটির অর্থ জানতে হবে। আরবী ‘অলি’ (অভিভাবক) শব্দ বহুবচনে ‘আউলিয়া’ হয়েছে। তাহলে দেখি ‘অলি’ শব্দটি বলতে কী বুঝায়? আমাদের দেশে বিয়ে-সাদির সময় বলা হয়ে থাকে বর বা কনের অলি কে? তখন জবাব দেওয়া হয়- যদি কনে বা বরের বাবা থাকেন, তাহলে বলা হয়- কনে বা বরের বাবাই অলি। যদি বাবা না থাকেন, চাচা/মামা বা অন্য কেউ থাকেন, তখন বলা হয়- অমুক কনে বা বরের অলি। এখানে ‘অলি’ মানে ‘অভিভাবক’ বা ‘তত্বাবধায়ক’ কাউকে বুঝানো হয়। অলি’র বহুবচন আউলিয়া- মানে অভিভাবকগণ বা তত্বাবধায়কগণ। এই আয়াতের নাজিলের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে বিবেচনা করলে যে কেউ বুঝতে পারবে এই আয়াতে 'আউলিয়া' শব্দ দ্বারা 'নিরাপত্তাদানকারী' বুঝাচ্ছে। যেমন রাসুল সাঃ এর নিরাপত্তাদানকারী ছিলেন উনার চাচা আবু তালিব, যার কারণে মক্কার কাফিরগণ রাসুলের কোন ক্ষতি করতে পারে নাই। তবে এই আউলিয়া শব্দের প্রয়োগ আরো ব্যাপক, এই একই শব্দ দিয়ে আমরা ৪টি শব্দের প্রতিরূপ পেতে পারি যেমন- মিত্র (allies), বন্ধু (friend), অভিভাবক (guardian) ও নিরাপত্তাদানকারী (protectors)। এবং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই চারটি প্রতিশব্দের যে কোন একটি বা একত্রে চারটি প্রতিশব্দকে প্রয়োগ করা যাবে।

এবার আল-কোরআনের সূরা মুমতাহিনার ১৩ নং আয়াত দেখা যাক-

হে বিশ্বাসীগণ! যে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্‌ রুষ্ট হয়েছেন, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। ইতিমধ্যে তারা পরলোক সম্বন্ধে নিরাশ হয়েছে, যেমন নিরাশ হয়েছে অবিশ্বাসীরা কবরস্থদের বিষয়ে। (কোরআন ৬০:১৩)


এখানে দেখুন আল্লাহ বলছেন- লা তাতাওয়াল্লু (তাতাওয়াল্লু শব্দটি এসেছে আউলিয়া থেকে) কাওমান (কওম)। আল্লাহ এখানে স্পষ্ট করে শুধু সম্প্রদায়ের সাথে মিত্রতা না করতে বলছেন, কিন্তু এখানে ব্যক্তিগতভাবে কোন ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সামাজিক বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করছেন না। এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব নয় মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

আমি মনে করি সর্বক্ষেত্রে অনুবাদ আমাদের রেফারেন্স হতে পারেনা, অনুবাদ যদি মূল ভাবকে যথার্থ ভাবে প্রকাশ করতে না পারে তাহলে আমাদের মূল আরবী শব্দটিকে গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য ইসলামি বিশেষজ্ঞরা সব সময় অনুবাদের সাথে মূল আরবীকে মিলিয়ে দেখার উপদেশ দিয়ে আসছেন। এজন্য আমি মনে করি উপরোক্ত আয়াতে মিত্র/ নিরাপত্তাদানকারী প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হলে সঠিক হবে, যা ইংরেজিতে Allies/Guardian বুঝায়।



