অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে স্কটল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘নাগরিক’ পরম প্রতীক্ষিত স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ’না’ ভোট দিল ! আমি সতর্কতার সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ ’স্কটিশ’ শব্দটি ব্যাবহার করলাম না, আমার সাথে কেউ দ্বিমত পোষণ করতেই পারেণ তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে স্কটিশদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে । দেখুন, স্বাধীনতার পক্ষে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৯ জন স্কট ভোট দিয়েছেন আর স্বাধীনতার জন্য দরকার ছিল ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৮২৮টি ভোট। অপরদিকে ’না’ ভোট পড়েছে ২০ লাখ ১,৯২৬টি। আমার মনে হল-স্বটল্যান্ডের যারা অভিবাসী বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা ও আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে অভিবাসী যারা স্কটল্যান্ডের নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন মূলত তাদের ভোটের কারণেই স্কটিশরা স্বাধীনতা পাইনি ! শুধু অভিবাসী নয় অভিজাত স্কটিশরাও স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে । অভিবাসী ও অভিজাত স্কটিশ স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার মূল কারণ ছিল অর্থনৈতিক এছাড়া আর কিছুই নয়। তবে দরিদ্র শ্রেণীর স্কটিশরা স্বাধীনতার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিল। অভিজাত স্কটিশ ও অভিবাসীগণ মূলত অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা থেকেই আপাতত যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তিকে তাদের জন্য সুবিধাজনক মনে করেনি। ইউরোপ, আমেরিকার প্রচার মাধ্যমের ভূমিকাও অন্যতম ছিল যা তরুণ স্কটিশদের প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রভাবকটি ছিল ইউরোপিয় ইউনিয়ন। ইউরোপিয় ইউনিয়ন বলেই দিয়েছে, স্কটল্যান্ড স্বাধীন হলে স্কটল্যান্ডকে অন্তত ৮ বছরের মধ্যে ইউরোপিয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ নেই ! বিশ্বের একমাত্র শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোটের এ হুমকি নি:সন্দেহে স্কটল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের কপালে ভাজের চিহ্ন ফেলে দিয়েছিল । এছাড়াও ব্রিটেন থেকে অধিকতর অর্থনৈতিক সুবিধা ও ক্ষমতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও অন্যতম নিয়ামক ছিল।
যাইহোক, প্রশ্ন হলোঃ গণভোটে ’না’ জয়যুক্ত হয়েছে -এই ফলাফলই কি চুড়ান্ত সমাধান ? আমার মনে হয় এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য বড় ধরনের এক অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে প্রবেশ করল যদিও আপাতত সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে ও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, কিন্তু স্কটিশদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি যুক্তরাজ্যকে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো স্বস্তি দিবে না কারণ স্কটল্যান্ডের মতই উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসবাসীরাও একই সুযোগ সুবিধা ও ক্ষমতার দাবি করবে যা সামাল দেওয়ার অখন্ড যুক্তরাজ্যের জন্য কঠিনই হবে। তবে স্কটল্যান্ডের এ গণভোটই শেষ নয়-সামনে স্বাধীনতার দাবি আরো জোরালো হবে নি:সন্দেহে। ৪৫% মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খা দমিয়ে রাখা কতদিনের জন্য সম্ভব হবে তা চিন্তার বিষয় বটে! শুধু স্কটল্যান্ড নয় নিকট ভবিষ্যতে বিশ্ব থেকে আমেরিকা ও ইউরোপের অধিপত্য খর্ব হলেই ইউরোপ, আমেরিকার নানান জাতিগোষ্ঠী স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়বে-ছোট ছোট রাস্ট্রে বিভক্ত হয়ে যাবে ইউরোপ, আমেরিকার বৃহৎ ও বহু জাতি ভিত্তিক রাস্ট্রগুলো! অবশ্য স্কটল্যান্ড স্বাধীনতা পেলে নি:সন্দেহে বিশ্ব ইতিহাসে ও রাজনীতিতে তা অন্যতম একটি মাইলফলক হিসাবে থাকত তারপরেও এ গণভোটের তাৎপর্য ও অর্জন নেহাতই কম নয় ! স্বাধীনতার দাবির মত সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য নজির হিসাবে থাকবে এ ’গণভোট’। বিশ্বের নানা প্রান্তের স্বাধীনতাকামীদের স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটরে দাবি জোরালো করবে এ গণভোট । ইতোমধ্যেই পাকিস্থানের স্বাধীনতাকামী বেলুচ সম্প্রদায় স্কটল্যান্ডের অনুকরণে গণভোট অনুষ্ঠানের দাবি করেছেন! অদূর ভবিষ্যতে বহু জাতি ভিত্তিক রাস্ট্র ভারতেও একই দাবি উত্থাপিত হবে-কাশ্মিরে তো অনেক আগেই এ দাবি উত্থাপিত হয়েছে। চীনের জিনজিয়াং, তিব্বত, রাশিয়ার চেচনিয়া, ফিলিপাইনের মিন্দানাও, ইউক্রেনের রুশভাষা্ভাসী অঞ্চলগুলিসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের স্বাধীনতাকামীদের জন্য স্কটল্যান্ডের গণভোট নি:সন্দেহে একটি মাইলফলক। আর কোনো সহিংসতা নয় স্বাধীনতার জন্য ’গণভোট’-এ দাবি জোরালো ও ধ্বনিত হোক বিশ্বের সর্বত্র !