এবার থাইল্যান্ড ঘুরে এলাম। পকেটে পয়সা কম ছিল। ভাবছিলাম ভারতে যাব। তবে ভারতে যাওয়ার ভিসা পেতে ঝামেলার অন্ত নেই। লম্বা লাইনে দাড়ানো থেকে শুরু করে গ্রুপ ফোরের দারোয়ান থেকে শুরু করে দূতাবাসের কর্মচারীদের হাবভাবে মনে হবে আপনি ভারতে চুরি করতে যাচ্ছেন। তাই ভারত যাওয়ার আশা বাদ দিয়ে পকেটে খচখচ করতে থাকা ডলার গুলো খরচ করার জন্য থাইল্যান্ডকেই বেছে নিলাম
থাইল্যান্ড ভিসা পেতে ঝামেলা কম। মোটামুটি কম খরচে ঘুরে আসা যায়। আজ আপনাদের থাই ভিসা পাওয়ার জন্য করণীয় জিনিসগুলো জানিয়ে দেবো।
মনে রাখবেন থাইল্যান্ড কয়েকমাস পরপরই ভিসা দেয়ার নিয়ম-কানুন বদলায়। ধরুণ হঠাৎ করেই ঘোষণা দিল তিন হাজার টাকার ভিসা ফি দিতে হবে না। ফ্রি ভিসা। আমরা এই সুযোগ পেয়েছিলাম। এররকম হালকা পাতলা সুযোগ পেলে মজাই লাগে।
আরেকটা বিষয় মনে রাখলে ভালো তা হলো, থাই এমবেসি অনেক ধরনের কাগজ চায়। ধরুণ ব্যাংক স্টেটমেন্টও দিতে হবে সাথে সলভেন্সি সার্টিফিকেটও লাগবে। আরে বেকুব যে কোন একটা হলেই তো হয়। মনে মনে বেকুব বলে লাভ নেই। এমবেসিকে তো বেকুব বলতে পারবেন না। তাই যা যা কাগজ চায় সব দিয়ে দিন। কাগজ দিলে আর ঝামেলা নেই। জনপ্রতি ব্যাংকে ৬০ হাজার টাকা থাকলেই ভিসা পাবেন।
কি কি লাগবে।
১. অবশ্যই পাসপোর্ট- ছয় মাসের মেয়াদ থাকা লাগবে
২. পাসপোর্টের ইনফরমেশন পেজের ফটোকপি
৩. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৩.৫X৪.৫) সেন্টিমিটার
৪. এক কপি পুরণ করা ভিসার আবেদন পত্র। অনলাইনে পুরণ করে প্রিন্ট নিতে পারেন। আবার ফরম প্রিন্ট করে হাতে লিখতে পারেন।
ফরম প্রিন্টের জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করুন
থাই ভিসা ফরম
৫. ভিসার ফটোকপি(যদি আগে থাইল্যান্ড গিয়ে থাকেন। তা না হলে লাগবে না)
৬. চাকরিজীবী হলে প্রতিষ্ঠানের এনওসি লেটার/ ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপির নোটারি করা/ সেলফ এমপ্লয়েড হলে তার প্রমাণপত্র
৭. স্টুডেন্ট হলে স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়রের আইডি কার্ডের ফটোকপি/ চাকরিজীবী হলে প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ডের ফটোকপি
৮. গত ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট। জনপ্রতি ৬০ হাজার টাকা জমা থাকা লাগবে।
৯. ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট। ২৫০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক তাদের প্যাডে লিখে দেবে আপনার কত টাকা আছে। সিল-ছাপ্পড় থাকতে হবে
১০. পরিবারের নির্ভরশীলরা যদি আপনার সাথে যায় তাহলে ভিসা অফিসারকে উদ্দেশ্য করে তাদের স্পন্সরশীপের চিঠি
১১. এয়ার টিকেট বুকিং কনফার্ম লেটার
১২. কত দিন থাকবেন, কোথায় কোথায় যাবেন তার একটি ট্যুর প্লান
১৩. ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য টাকা লাগবে জনপ্রতি ৩৫৪০ টাকা। তিন হাজার টাকা ভিসা ফি। ৫০০ টাকা ভিএফএস ফি। ৪০ টাকা ট্যাক্স জাতীয় ফি।
(যদি ভিসা ফি ফ্রি করে দেয় তাহলে লাগবে মাত্র ৫৪০ টাকা। আমি পেয়েছিলাম)
এবার পুরণ ফরা ভিসা ফরমের উপর দুটি ছবি স্ট্যাপল করে দিন। বাকী ডকুমেন্ট জুড়ে দিন। আপনি বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে যেতে চাইলে তাদের প্রত্যেকের ফরমের সাথে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও সলভেন্সির ফটোকপি জুড়ে দিন।
এবার টাকা জোগাড় করে আর ডকুমেন্ট হাতে নিয়ে থাই এমবেসির দায়িত্ব প্রাপ্ত ভিএফএসের অফিসে চলে যান। সেখানে গিয়ে গার্ডের কাছ থেকে সিরিয়াল টোকেন নিয়ে আপনার সিরিয়ালের জন্য বসে থাকুন। এরপর কাগজপত্র ও পাসপোর্ট জমা দিন। ভিএফএস আপনাকে পাসপোর্ট জমার রশিদ দেবে। এক সপ্তাহ পর পাসপোর্ট ফেরতের তারিখ পাবেন। তবে সেদিন পাসপোর্ট ফেরত নাও পেতে পারেন। ভিএফএসের ওয়েবসাইটে গিয়ে পাসপোর্ট নম্বর ও জন্মতারিখ লিখে দেখতে পারেন কবে আপনি পাসপোর্ট পাবেন। অথবা ভিএফএসের ফোনের অপেক্ষা করুন। ফোন পেলে যেখানে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন সেখানেই তুলতে যাবেন। তবে জমার রশিদ হারাবেন না। হারালে কি হবে, তা আমি জানি না, তবে বুঝি মহাভোগান্তিতে পড়বেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৫২