ছাত্রজীবনে বন্ধু-বান্ধবী জনাদশেক মিলিয়ে আমাদের একটা গ্রুপ ছিলো। জনাদশেক কথাটা একটু বোধহয় অদ্ভুত শোনাচ্ছে, আসলে এমন বললাম কারণ সংখ্যাটা নানা কারণে ঠিক ফিক্সড থাকতে পারেনি। প্রথমে আমরা দশজনই ছিলাম (৫টি ছেলে এবং ৫টি মেয়ে), পরবর্তীতে বিভিন্নরকম মান-অভিমান এবং মনোকষ্টের কারণে ২ জনকে একটু দূরে সরে যেতে হয়েছিলো (অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে আমি নিজেই তাদের একজন... আবার তাই বলে শুধু যে বিরহ হয়েছে তা নয়, মিলনও হয়েছে যথেষ্ট, ১০ জনের ৪ জনই নিজেদের মধ্যে জোড়া বেঁধেছে... বড় ভালো লাগে দেখতে)। তবু, প্রচুর বাঁদরামি করেছি একসময়। কত যে পাগলামি ছাগলামি করতাম... এখন ভাবলে অবাক লাগে। একদিন পদ্মার চরে গিয়ে সবাই মিলে দলবেঁধে গোল্লাছুট পর্যন্ত খেলেছি (গ্র্যাজুয়েশন লেভেলের পোলাপান গোল্লাছুট খেলে!!)!

এক একজনের বাসা ছিলো এক এক শহরে, আবার কারো ছিলো গ্রামে। সব দলবেঁধে শিডিউল করে তাদের বাসায় অন্ততঃ একবার করে হলেও ধর্ণা দেয়া, আড্ডা-হুল্লোড়-ঝাঁপাঝাঁপি, যাবতীয় পোংটামি, এক একবার এক একরকম গেম আয়োজন করা (গেমগুলো যাদের মাথায় খুবই বেশি ঘিলু এরকম কেউ প্ল্যানিং করত এবং প্রত্যেক বারই সেগুলো একেবারে ইউনিক হতো)। আবার মাঝেমাঝে ‘প্রশ্নোত্তর পর্ব’ টাইপের হত, সবাই গোল হয়ে বসতো, প্রত্যেককে ৪-৫ মিনিটের একটা করে টাইম স্লট বেঁধে দেয়া হতো, এই টাইমের মধ্যে অন্যরা তাকে একগাদা প্রশ্ন করে অতিষ্ঠ করবে আর তাকে অতিষ্ঠ হতে হবে (বেশিরভাগ প্রশ্নই অবশ্য ‘কবে বিয়ে করবি, কাকে করবি, কেমন বর/বউ পছন্দ, হানিমুন কই করতে চাস, কয়টা বাচ্চা নিবি’ এই টাইপের হতো)।


দু’একজন ছিলো একটু লক্ষ্মীমন্ত টাইপ, তারা একটু চুপচাপ থাকতো আর মুচকি মুচকি হাসতো, আবার দু’একজন ছিলো একটু ‘ফাল পাড়ুইন্যা’ টাইপ, তারা তিড়িং বিড়িং লাফিয়েই যেত। যা-ই হতো, মজা হতো প্রচুর। এমনও হয়েছে যে হয়তো কারও বাসায় যাওয়া হয়েছে, সবাইকে ছোটখাট একটা ঘরে বসতে দেয়া হয়েছে, জায়গা একটু কম দেখে সবাই মিলে এ ওর গায়ে, সে তার গায়ে, এ ওর পিঠে, সে আবার আরকজনের ঘাড়ে... খাটে-মেঝেতে গাদাগাদি করে আড্ডা মেরেছি আর হাসাহাসি করেছি। এক ফাঁকে হয়তো কেউ এসে একটু খাবার দিয়ে গেলো, কিংবা খানিকটা শরবত – শুরু হলো কাড়াকাড়ি মারামারি করে হালুম-হুলুম খাওয়া। একজন হয়তো বললো তার মাথায় অনেক খুশকি (কিংবা উকুন), ওম্নি সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার মাথার উপর, খুশকির (নইলে উকুনের!) উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য!!! একজন ছিলো ব্যাপক জ্ঞানী টাইপের, সে সবসময় চিন্তাভাবনা করে গুরুগম্ভীর সব বক্তব্য দিতো আর সবাই তাকে পচাতো। আবার দুইজন ছিলো যারা পরস্পরকে শাশুড়ি আর জামাই বলে আহ্লাদ করতো, আর বাকিরাও তাদের পিরিত দেখে হেভভি মজা পাইতো। এইসব তুমুল আড্ডা হৈচৈ এর মধ্যেই আমি হয়তো শাকচুন্নির মতো গলায় একটা গান ধরতাম, আর অন্যরা সবাই ‘ওরে এইডা তো “দুইডা ভাত দ্যান গো আম্মা” বইলা চিক্কুর পাড়তাছে, এরে ২টা টেকা দিয়া দে’ বলে আমার হাতে একটা একটাকা বা দু’টাকার কয়েন ধরিয়ে দিতো... দিয়ে নিজেরাই হেসে গড়াগড়ি যেতো, মাঝখান থেকে আমার ইনকাম হয়ে যেত ঐ ২ টাকা!
শুরুতে যেমন বলেছিলাম, যাদের মাথায় ঘিলু অত্যধিক বেশি তারা খুবই মজার মজার কিছু গেম আয়োজন করত (একবার একটা গেম হয়েছিলো এরকম যে যাকে যা বলা হবে তাকে তা অভিনয় করে দেখাতে হবে, পল্টুকে বলা হলো যেকোনও একজনের দিকে তাকিয়ে ‘আই লাভ ইউ’ বলতে, পল্টু আমার দিকে তাকিয়ে বললো “তুই তো আমার ঠিক সামনে বসে আছিস, তোকেই বলি নাহয়”) !!

তো এই বল্টু একবার আমাদের সবাইকে (মেয়েদেরকে তো বটেই, ছেলেদেরকেও) একটা জোক এসএমএস করেছিলো, যেটা পড়ে তো আমাদের মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা। অরিজিনাল মেসেজটা ছিলো হিন্দিতে, আমি বাংলায় তর্জমা করে দিলাম (সামুব্লগে হিন্দি ফন্ট নেই, থাকলে তাতেই লেখা যেত... ইংরেজিতে/বাংলায় হিন্দি লেখার চাইতে বাংলায় বাংলা লেখাই তো ভালো, তাই না?)

"অ্যাই... করো না... একবার করো না প্লিজ...
মাত্র একবার... কেউ তো এখন নেই এখানে...
ভীষণ মন চাইছে আমার... কি ক্ষতি হয় একবার করলে?...
প্লিজ ‘না’ বোলো না... কেউ জানতেও পাবে না...
বিনিময়ে আমি তো একটু সুখ পাবো...
আমার ভালোবাসার দোহাই...
প্লিজ... মাত্র একবার করো...
...
...
...
...
...
...
...
...
...
ছোট্ট একটা এসএমএস !!!"