অতএব, উপরোক্ত দুটি আয়াত থেকে দেখা যায় যে, এখানে বাংলায় বন্ধুকে অভিভাবক/নিরাপত্তাদানকারী হিসাবে দেখানো হয়েছে (৫:৫১) এবং এই নির্দেশ নিছক ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, এটি দেওয়া হয়েছে সম্প্রদায়গতভাবে (৬০:১৩)। তাই স্বাভাবিকভাবে আরবীতে বন্ধু বলতে যে শব্দ (সাদিক) ব্যবহার করা হয়, উপরোক্ত দুটি আয়াতের একটিতেও তা ব্যবহার করা হয়নি!
[এই প্রবন্ধটি আজ ভোরে পোস্ট করেছিলাম- ২৪টি মন্তব্য, ৭ জনের ভাললাগা ১৬/১৭ প্রিয়তে নেওয়া আর ২৫০ এর উপর পঠিত ছিল। কিন্তু আজ দুপুরে ব্লগে এসে দেখি পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে! অবাক হলাম বুঝতে পারলাম না কেন আমার এই পোস্টকে ড্রাফটে পাঠিয়ে দেওয়া হলো! এডমিনের কাছে জানতে চেয়ে ইমেল দিয়েছিলাম। জবাব পাই নাই। তাই ঘটনাটি কি বুঝতে পারছিনা। তাই আবার রিপোস্ট করলাম। যারা কমেন্ট করেছিলেন তাদের কমেন্ট মুছে যাবার জন্য দূঃখিত!!]


এবার দেখা যাক ঐ আয়াতের ঐতিহাসিক প্রক্ষাপট- অর্থাৎ কখন, কোথায় এবং কী প্রয়োজনে নাজিল হয়েছিল। আপনারা জানেন- ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে- কীভাবে মুসলিমদেরকে তাদের সহায়, সম্পদ, ভিটেমাটি ফেলে জন্মভূমি থেকে দেশান্তরী হতে হয়েছিল। সেই দেশান্তরী মানুষদের তখন মদিনাবাসীদের মধ্য থেকে বেশ কিছু মানুষ মদিনাতে আশ্রয় দিয়েছিল। মুসলিমরা আশ্রয় নেবার সাথে সাথে ঐ নগরীর অন্যান্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সহিত একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ঐ চুক্তিতে এই মর্মে শর্ত ছিল যে- এই নগরের যে কোন গোত্র ও ধর্মীয় গোষ্ঠী যদি বহিরাগত শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে সবাই মিলে তা প্রতিহত করতে হবে। এবং এই শান্তিচুক্তির অধীনের কেউ কখনো চুক্তি ভুক্ত গোত্রের কোন দুশমনদেরকে সাহায্য করতে পারবেনা। চুক্তি ভুক্ত গোত্রগণ একে অপরের সহিত যুদ্ধও করতে পারবেনা।



এই শান্তি চুক্তি মদিনার অন্যান্য গোত্র সহ মদিনার ইহুদীদের সাথেও ছিল। কিন্তু ইহুদীদের মধ্যে বানু কাইনুকাইরা মুসলিমদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে যুদ্ধ বাধিয়েছিল। ইসলাম-পূর্ব সময় থেকে মদিনার কোন কোন মুশরিক গোত্রের সাথে এই ইহুদী বানু কাইনুকাদের মৈত্রীতা ছিল। তাই ঐ মিত্রতার শর্ত ছিল- কাইনুকাইরা আক্রান্ত হলে তাদের মিত্ররাও এদের রক্ষা করতে এগিয়ে যেতে হবে। যেহেতু ইসলাম গ্রহণের ফলে মদিনার সকল মুশরিক গোত্র এক মুসলিম মিল্লাতে অঙ্গীভূত হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পূর্বকৃত মিত্রতা অকার্যকর হয়ে যায়। আর এই অবস্থায় আল-কোরআনের এই আয়াত দিয়ে আল্লাহ নও-মুসলিমদের কী করতে হবে তার স্পষ্ট নির্দেশ বলে দিয়েছেন। কাজেই আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপটে একটি অনুবাদ এভাবে হতে পারে-


হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে তোমাদের মিত্র এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী (Protectors) রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের মিত্র এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদেরকে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অন্যায়কারীকে পরিচালিত করেন না

বাংলা ব্লগগুলোতে দেখা যায় যে- যে কেউ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় এমন আয়াত পেলে তৎক্ষণাত তুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু এটি কোরানিক সুনান নয়। আল-কোরআনের কোন এক আয়াত পড়েই কেউ তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। আল-কোরানের অনেক আয়াত আছে যেগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকে, তাই একাধিক আয়াতকে সামনে এনে বিচার বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হয়। ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করলে মূল অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অনুবাদকের চেয়ে ইসলাম বিরোধীদের অজ্ঞতাই বেশী দায়ী। কিন্তু সেই অজ্ঞতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও একে নিয়ে চর্বিত-চর্বণ কপটতার শামিল। দুঃখজনক হলো এটাই ব্লগগুলোতে আজকাল অনেকে করছে।



যেহেতু এই একটি আয়াত নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা যখন তখন ইসলামকে ‘হেট মঙ্গার’ ধর্ম প্রমাণ করতে লেগে যায়, তাই আমি এই আলোচনা আমার শিরোনামের আলোচ্য সূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করেছি। তবে একজন সঠিক মুসলিম জানেন যে- একজন অমুসলিমদের প্রতি একজন মুসলিমের সম্পর্ক কেমন হবে, তার স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা আল্লাহ পাক আল-কোরআনে দিয়ে রেখেছেন! বাস্তব সত্য হচ্ছে যে- নানাবিধ প্রতিকূলতার জন্য পৃথিবীর প্রতিটি ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, সম্প্রদায়ের সাথে সম্প্রদায়ের, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে- বন্ধুত্ব নেই বলে তারা পরস্পরের দুশমন হয়ে যায়। বন্ধুত্ব অনেক প্রকার হতে পারে। ব্যক্তিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, পেশাভিত্তিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক। তবে যদি ধরে নেয়া হয় যে- এই আয়াত দ্বারা ব্যক্তি কেন্দ্রিক বন্ধুত্বকে নিষেধ করা হয়েছে, তবে সেই বন্ধুত্বটি হবে আত্মিক বন্ধুত্ব, আর আত্মিক বন্ধুত্বের জন্য অবশ্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ হবার দাবি রাখে।



ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব বজায় সম্পর্কে আল-কোরআনে আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে- যে সব অমুসলিম, ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র, ও আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে, আমরা যেন তাদের সাথেও ভাল ব্যবহার করি। যারা জানেন না- তাদের জানার জন্য আমি এখানে তার উল্লেখ করছি। উপরের বহুল আলোচিত আয়াতের কিছু পরের আয়াত নং ৫৭-৫৮ তে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন, কাদের সাথে এক জন মুসলিম বন্ধুত্ব করতে পারবে বা পারবেনা-

হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নিবোর্ধ। (৫:৫৭-৫৮)

উপরের আয়াতের আলোকে যদি দেখি তাহলে শুধু ইহুদি নাসারা নয়, যারা যেখানেই হোক এমনকি এই ব্লগেও আমার ধর্মকে উপহাস করে, আমাদের রাসুলকে নিয়ে খারাপ উক্তি করে, আমাদের বিশ্বাসকে ভ্রান্ত বলে, আর সে যদি মুসলিম মা-বাবা'র সন্তানও হয়ে থাকে কিংবা আমার আপন ভাই হয়ে থাকে তার সাথেও আমাদের আত্মিক সম্পর্কযুক্ত বন্ধুত্ব হতে পারেনা।



আর যদি কোন ইহুদি-নাসারা কিংবা নাস্তিক যিনি আমার ধর্ম, আমার বিশ্বাস, আমার রাসুল, আমার কিতাব নিয়ে নীরব থাকেন, কোন ধরণের নেগেটিভ আচরণ না করেন, তাহলে আত্মিক না হলেও সামাজিক বন্ধুত্ব করতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এই নীতি ব্যক্তিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।



