somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারের এক রাতের ভেলকিতে সব ইস্যু চাপা পড়ে গিয়ে বিলবোর্ড ইস্যুতে মুখরিত প্রধান দুই দল

০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সরকারের এক রাতের ভেলকিতে সব ইস্যু চাপা পড়ে গিয়ে বিলবোর্ড ইস্যুতে মুখরিত প্রধান দুই দল -মঞ্জুর হোসেন ঈসা


একরাতের ভেলকিতে রাজধানী ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের চিত্রের খতিয়ান দিয়ে সরকারী, বেসরকারী এবং ব্যাক্তি মালিকানাধীন স্থানে কারো কোন অনুমতি না নিয়ে হাজার হাজার বিলবোর্ড লাগিয়ে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে মহাজোট সরকার।


রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের চুক্তিবদ্ধ স্থানে তাদের বিলবোর্ডের উপর বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের বিজ্ঞাপনী চিত্র প্রতিস্থাপন করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান গুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। যে সকল সংস্থার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো বিল বোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলো, এক রাতের অন্ধকারে সেগুলো ঢাকা পরায় জাবাব দিহিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের বিজ্ঞাপন হওয়ার কারনে সংশ্লিষ্ট জায়গায় অভিযোগ করেও কোন ফলাফল আসছে না। বরং অভিযোগ করতে গিয়ে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামীলিগের বিলবোর্ডে যাদের ছবি সম্বলিত বিজ্ঞাপন প্রতিষ্থাপিত হয়েছে সেই কর্তা ব্যাক্তিদের রোষানলে পড়তে হয়েছে।


যখন সাড়া দেশ জুড়ে যুবলীগের দক্ষিনের সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কি হত্যার আলোচনা চলছিলো এবং সেই হত্যাকান্ডের অভিযোগে আরেক যুবলীগ নেতা তারেকের ক্রস ফায়ারের কথা মুখে মুখে আলোচিত হয়েছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে এই বিলবোর্ড গুলো সকল আলোচনা ঢেকে দিয়েছে। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারাও এবিষয়ে বিভন্ন অনুষ্ঠানে নানা রকম মন্তব্য ছুড়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করছেন।
আওয়ামী লীগের এই প্রচারের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ‘উন্নয়নের’ ফিরিস্তি দিয়ে কোনো লাভ নেই। এম কে আনোয়ার বলেছেন - “গত সাড়ে চার বছরে সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার চিত্র জনগণ দেখেছে। তারা কোনো উন্নয়ন করেনি। এখন বিলবোর্ডের মাধ্যমে উন্নয়নের ঢোল বাজাচ্ছে।” সরকারের উন্নয়ন চিত্রের প্রচার সম্বলিত বিলবোর্ড দিয়ে জনগণের মুখ ফেরানো যাবে না। ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন - বিলবোর্ড দিয়ে সরকারকে সেইভ করা যাবে না। গত চার বছরে দেশের কোনো উন্নয়ন আওয়ামী লীগ করতে পারেনি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, “এখন তারা বিলবোর্ড দিয়ে বলছে, সমস্ত দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে।”

