'ক' মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ। কিছু অভিভাবক জরুরী প্রয়োজনে সাক্ষাতের জন্য এসেছে। গত কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষার নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এই স্কুলের ৫০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১০০জন সকল বিষয়ে পাশ করেছে। বিদ্যালয় সরকারী আইন মানতে গিয়ে সকল বিষয়ে উত্তীর্ণদের ছাড়া কাহাকেও ফরম ফিলপ করাচ্ছেন না। কিন্তু এই ভয়াবহ ফল বিপর্যয়ের পর শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক সহ এলাকার সকলের টেনশনে রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের চাপে পড়ে অভিভাবকগণ প্রধান শিক্ষকের কাছে দৌড়ে এসেছেন সমাধানের জন্য।। তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তাদের সন্তানরা এবারে এসএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবে না।।
প্রধান শিক্ষকের অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে জনা চারেক চিন্তিত অভিভাবক।বাইরে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে হতাশ, বিমর্ষ। তাদের মধ্যে একজন বলল-
>>অভিভাবক-০১ঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার, আসতে পারি?
**প্রধান শিক্ষকঃ ওয়া আলাইকুমুসসালাম, আসুন, বসুন সবাই। আর হ্যাঁ, কী সহযোগীতা করতে পারি বলুন?
>>১ম অভিভাবকঃ স্যার, আমার ছেলে মইনুল (ছদ্ম নাম) আর্টস গ্রুপে টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু পাশ করেনি। শুনলাম বাংলা, ইংরেজি, গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।
>>২য় অভিভাবকঃ স্যার, আমার ছেলে কমার্সে ১১০ রোল, সে গণিত ও ইংরেজিতে পাশ করেছে।
>>৩য় অভিভাবকঃ স্যার, আমার মেয়ে মাইমুনা সাইন্সে পড়ে। সে উচ্চতর গণিত, ফিজিক্স ও ইংরেজিতে ফেল করেছে। আমরা খুবই চিন্তিত স্যার।।
**প্রধান শিক্ষকঃ দেখুন, এই ব্যাপারে কী করতে পারি বলুন? আমাদের হাত-পা বাঁধা। আমরা সকল বিষয়ে উত্তীর্ণদের ছাড়া ফরম ফিলপ করাতে পারবো না। এই দেখুন বোর্ডের নোটিশ।
নোটিশ
>>১ম অভিভাবকঃ তাহলে স্যার, এখন কী হবে? আগেতো আপনারা ফরম ফিলপ করিয়েছেন। এখন দেখুন না স্যার কোনভাবে করানো যায় কী না? নাহলে ছেলেগুলোর তো কেরিয়ার একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে!
>>অন্যান্য অভিভাবকবৃন্দঃ জ্বী স্যার, আমাদেরও এই ভাবনা। আমরা এখন কী করি?
**প্রধান শিক্ষকঃ দেখুন এ ব্যপারে আমার কিছুই করার নাই। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে কাউকেই ফরম ফিলপ করা যাবে না।
>>২য় অভিভাবকঃ তাহলে আইনের কাছে আমরা বন্দি। আইনে আছে বলেই বাচ্চাকাচাগুলোকে এভাবে পানিতে ফেলে দিবেন। আপনাদের কিছুই করার নাই এটা কেমন কথা?
**প্রধান শিক্ষকঃ হ্যাঁ, কী করবো?
>>অন্য অভিভাবকঃ আমরা শুনলাম আপনারা আরো ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়েছেন দুই, তিন বিষয়ে ফেল এরকম?