সূরা আল-মুমতাহিনার ৯ নং আয়াতে আল্লাহ নিষেধ করেন-

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। (৬০:৯)

আবার একই সূরার ৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন কাদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা যাবে-

ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। (৬০:৮)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা- পানি থেকে তেল যেমন আলাদা হয়ে থাকে, তেমনি অমুসলিমদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা আর না রাখার নির্দেশ স্পষ্ট হয়ে গেছে। একজন স্বল্প জ্ঞানী লোকও বুঝতে পারবেন যে- এই আয়াতগুলোর আলোকে আল্লাহ অতি ক্ষুদ্র এক মানব গোষ্ঠিকে বুঝাচ্ছেন- যারা নিজেরাই হেট মঙ্গার, ইসলাম বিদ্বেষী, অসহিষ্ণু, ইসলামের কুৎসারটনাকারী, মুসলিমদের প্রতি জোর-জবরদস্তকারী, ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির। কোরআনের এই আয়াতগুলোতে কোনভাবেই পৃথিবীর যে কোন মতবাদে বিশ্বাসী ভাল, সভ্য ও শান্তিকামী মানুষদের বুঝানো হয়নি।
বর্তমান বিশ্বে ইসলাম বিরোধীরা, ইসলাম বা মুসলিমদেরকে ‘হেট মঙ্গার’ জাতি বলে প্রচার করছে! বলা হচ্ছে যে, মুসলিমরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি মনে-প্রাণে ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে। এর জন্য নাকি আল-কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে, যা একজন মুসলিমকে অবশ্যই পালন করতে হবে! আর তাদের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তারা যে সকল আয়াত তুলে ধরেন সেগুলোর মধ্যে সূরা আল-মায়েদার ৫:৫১ আয়াত উল্লেখযোগ্য (যে ভাবে বর্তমানে বাংলায় অনুবাদ আছে)-

হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের বন্ধু এবং অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু এবং অভিভাবক। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদের [বন্ধু এবং অভিবাবকরূপে] গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অন্যায়কারীকে [সুপথে] পরিচালিত করেন না। (কোরআন ৫:৫১)

উপরের আয়াতে বাংলা অনুবাদে অনুবাদকগণ 'বন্ধু' ও 'অভিভাবক' শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু মূল আরবীতে এই শব্দ দুটির প্রতিশব্দ রূপে একটি শব্দ দেওয়া হয়েছে, আর তা হল 'আউলিয়া।' সাধারণতঃ সবাই জানেন যে- আরবীতে ‘বন্ধু’ শব্দের সরল প্রতিশব্দ হল ‘সাদিক’, কিন্তু গভীরভাবে খেয়াল করুন, আল্লাহপাক কোরআনের এই নির্দিষ্ট আয়াতগুলোতে ‘সাদিক’ ব্যবহার না করে ‘আউলিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সাদিককে 'সাদিক' না বলে 'আউলিয়া' শব্দটি ব্যবহার করা হল কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের ‘আউলিয়া’ শব্দটির অর্থ জানতে হবে। আরবী ‘অলি’ (অভিভাবক) শব্দ বহুবচনে ‘আউলিয়া’ হয়েছে। তাহলে দেখি ‘অলি’ শব্দটি বলতে কী বুঝায়? আমাদের দেশে বিয়ে-সাদির সময় বলা হয়ে থাকে বর বা কনের অলি কে? তখন জবাব দেওয়া হয়- যদি কনে বা বরের বাবা থাকেন, তাহলে বলা হয়- কনে বা বরের বাবাই অলি। যদি বাবা না থাকেন, চাচা/মামা বা অন্য কেউ থাকেন, তখন বলা হয়- অমুক কনে বা বরের অলি। এখানে ‘অলি’ মানে ‘অভিভাবক’ বা ‘তত্বাবধায়ক’ কাউকে বুঝানো হয়। অলি’র বহুবচন আউলিয়া- মানে অভিভাবকগণ বা তত্বাবধায়কগণ। এই আয়াতের নাজিলের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে বিবেচনা করলে যে কেউ বুঝতে পারবে এই আয়াতে 'আউলিয়া' শব্দ দ্বারা 'নিরাপত্তাদানকারী' বুঝাচ্ছে। যেমন রাসুল সাঃ এর নিরাপত্তাদানকারী ছিলেন উনার চাচা আবু তালিব, যার কারণে মক্কার কাফিরগণ রাসুলের কোন ক্ষতি করতে পারে নাই। তবে এই আউলিয়া শব্দের প্রয়োগ আরো ব্যাপক, এই একই শব্দ দিয়ে আমরা ৪টি শব্দের প্রতিরূপ পেতে পারি যেমন- মিত্র (allies), বন্ধু (friend), অভিভাবক (guardian) ও নিরাপত্তাদানকারী (protectors)। এবং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই চারটি প্রতিশব্দের যে কোন একটি বা একত্রে চারটি প্রতিশব্দকে প্রয়োগ করা যাবে।

