somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুক্তমনা ব্লগার
কেহ বিশ্বাস করে, কেহ করে না। যে বিশ্বাস করে সেও সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না, যে অবিশ্বাস করে সেও না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটা নির্ভর করে মানুষের খুশির উপর। ধর্মান্ধতা নিপাত যাক, মুক্তচিন্তা মুক্তি পাক।

গণতন্ত্রের পরিবৃত্তি, গণতন্ত্রের ইতিহাস (রিপোস্ট)

২৭ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনকল্যাণ নিশ্চিতকরণ এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্রিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা অপরীসীম । বিভিন্ন যুগের গণতন্ত্র ও আজকের গণতন্ত্রের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকরী একক হচ্ছে সমাজ ও ব্যক্তির মানসিকতা । তাই গণতন্ত্রের সঠিক ধারণা লাভের লক্ষ্যে এই বিবর্তন অধ্যয়ন আবশ্যক ।

প্রাচীন যুগ:
গণতন্ত্র প্রথম উদ্ভাবিত হয় গ্রীসের এথেন্সে ৫০৮ খ্রিষ্টপুর্বাব্দ যা ছিল মুলত নগর রাষ্ট্রেটির রাজনৈতিক দর্শনের ফসল । এথেন্সের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র দুটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে আবর্তীত হয় । এগুলো ছিল ১) বিদ্যমান সরকারি প্রশাসন, বিচার আদালত ও শাসন সভায় সাধারণ নাগরিকের অংশগ্রহণ । ২) কোন নারী, দাস, বিদেশী, নিজস্ব ভুমিহীন ব্যক্তি এবং অনুর্ধ্ব ২০ বছর বয়সের কোন পুরুষ নাগরিক বলে বিবেচ্য না হওয়া । মোট জনগণের কেবল ৭ শতাংশ এর ফলে জনগণ হিসেবে গণ্য হত যাদের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল বাধ্যতামূলক । জনগণের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় বলেই এথেন্সের গণতন্ত্র প্রত্যক্ষ ছিল । এটি প্রত্যক্ষ হওয়ার কারণ ছিল যে নগর রাষ্ট্রের নাগরিকেরা সমগ্র রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত । খ্রিষ্টপুর্ব ৭০০ অব্দে স্পার্টায় ৩০ বা তদুর্ধ্ব বছর বয়সের পুরুষদের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা হয় । এপেলা নামক একটি মাসিক জনসমাবেশে এথেন্সের জনগণ নম্বর দিয়ে অথবা চিত্কার করে কোন প্রতিনিধির পক্ষে তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করত যা পরবর্তীতে এরিস্টটল কর্তৃক ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় । তবে স্পার্টা এটি গ্রহণ করার পেছনের কারণ ছিল নির্বাচন সংক্রান্ত অসংগতি সমূহ দূর করা । রোমান সাম্রাজ্যের মোট জনগণের একটি ক্ষুদ্র অংশই নাগরিক বলে বিবেচিত হত এবং প্রতিনিধি নির্বাচনে অভিজাত শ্রেণীর প্রভাব ছিল স্পষ্ট । রোমান প্রজাতন্ত্র ছিল ইউরোপের প্রথম প্রজাতন্ত্র যদিও সেটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ছিল না । তা সত্ত্বেও রোমান সরকার কাঠামো পরবর্তী যুগগুলোতে গণতন্ত্রের বিকাশে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে । আধুনিক প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলো গ্রীসের চেয়ে রোমান মডেলকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে ।

মধ্য যুগ:
মধ্যযুগে ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলই সামন্তপ্রভু ও পাদ্রীদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল । অনেক নগর রাষ্ট্র সে সময় মেয়র বা ধনী নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে । সামন্তবাদী সরকার কাঠামোর অবলুপ্তি সাধনে নগর রাষ্ট্র ও শিল্প-বাণিজ্যিক কেন্দ্রের ভুমিকা ছিল অপরিসীম । তত্কালীন নির্বাচন ও সরকার ব্যবস্থাগুলো কতগুলো নিয়ম-নীতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হত । এই নগর রাষ্ট্রগুলো ইউরোপে বিশেষ করে ইতালীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে । ইউরোপীয় রেনেসাঁর ফলে বিজ্ঞান চর্চায় অধিকতর স্বাধীনতা স্বীকৃত হয় । ক্যাথলিক চার্চের অত্যাচারের মুখে প্রটেসটান্ট ধর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে । কেননা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকরা ও গণতন্ত্রের বিরোধীতা করার মাধ্যমে রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখই ছিল ক্যাথলিক চার্চের উদ্দেশ্য । প্রটেস্টান্ট সংস্কার আন্দোলন ছিল ইউরোপের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে লড়াই করে যাওয়ার বার্তা স্বরুপ । চার্চের বিরুদ্ধে এ ধরণের আলোচনা ও সমালোচনা গণতন্ত্রে উন্নয়ণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

