যখন আধা মস্কোপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ উৎখাত হননি তখনই বলেছিলাম ইউক্রেনের কি সোভিয়েত বলয়ে প্রত্যাবর্তন নাকি ইউরোপিয় ইউনিয়নে যোগদান? লিখেছিলাম স্নায়ু যুদ্ধ শুধু ইউক্রেন নিয়ে নয় চলছে আরো কয়েকটি দেশ নিয়ে। এরমধ্যে সিরিয়া অন্যতম।ওদিকে আর এক মার্কিন বিরোধী দেশ ভেনেজুয়েলাতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ উস্কে দিচ্ছে যুক্তরাস্ট্রের সিএনএন ! এরপর পুতিন যখন ক্রিমিয়ায় সেনা পাঠালেন তখন লিখলাম পুতিনের চালে ধরাশায়ী ওবামা ! এখন তো সবার কাছেই নিট এন্ড ক্লিন যে পুতিনের কাছে সত্যিই ধরাশায়ী ওবামা ! ভাবছি ওবামা নয়, জন ম্যাককেইন প্রেসিডেন্ট হলে কি করতেন ? এই কুপমন্ডুকটা রাশিয়ানদের আহবান জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উৎখাত করতে ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে আহবান জানিয়েছে এই নরাধমটা ! এই জঙ্গী ও মৌলবাদী সিনেটর ম্যাককেইন কিছুদিন আগে সিরিয়ার দখলকৃত ভূ-খন্ডে যেয়ে সিরিয়ার জঙ্গীদেরকে উৎসাহ দিয়েছে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আরো জোরসে যুদ্ধ করতে ! সেই জোরসে যুদ্ধ করতেছে সিরিয়ার তথাকথিত খেলাফতপন্থী বিদেশী জঙ্গীরা।জোরসে যুদ্ধের ফল হল -সিরিয়া থেকে প্রায় উৎখাতের পথে মার্কিন মদতপুষ্ট সিরিয়ার সন্ত্রাসীরা ! অন্যদিকে ইরানের পরমানু কর্মসুচি নিয়ে ইরানি দাবিকে মেনে নিতে হচ্ছে যুক্তরাস্ট্রকে ! বলা যায় অনিচ্ছাসত্তেও বিষপান! এছাড়া যুক্তরাস্ট্রের করার মত আপাতত কিছু নেই ! যাইহোক, বুশ যুক্তরাস্ট্রের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে তেমনি ম্যাককেইন প্রেসিডেন্ট হলে নিশ্চয় আমেরিকার বারোটা নয় চৌদ্দটা বাজিয়ে ছাড়তেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পতনের জন্য বুশ বা ম্যাককেইনদের মত লোকদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রয়োজন আছে বৈকি !
মার্কিন পররাস্ট্র সেক্রেটারী জন কেরী রাশিয়াকে হুমকি দিয়েছেন -প্রয়োজন হলে বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে ক্রিমিয়াকে নিয়ে ! অন্যদিকে রাশিয়া থেকে বলা হয়েছে মুহুর্তের মধ্যে যুক্তরাস্ট্রকে ছাইয়ে পরিণত করার সামর্থ আছে রাশিয়ার ! হিলারি ক্লিনটন তো পুতিনকে সরাসরি নতুন হিটলার বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন ! পশ্চিমা বিশ্ব সুর তুলেছে নিষেধাজ্ঞার। যুক্তরাস্ট্রের চাপে এরমধ্যে কিছু জারিও করেছে, কিন্তু কথাহলো নিষেধাজ্ঞা বলি আর ওয়ার রেটরিকই বলি এতে রাশিয়া কি পিছু হটবে ? মোটেই না ! রাশিয়া ক্ষমতা আছে পুরো ইউরোপকে মুহুর্তের মধ্যে অস্থিতিশীল করে দিতে। না, বলছি না যে এটা করলে রাশিয়ার কোনো ক্ষতি হবে না ,ক্ষতি তো হবেই, কিন্তু প্রতিপক্ষকে দমাতে সবাইতো মোক্ষম অস্ত্রই তো প্রয়োগ করবে! সেক্ষেত্রে ইউরোপ কি ঝুকি নিবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অ্যকশনে যেতে ? রাশিয়া ভাল করেই জানে যে কুকুরটা বেশি ঘেউ ঘেউ করে সেই কুকুরটা কামড়াতে জানে না ! ইউক্রেনকে বাঁচাতে পশ্চিমারা একটি গুলিও ছুড়বে না ! তারা শুধু পারে নীতি, নৈতিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দুর্বল রাস্ট্রগুলিকে আক্রমন করতে ! যারা বিশ্ব থেকে মারণাস্ত্র বিলোপের পক্ষপাতি তাদের জন্য ক্রিমিয়া একটি উপদেশ ! ইউক্রেন ইতিমধ্যেই ক্রিমিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে দিয়েছে! আর মাস খানেকের মধ্যে ক্রিমিয়া নিয়ে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে।ক্রিমিয়া রাশিয়ার ছিল এখন আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। এখন আর কিছুই হবে না যা হবার তা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে!
