ছুটির দিন, সুন্দর বিকেল, আপনি আপনার আবাসিক সোসাইটির ভিতরে হালকা ফুরফুরে মেজাজে হাটছেন আর বিকেলটা উপভোগ করছেন। সোসাইটির এখানে সেখানে পরমযত্নে বেড়ে উঠা কিছু বাচ্চা খেলাধূলা করছে, বয়স কতই বা হবে... এই ৪-৫ বছর, অভিবাবক দের তীক্ষ নজরও আছে তাদের দিকে। আপনিও আনমনে হাঁটতে হাঁটতে বাচ্চাদের পাশে গেলেন, কি কিউট, কি সুন্দর বাচ্চাগুলো! আপনি তাদেরকে কোলে তুলে আদর করলেন, খুনসুটিতে মেতে উঠলেন, তাদের সাথে নিজেও একটা বাচ্চা হয়ে গেলেন। তারাও আপনার সাড়া তে আপ্লুত! আপনি কত ভালো মানুষ! বাচ্চাদের আদর স্নেহ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, আপনি এই দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করছেন। আপনি ভালো মানুষ তাই আপনার ভিতরে এখনো মায়ামমতা বিদ্যমান। বাহ! নিজেকে নিয়ে এখন গর্ব করতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না!! খাড়ান...এত খুশি হইয়েন না! প্রতিদিন সোসাইটির বাইরে যে বস্তি আছে, সেখানকার অনাদর অবহেলায় বেড়ে উঠা কিছু বাচ্চা রোজ ধূলিময় রাস্তায় নোংরা শরীরে খেলা করে, যা আপনার চোখ এড়ায় না। মাঝে মাঝে প্রচন্ড ঘৃণাভরে তাদের ধমকাতেও আপনি কখনো ভুল করেননা! এভাবে কেন যে এদের মা-বাবা এদের ছেড়ে রাস্তায় ছেড়ে দেয়, যত্তসব ফালতু! এসব ভাবতে ভাবতে আপনি আপনার রাজে রওনা দেন। এভাবে আপনি প্রতিনিয়ত আপনার গুরুদায়িত্ব পালন করে চলছেন। একদিনে সোসাইটির বাচ্চাগুলোকে কোমলতার দৃষ্টিতে অন্যদিকে বস্তির বাচ্চাগুলোকে অবহেলার চোখে তাকিয়ে আপনি নিজে মানুষ হয়ে উঠছেন?! মনে রাখবেন, নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠা এসব বাচ্চাদের অভিভাবকরা দু-বেলা অন্নের যোগান দিতেই হিমশিম খায়। রঙরঙা হরলিক্সের বিজ্ঞাপন গুলো দেখে তাদের বুকের ভিতরে যে হাহাকার করে উঠে তা আপনি কখনই উপলব্ধি করতে পারবেন না। সী-ওয়ার্ল্ড, ফ্যান্টাসী কিংডমে গিয়ে তাদেরও ফ্যান্টাসীতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সবার ভাগ্যে কি সব জোটে! আপনারা কত সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, সমাজ পরিবর্তনের কথা বলেন, সম অধিকারের কথা বলেন, বলেন কত ন্যায়নীতির কথা। অথচ নিষ্পাপ বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি এক করতে পারলেন না। যদি পারেন কখনো একটা বস্তির বাচ্চাকে কোলে তুলে নিয়ে দেখবেন। দেখবেন কতটা খুশি হয় তারা, চকচকে পোশাকধারী মানুষদের দেখলে আর ভয়ে সংকুচিত হবে না ওরা, এগিয়ে আসবে পরমশ্রদ্ধাভরে। পৃথিবীটা সব শিশুদের কাছে সমান হোক। হয়তো কৃত্রিম পাওয়া না পাওয়ার ভেদাভেদ থাকবে তাদের মাঝে, কিন্তু অকৃত্রিম ভালোবাসাটুকু সবার তরে সমান যেন হয়। আমি চাই ওরা আমাদের মতো দু-পেয়ে গুলোকে মানুষ রূপে দেখে বড় হোক, যাতে তারা একদিন পৃথিবীর সব অপবিত্র আত্মাদের স্থান দখল করে নিতে পারে। আসুন... ভাইয়েরা তোমার, বোনেরা আমার, এইসব হাঙ্কি-পাঙ্কি বাদ দিয়া, মানুষে বিশ্বাসী হই। পোশাক-আভিজাত্য, সুন্দর চামড়ার ভেদাভেদ ভুলে শুধু মানুষকে মূল্য দিতে শিখি। দেখবেন পৃথিবী আপনাতেই বদলে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০০