আধুনিক যুগ:
বর্তমান আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনেই সমগ্র বিশ্ব গণতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে । ব্রিটেনের পুরিটান নামক এক খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ১৬২০ সালে আমেরিকান কলোনির নিউ ইংল্যান্ডে যে স্থানীয় সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিল তা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বিল অফ রাইটস পাসের পর ব্রিটেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে । এটি ব্রিটেনের গণতন্ত্রকে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অধিক মর্যাদা প্রদান করে । ১৮৮৪ সালে ফ্রান্স সার্বজনীন পুরুষ ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় যা ছিল ১৭৮৯ এর ফরাসী বিপ্লবেরই ফসল । ১৭০৭ সালে ব্রিটেনের প্রথম পার্লামেন্ট গঠিত হলেও এটি নির্বাচন করতে পারত মোট জনসংখ্যার কেবল ৩ শতাংশের ইচ্ছার ভিত্তিতে । উপনিবেশিক আমলে আমেরিকাতে কেবল তারাই নাগরিক হিসেবে গণ্য হত যারা ছিল পুরুষ ভূস্বামী । এসময়ই সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি আমেরিকাতেও দাস প্রথার বিরোধীতা শুরু হতে থাকে । ১৮০৭ ও ১৮৩২ সালে দুটি পৃথক আইন ও তার সংস্কারের ওপর ভিত্তি করে ১৮৩৩ সালে ব্রিটেন তার সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে দাস প্রথা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫৫-১৯৫৮ সালে আফ্রিকান আমেরিকান আন্দোলনের মাধ্যমে আমেরিকাতে সার্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত হয় । পরবর্তীতে সাম্রাজ্যবাদের বিলুপ্তি, অর্থনৈতিক মন্দা, ফ্যাসিবাদ ও নাত্সীবাদ নারীদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে প্রভাবিত করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে জার্মানী, ইটালি, অস্ট্রিয়া ও জাপানের মত দেশগুলোর সম্পর্ক হয়ে ওঠে গণতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিকের মাঝে দ্বন্দের । স্পেন, পর্তুগাল, আর্জেনটিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, চিলিসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০-১৯৯০ এর মধ্যে । স্নায়ুযুদ্ধের অবসান, সোভিয়েত রাশিয়ার পতন ও জার্মানির পুণঃএকত্রীকরণ গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্ৰভাবিত করে ।

গণতন্ত্রের সমস্যা ও সম্ভাবনা:
বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের স্বরুপ প্রকৃতি এক নয় । গণতন্ত্রের একটি পুরনো সমস্যা ছিল যে এটি গুণের চেয়ে সংখ্যার ওপর নির্ভর করে যা কালের বিবর্তনে অধিকাংশ দেশে এখনও বিদ্যমান । তাছাড়া প্রশাসনিক দুর্বলতা, পুজিবাদীদের গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করা, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব প্রশ্নে দূর্বলতা পোষণ ইত্যাদি থেকে গণতন্ত্রিক সরকার কাঠামো এখনও মুক্ত হতে পারে নি । তবে সাম্য প্রতিষ্ঠা, জনমতের প্রধান্য প্রদান ও রাজনৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা প্রদান গণতন্ত্রের অদ্বিতীয় গুণ ।

গতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কতটা জনকল্যাণকর সেই বির্তক বিগত শতাব্দিতে মানব জাতি পেরিয়ে এসেছে । এখনকার বিতর্কের বিষয় হল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কোন পন্থাটি অধিক কার্যকর । গণতন্ত্র বলতে সমাজের একটি বড় অংশ আজও কেবল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকেই বোঝে । কার্যত এটি ভুল নয় । তবে গণতন্ত্রের সফলতার জন্য নাগরিকদের সুশিক্ষা, দক্ষ নেতৃত্ব, সহনশীলতা ও আইনের শাসনও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মতাই গুরুত্বপূর্ণ । তাই সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক কাঠামো গঠনে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় ও মিথষ্ক্রিয়া জরুরী ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দরখাস্ত - বরাবর: জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৩



বরাবর:
জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব
চিফ এক্সিকিউটিভ এডমিন
সামহোয়্যারইন ব্লগ

তারিখ: ১১-১১-২০২৪ইং

বিষয়: ব্লগার সোনাগাজী নিকের ব্লগিং ব্যানমুক্ত করার জন্য অনুরোধ।


জনাব, কাল্পনিক ভালোবাসা / জাদিদ সাহেব,
আপনাকে ও সামহোয়্যারইন ব্লগের সকল ব্লগারদের প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময়ের স্রোতে ক্লান্ত এক পথিক তবু আশায় থাকি …

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:০৫


হালকা হাওয়ায় ভেসে আসে গত সময়ের এলবাম
মাঝে মাঝে থেমে যায়, আবার চলে তা অবিরাম
সময় তো এক নদীর মতো, বহমান অবিরত,
জল-কণা আর স্মৃতি বয়ে নেয় যত তার গত।

একটু... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশঃ ইতিহাস কি বিজয়ীরাই লেখে?

লিখেছেন জাদিদ, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩২

"বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার সমস্যা" -বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একবার বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের সঙ্গে ক্ষমতার একটা সম্পর্ক আছে। সে ক্ষমতায় যারা বিজয়ী হয়, তারাই ইতিহাস রচনা করে। পরাজিতরা ইতিহাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু নাম আর কেউ মুছতে পারবেনা।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০


২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনণের পরপরই ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে আজ উড়ল বাংলাদেশের পতাকা। আজ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

“বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো উচিত হয়নি “এই কথা রিজভী কোন মুখে বলে ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১২ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫১



অবাক হয়ে রিজভীর কথা শুনছিলাম উনি কি নিজেকে মহান প্রমান করার জন্য এই কথা বললেন নাকি উনি বলদ প্রকৃতির মানুষ সেটাই ভাবতেছি। উনি নিশ্চই জানেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×