এবার আল-কোরআনের সূরা মুমতাহিনার ১৩ নং আয়াত দেখা যাক-

হে বিশ্বাসীগণ! যে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্‌ রুষ্ট হয়েছেন, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। ইতিমধ্যে তারা পরলোক সম্বন্ধে নিরাশ হয়েছে, যেমন নিরাশ হয়েছে অবিশ্বাসীরা কবরস্থদের বিষয়ে। (কোরআন ৬০:১৩)


এখানে দেখুন আল্লাহ বলছেন- লা তাতাওয়াল্লু (তাতাওয়াল্লু শব্দটি এসেছে আউলিয়া থেকে) কাওমান (কওম)। আল্লাহ এখানে স্পষ্ট করে শুধু সম্প্রদায়ের সাথে মিত্রতা না করতে বলছেন, কিন্তু এখানে ব্যক্তিগতভাবে কোন ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সামাজিক বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করছেন না। এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব নয় মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

আমি মনে করি সর্বক্ষেত্রে অনুবাদ আমাদের রেফারেন্স হতে পারেনা, অনুবাদ যদি মূল ভাবকে যথার্থ ভাবে প্রকাশ করতে না পারে তাহলে আমাদের মূল আরবী শব্দটিকে গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য ইসলামি বিশেষজ্ঞরা সব সময় অনুবাদের সাথে মূল আরবীকে মিলিয়ে দেখার উপদেশ দিয়ে আসছেন। এজন্য আমি মনে করি উপরোক্ত আয়াতে মিত্র/ নিরাপত্তাদানকারী প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হলে সঠিক হবে, যা ইংরেজিতে Allies/Guardian বুঝায়।



অতএব, উপরোক্ত দুটি আয়াত থেকে দেখা যায় যে, এখানে বাংলায় বন্ধুকে অভিভাবক/নিরাপত্তাদানকারী হিসাবে দেখানো হয়েছে (৫:৫১) এবং এই নির্দেশ নিছক ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, এটি দেওয়া হয়েছে সম্প্রদায়গতভাবে (৬০:১৩)। তাই স্বাভাবিকভাবে আরবীতে বন্ধু বলতে যে শব্দ (সাদিক) ব্যবহার করা হয়, উপরোক্ত দুটি আয়াতের একটিতেও তা ব্যবহার করা হয়নি!