সরকার দলীয় মুখপাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন -সরকারের সাড়ে ৪ বছরের উন্নয়নের সচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। বিলবোর্ডে একটি তথ্যও মিথ্যা নয়। এমনকি প্রমাণ করতেও পারবেন না। দেখুন কীভাবে আবার ক্ষমতায় আসি।
আর ক্ষতিগ্রস্থ বলছেন - একজন প্রচারণা বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন -ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক বিলবোর্ড রয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ইজারা নিয়ে বিজ্ঞাপনের জন্য এগুলো ভাড়া নিয়ে থাকে। আওয়ামী লীগের বিজ্ঞাপনের কারণে নতুন পণ্য বাজারে ছেড়ে বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড ভাড়া নেয়া অনেক কোম্পানিরই মাথায় হাত পড়েছে। প্রচার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নতুন পণ্য বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেপচুন অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন -তাদের ইজারা নেয়া ৯০ ভাগ বিলবোর্ডে সরকারের উন্নয়নচিত্র বসানো হয়েছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “উন্নয়নের প্রচারণা তো ঈদের পরও করা যেত। এখন সবাই ঈদ উপলক্ষে পণ্য ডিসপ্লে করবে, সেটা বন্ধ হয়ে গেল। “আচ্ছা দিল, আমাদেরকে একবার জিজ্ঞেসও করল না। আমরা তো সরকারকে ট্যাক্স দিই।”
বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর সমিতি অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার মনে করেন, যে কোনো ধরনের প্রচার নিয়ম মেনেই হওয়া উচিত। তিনি বলেন, “তবে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে চুক্তি করে টাকা দিয়ে এটা করেছে কি না, তা আমি জানি না।”
“এই ধরনের প্রচারণা হিতে বিপরীত হবে। যাদের উদ্দেশ্য করে এই তথ্যগুলি প্রচার করা হয়েছে তারা এরকম দাপ্তরিক ভাষা বোঝেন না। তাছাড়া এসব বিজ্ঞাপনের নকশা অতি নিচু মানের। আকর্ষণের বদলে মানুষের বিরক্তি উদ্রেক করছে।” “অক্ষর, ছবি ও রংয়ের ব্যবহারও চরম অপেশাদারি। সমস্যা হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলছেন না” “আমাদের বিজ্ঞাপনের ওপরেই তা বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে ঈদকে সামনে রেখে ভাড়া নিয়েছিল। ক্লায়েন্টরা অভিযোগ করা শুরু করেছেন। কী যে করব? আমরাও নিরুপায়,” ।
খাদ্য নিরাপত্তা, কূটনৈতিক অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন, যুগান্তকারী পরিবর্তন, বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিক্ষিত সমাজ, উন্নত জাতি, সবার জন্য শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা- ইত্যাদি শিরোনাম এখন বিলবোর্ডগুলোতে।
এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, গত শুক্রবার থেকে বিলবোর্ডে সরকারের উন্নয়নের প্রচারশুরু হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিলবোর্ডে এই প্রচার চালানো হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, “উনিই বিষয়টি ডিল করছেন।” এই বিষয়ে কথা বলতে পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের উদ্যোগেই এই বিলবোর্ডগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভাড়া নিয়ে এগুলো বসানো হয়েছে কি না- সে বিষয়ে দলের নেতাদের কোনো বক্তব্য যেমন পাওয়া যায়নি; তেমনি বিষয়টি ‘অজানা’ বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর নেতাদেরও।
পরিশেষে বলাযায়, রাজনীতির সামাজিকতায় বর্তমান সরকার রক্ষক হয়েও ভক্ষক এর ভূমিকায় নেমেছে। এছাড়াও ঈদের পরে তারা বিভিন্ন জেলাতে রোড-শো এবং বিগত সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বিভিন্ন জেলা শহরে, বিভাগীয় শহরে এবং রাজধানীতে একাধিক অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
সর্বশেষ মন্ত্রী সভায় প্রধানমন্ত্রী -মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্ব স্ব জেলা থেকে বিরোধী দলের আন্দোলনকে মোকাবেলা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে এবং এই সরকারের শেষ বাজেট থেকে একটি বড় অংশ এই বিজ্ঞাপনী প্রচারনার খাতে ব্যায় হবে বলে ধারনা করা যায়।
রাজনীতিতে বর্তমান সরকার যে ট্রেডিশন বা ঐতিহ্য শুরু করলো তা আগামীতে নতুন কোন দল ক্ষমতায় আসলে এবং এই ধারা অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দেশে বিদেশে ক্ষুন্ন হবে এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থ্যা থেকে যে পরিমান টাকা রাজস্ব হিসেবে আয় হতো তা আস্তে আস্তে কমে শূন্যের কোটায় দাড়াবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×