**প্রধান শিক্ষকঃ হ্যাঁ, সভাপতির সাথে মিটিং এর পর এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা গণিত, ইংরেজিতে বা গ্রুপ সাবজেক্টে ১০ পেয়েছে তাদেরকেও নিয়েছি।
>>১ম অভিভাবকঃ স্যার, আমার ছেলে ইংরেজিতে, বাংলাতে মোটামুটি ভালো, সে কীভাবে ইংরেজি, বাংলা বিষয়ে ফেল করে; আমার বিশ্বাস হয় না। আমি খাতা চ্যালেঞ্জ করতে চাই।
**প্রধান শিক্ষকঃ না খাতা অভিভাবককে দেখানো যাবে না। অন্য শিক্ষক বড়জোর দেখে দিতে পারে কিন্তু এরপরও অনেক সমস্যা আছে।
>>২য় অভিভাবকঃ আমার সন্তান পরীক্ষা দিতে পারবে না এটা যদি সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই খাতা দেখাতে হবে। তারপর বিশ্বাস করবো সে ফেল করেছে। তাছাড়া কেউ যদি কোন বিষয়ে ন্যুনতম ১০ পেয়ে পার হয়ে যায় তাহলে আমারটা "০" পেলেও ফরম ফিলপ অনুমোদন পেতে পারে। কারণ, মন্ত্রণালয়ের বা বোর্ডের নির্দেশ সকল বিষয়ে পাশ করলে তাকে ফরম ফিলপ করাবে। যেহেতু অন্যরা করছে আমাদেরগুলোকেও করাতে হবে।।
>>অন্যান্য অভিভাবকের মধ্যে একজন বলল- স্যার, আমাদের সন্তান দুই বছর অর্থাৎ ৭৩০ দিন আপনাদের তথ্যাবধানে ছিলো, প্রতিদিন ক্লাস করেছে, আপনাদের স্কুলের মাসিক বেতন পরিশোধ করেছে, গণিত, ইংরেজি স্যারেদের কাছে প্রাইভেট পড়েছে, আপনাদের প্রতিষ্ঠানের কোচিং গুলোতে রিগুলার ক্লাস করেছে। এরপরও তারা কেন কোন বিষয়ে ১০ নাম্বারও পায় না।
**প্রধান শিক্ষকঃ ভাই, আপনাদের সাথে তর্ক করেতো পারবো না। দোষ শুধু আমাদের; আপনাদের বিষয়গুলো দেখেছেন? সন্তানের যে দেখভাল করা লাগে, তা কী করেছেন? না হলে এই পরিস্থিতি হতো না।।
>> স্যার, সবই ঠিক আছে। আমাদের দোষ আছে, আমরা দোষী; কিন্তু আপনাদের ব্যর্থতা কী নাই? আপনারা আমাদের সন্তানদের প্রতিটি বিষয়ে কমপক্ষে ৩৩ পায় এই বিদ্যাটুকুতো দিতে বিফল হয়েছেন। সারা বছর আপনার টিচিং স্টাফরা কী করেছে তার পরিসংখ্যান আপনার কাছে নাই; থাকলে আজ আমাদের সন্তানদের নিয়ে এত পেরেশান হোতাম না।। ক্ষিপ্ত এক অভিভাবক তার সব রাগ ঝেড়ে দিল।।
>> আমরা পাবলিকরা হোলাম বলির পাঁঠা; কড়িকাঠে মাথা আটকানো, না পারবো প্রতিবাদ করতে না পারবো সয়ে যেতে। এখন কী করবো? অভিভাবকরা তাদের উষ্মা প্রকাশ করে সালাম দিয়ে চলে গেলো!!
প্রধান শিক্ষক মাথা নিচু করে বসে থাকলো। ভাবছেন- অভিভাবকদের কথার প্রতিধ্বনিগুলোকে নিয়ে>> ।।
পূনশ্চঃ এই পরিস্থিতি আজ সারা দেশ জুড়ে। প্রতিষ্ঠানগুলো না পারছে ছাত্রগুলোকে ঝরিয়ে দিতে আর না পারছে ফরম ফিলপ করতে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ফরম ফিলপ করিয়ে নিচ্ছেন।
এর কী কোন সমাধান আছে?
ছবিঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১