এবার দেখা যাক ঐ আয়াতের ঐতিহাসিক প্রক্ষাপট- অর্থাৎ কখন, কোথায় এবং কী প্রয়োজনে নাজিল হয়েছিল। আপনারা জানেন- ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে- কীভাবে মুসলিমদেরকে তাদের সহায়, সম্পদ, ভিটেমাটি ফেলে জন্মভূমি থেকে দেশান্তরী হতে হয়েছিল। সেই দেশান্তরী মানুষদের তখন মদিনাবাসীদের মধ্য থেকে বেশ কিছু মানুষ মদিনাতে আশ্রয় দিয়েছিল। মুসলিমরা আশ্রয় নেবার সাথে সাথে ঐ নগরীর অন্যান্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সহিত একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ঐ চুক্তিতে এই মর্মে শর্ত ছিল যে- এই নগরের যে কোন গোত্র ও ধর্মীয় গোষ্ঠী যদি বহিরাগত শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে সবাই মিলে তা প্রতিহত করতে হবে। এবং এই শান্তিচুক্তির অধীনের কেউ কখনো চুক্তি ভুক্ত গোত্রের কোন দুশমনদেরকে সাহায্য করতে পারবেনা। চুক্তি ভুক্ত গোত্রগণ একে অপরের সহিত যুদ্ধও করতে পারবেনা।



এই শান্তি চুক্তি মদিনার অন্যান্য গোত্র সহ মদিনার ইহুদীদের সাথেও ছিল। কিন্তু ইহুদীদের মধ্যে বানু কাইনুকাইরা মুসলিমদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে যুদ্ধ বাধিয়েছিল। ইসলাম-পূর্ব সময় থেকে মদিনার কোন কোন মুশরিক গোত্রের সাথে এই ইহুদী বানু কাইনুকাদের মৈত্রীতা ছিল। তাই ঐ মিত্রতার শর্ত ছিল- কাইনুকাইরা আক্রান্ত হলে তাদের মিত্ররাও এদের রক্ষা করতে এগিয়ে যেতে হবে। যেহেতু ইসলাম গ্রহণের ফলে মদিনার সকল মুশরিক গোত্র এক মুসলিম মিল্লাতে অঙ্গীভূত হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পূর্বকৃত মিত্রতা অকার্যকর হয়ে যায়। আর এই অবস্থায় আল-কোরআনের এই আয়াত দিয়ে আল্লাহ নও-মুসলিমদের কী করতে হবে তার স্পষ্ট নির্দেশ বলে দিয়েছেন। কাজেই আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপটে একটি অনুবাদ এভাবে হতে পারে-


হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে তোমাদের মিত্র এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী (Protectors) রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের মিত্র এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদেরকে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অন্যায়কারীকে পরিচালিত করেন না

বাংলা ব্লগগুলোতে দেখা যায় যে- যে কেউ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় এমন আয়াত পেলে তৎক্ষণাত তুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু এটি কোরানিক সুনান নয়। আল-কোরআনের কোন এক আয়াত পড়েই কেউ তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। আল-কোরানের অনেক আয়াত আছে যেগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকে, তাই একাধিক আয়াতকে সামনে এনে বিচার বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হয়। ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করলে মূল অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অনুবাদকের চেয়ে ইসলাম বিরোধীদের অজ্ঞতাই বেশী দায়ী। কিন্তু সেই অজ্ঞতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও একে নিয়ে চর্বিত-চর্বণ কপটতার শামিল। দুঃখজনক হলো এটাই ব্লগগুলোতে আজকাল অনেকে করছে।



