ব্লগের সকল বন্ধুদের জন্য নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছর শুভ হোক সবার জন্য কিন্তু নতুন বছরে বাংলাদেশের জন্য খুব আশাবাদী একটা খবর দিতে পারছিনা। খবরটা বরং আমাদের ভবিষ্যত এর জন্য কিছুটা আশংকাজনক। এতদিন ধারণা করা হচ্ছিল বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদের একটা বড় রিজার্ভ আছে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমার মধ্যে। একমাত্র অফশোর গ্যাস ফিল্ড সাঙ্গু যেখান থেকে প্রতিদির ৮০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে এই ধারণাকে আরো জোরদার করেছে। কিন্তু গতকাল জানা গেল সমুদ্রসীমার মধ্যে গ্যাস রিজার্ভের সবচাইতে সম্ভাব্য ব্লক ম্যাগনামা থেকে ব্রিটিশ গ্যাস এক্সপ্লোরেশন কোম্পানী কেয়ার্ণ পি এল সি বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার উপযোগী কোন গ্যাসের রিজার্ভ খুজে পায়নি।
এখানে উল্লেখ্য যে কেয়ার্ণ সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রটিও পরিচালনা করে। প্রাথমিক ধারণায় ম্যাগনামা গ্যাস ব্লকের মজুদ সাঙ্গু অপেক্ষাও বেশী বলে ধারণা করা হয়েছিল। আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের আনুমানিক মজুদ ৪৫-৫০ টিসিএফ ধরে দেশ থেকে গ্যাস রপ্তানীর যে তোরজোর শুরু হয়েছিল, গ্যাস রপ্তানীর সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ার পর থেকেই রহস্যজনকভাবে মজুদ এর ধারণা কমতে শুরু করে। আর গতকালের এই ঘোষণা হলো এ ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ধাক্কা ।
এখন বলা হচ্ছে দেশে গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ ১৩.৫৪ টিসিএফ (পাঠক পার্থক্যটা লক্ষ করুন) এবং শুধু বাংলাদেশ এই মজুদ ব্যবহার করলেও এটি ২০১১ সাল নাগাদ শেষ হয়ে যাবে । আতকে ওঠার মত ব্যাপার এবং সেই সাথে খটকা লাগার মতও। যদি এটি সত্য হয় তাহলে গ্যাস রপ্তানীর সিদ্ধান্ত নিলে এই মজুদ কবে নাগাদ শেষ হতো? ২০০৮-০৯?? অথচ তখন বলা হয়েছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত। এমনকি এটাও বলা হয়েছিল যে আগামী ২৫ বছর পর্যন্ত জ্বালানী নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা হবেনা।
গ্যাস রপ্তানী স্থগিত হবার সিদ্ধান্তের পর এই নীরব পালাবদল কিন্তু ভাবিয়ে তোলার মত। এটি কি বৈদেশিক বিনিয়োগের হাতে বন্দী আমাদের জ্বালানী ক্ষেত্র নিয়ে নতুন কোন নীল নকশা?? আমাদেরকে গ্যাস সম্পদ থেকে সুফল লাভ করতে না দেয়ার নতুন কোন আন্তর্জাতিক চক্রান্ত?? নাকি এটাই প্রকৃত সত্য!! এর আগে যা জানানো হয়েছে তা ছিল সাজানো মিথ্যা??
আমাদের পেট্রোবাংলার এক্সপ্লোরেশন সাফল্যের হার (কুপ খনন বনাম গ্যাসের সন্ধান লাভ) খুবই ভাল। কিন্তু তারপরও পেট্রোবাংলাকে বাদ দিয়ে সব ব্লক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিদেশী কোম্পানীগুলির কাছে। এখন রিজার্ভ থাকার কথা এমন ব্লকগুলি থেকে যদি একের পর এক এরকম ব্যর্থতা আসতে থাকে, তাহলে আমাদের অর্থনীতি তথঅ আমাদের জ্বালানী নিরাপত্তার ভবিষ্যত কি? আমরা কি নিজেরাই নিজেদর পায়ে কুড়াল মারছি?? যতই ভাবি অনেক হিসাব মেলাতে পারিনা।
আমি বিশেষজ্ঞ নই। খুব সাধারণ মানুষ কিন্তু দেশের ভবিষ্যত নিয়ে যাদের ভাবার কথা তাদের পক্ষ থেকে কোন উচ্চবাচ্য নেই যেটি আসলে আমাদের নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত নিয়ে আরো ভাবিয়ে তোলে। আসলে এই ব্যাপারগুলিতে আমাদের সচেতনতার বড় অভাব। কিন্তু সময় এসেছে সচেতন হবার, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার। আর না হলে আমাদের সন্তানরা আমাদের এই নির্জীবতাকে কোন দিন ক্ষমা করবেনা।
আমরা সত্য জানতে চাই। দেশের সম্পদের নিরাপত্তা চাই এবং পেট্রোবাংলাকে সরাসরি আরো বেশী সংশ্লিষ্ট দেখতে চাই ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৪২