যুক্তরাস্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলির একটি নীতি হলো কোনো দেশের সরকার তাদের পছন্দ না হলে যেনতেন ও হীনভাবে হলেও সেই সরকারকে তারা উৎখাত করে।এ কাজে তারা সর্বপ্রথম সেই দেশের সেনাকর্মতাদের উৎকোচ দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকারকে উৎখাত করে। আর এতে কাজ না হলে প্রথমে তারা ঐ দেশের সরকারের পিছনে মিডিয়াকে লেলিয়ে দেয়, এরপর বিভিন্ন অভিযোগে দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ জাতিসংঘকে ব্যবহার করে নানা প্রতিবন্ধকতা আরোপ করে দেশটির অর্থনীতি দুর্বল করে দেয়। এরপর কোনো একটা ইস্যুতে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সেই দেশের জনতাকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উস্কে দেয়, আর তখন যুক্তরাস্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা রাস্ট্রগুলি সেই দেশের জনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ভান করে সেই দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে-ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে! ১৯৫৩ সালে ইরানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোসাদ্দেককে উৎখাত, ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণকে উৎখাত, ১৯৭৩ সালে চিলির প্রধানমন্ত্রী আলেন্দকে উৎখাত, গত বছরের মিশরের করুণ অবস্থার কথা তো সবার জানা । সেখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাত করা হয়েছে আর সর্বশেষ উদাহরণ ইউক্রেনের ইয়ানুকোভিচকে উৎখাত ! তবে এখানে রাশিয়া বাগড়া দিয়েছে! তাই যুক্তরাস্ট্রসহ পুরো পশ্চিমা বিশ্ব বেজায় চটেছে পুতিনের উপর !
রাশিয়ার প্রবল বিরোধীতা সত্তেও সার্বিয়া থেকে কসোভো স্বাধীন হল মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রত্যক্ষ ভুমিকায় গণভোটের মাধ্যমে -অবশ্য স্বাধীনতা কসোভোবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল। তেমনি গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীন হল পুর্ব তিমুর, দক্ষিণ সুদান, কিন্তু গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীন বা রাশিয়া ফেডারশনে যুক্ত হওয়া যাবে না ক্রিমিয়ার ! কেন এ দ্বিমুখি নীতি ? ক্রিমিয়ার জনগণ যদি স্বেচ্চায় নরকে যেতে চায় যুক্তরাস্ট্র কেন সেখানে বাধা দিবে ? পশ্চিমা মিডিয়ায় বলা হচ্ছে রাশিয়া নাকি ক্রিমিয়া দখল করে নিল ! ক্রিমিয়ায় নাকি রাশিয়ার আগ্রাসন ! মজার বিষয় রাশিয়া ক্রিমিয়া আগ্রাসন করল অথচ ক্রিমিয়ার একটি লোকও মরল না বা রাশিয়াকে গুলি ছুড়তে হল না! তারপরেও আগ্রাসন ! অথচ যুক্তরাস্ট্রের ইরাক আক্রমন আ্রগাসন নয় -কারণ যুক্তরাস্ট্র যে নামে অ্যাখ্যায়িত করবে তাই বলতে হবে আমাদের।ইরাকে ও আফগানিস্থানে যুক্তরাস্ট্র প্রায় দশ লাখের মত মানুষকে হত্যা করেছে, পঙ্গুত্ববরণ তাহলে করেছে কত ?
যাইহোক, ক্রিমিয়া রাশিয়ার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।রাশিয়ার লাগোয়া ক্রিমিয়াতে যুক্তরাস্ট্রের দুর্দান্ত উপস্থিতি তা রাশিয়া মেনে নেয় কি করে ? এছাড়াও ক্রিমিয়াতে রাশিয়ার নৌঘাটি আছে যা রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমা বিশ্ব চেয়েছিল ইউক্রেনকে ব্যবহার করে ন্যাটো ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের সদস্য করার লোভ দেখিয়ে ইউক্রেন দ্বারা রাশিয়াকে ঠেকানো। এলক্ষ্যে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলিতে ন্যাটোর মিসাইল ডিফেন্স সিষ্টেম স্থাপন করা হত।পশ্চিমাদের সব হিকাশ নিকাশ উল্টে দিল পুতিন ! ইউক্রেনের সরকার উৎখাত করে মূলত তা পুতিনের পাতানো ফাদেই পা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব ! ক্রিমিয়াকে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করে পুতিনের সিগন্যাল-বেশি বাড়াবাড়ি কর না বাকি ইউক্রেনকেও নিয়ে নেব পারলে ঠেকাও !