যেহেতু এই একটি আয়াত নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা যখন তখন ইসলামকে ‘হেট মঙ্গার’ ধর্ম প্রমাণ করতে লেগে যায়, তাই আমি এই আলোচনা আমার শিরোনামের আলোচ্য সূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করেছি। তবে একজন সঠিক মুসলিম জানেন যে- একজন অমুসলিমদের প্রতি একজন মুসলিমের সম্পর্ক কেমন হবে, তার স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা আল্লাহ পাক আল-কোরআনে দিয়ে রেখেছেন! বাস্তব সত্য হচ্ছে যে- নানাবিধ প্রতিকূলতার জন্য পৃথিবীর প্রতিটি ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, সম্প্রদায়ের সাথে সম্প্রদায়ের, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে- বন্ধুত্ব নেই বলে তারা পরস্পরের দুশমন হয়ে যায়। বন্ধুত্ব অনেক প্রকার হতে পারে। ব্যক্তিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, পেশাভিত্তিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক। তবে যদি ধরে নেয়া হয় যে- এই আয়াত দ্বারা ব্যক্তি কেন্দ্রিক বন্ধুত্বকে নিষেধ করা হয়েছে, তবে সেই বন্ধুত্বটি হবে আত্মিক বন্ধুত্ব, আর আত্মিক বন্ধুত্বের জন্য অবশ্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ হবার দাবি রাখে।



ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব বজায় সম্পর্কে আল-কোরআনে আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে- যে সব অমুসলিম, ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র, ও আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে, আমরা যেন তাদের সাথেও ভাল ব্যবহার করি। যারা জানেন না- তাদের জানার জন্য আমি এখানে তার উল্লেখ করছি। উপরের বহুল আলোচিত আয়াতের কিছু পরের আয়াত নং ৫৭-৫৮ তে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন, কাদের সাথে এক জন মুসলিম বন্ধুত্ব করতে পারবে বা পারবেনা-

হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নিবোর্ধ। (৫:৫৭-৫৮)

উপরের আয়াতের আলোকে যদি দেখি তাহলে শুধু ইহুদি নাসারা নয়, যারা যেখানেই হোক এমনকি এই ব্লগেও আমার ধর্মকে উপহাস করে, আমাদের রাসুলকে নিয়ে খারাপ উক্তি করে, আমাদের বিশ্বাসকে ভ্রান্ত বলে, আর সে যদি মুসলিম মা-বাবা'র সন্তানও হয়ে থাকে কিংবা আমার আপন ভাই হয়ে থাকে তার সাথেও আমাদের আত্মিক সম্পর্কযুক্ত বন্ধুত্ব হতে পারেনা।



আর যদি কোন ইহুদি-নাসারা কিংবা নাস্তিক যিনি আমার ধর্ম, আমার বিশ্বাস, আমার রাসুল, আমার কিতাব নিয়ে নীরব থাকেন, কোন ধরণের নেগেটিভ আচরণ না করেন, তাহলে আত্মিক না হলেও সামাজিক বন্ধুত্ব করতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এই নীতি ব্যক্তিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।



সূরা আল-মুমতাহিনার ৯ নং আয়াতে আল্লাহ নিষেধ করেন-

আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। (৬০:৯)

আবার একই সূরার ৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন কাদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা যাবে-

ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। (৬০:৮)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা- পানি থেকে তেল যেমন আলাদা হয়ে থাকে, তেমনি অমুসলিমদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা আর না রাখার নির্দেশ স্পষ্ট হয়ে গেছে। একজন স্বল্প জ্ঞানী লোকও বুঝতে পারবেন যে- এই আয়াতগুলোর আলোকে আল্লাহ অতি ক্ষুদ্র এক মানব গোষ্ঠিকে বুঝাচ্ছেন- যারা নিজেরাই হেট মঙ্গার, ইসলাম বিদ্বেষী, অসহিষ্ণু, ইসলামের কুৎসারটনাকারী, মুসলিমদের প্রতি জোর-জবরদস্তকারী, ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির। কোরআনের এই আয়াতগুলোতে কোনভাবেই পৃথিবীর যে কোন মতবাদে বিশ্বাসী ভাল, সভ্য ও শান্তিকামী মানুষদের বুঝানো হয়নি।


আপনাদের ভাল লাগা মন্দ লাগা যদি ব্যক্তিগত ভাবে জানাতে চান তাহলে- [email protected] এ জানাতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:৪১
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×