
সাহারা মরুভূমিতে সিংহ শিকারে বেরিয়েছেন।
কিন্তু জানেনই তো কী দুর্দান্ত হয় আফ্রিকার সিংহগুলি!
তবে গাণিতিক কিছু সরঞ্জাম থাকলে খুব সহজেই আপনি কুপোকাত করতে পারেন ভয়ানক এই প্রাণিগুলিকে। নিচের যে পদ্ধতিটি আপনার পছন্দ হয়, সেটি প্রয়োগ করেই দেখুন না।

১। হিলবার্টের স্বীকার্য পদ্ধতি (Hilbert axiomatic method)
মরুভূমির নির্দিষ্ট কোনো বিন্দুতে আমরা একটি তালাবদ্ধ খাঁচা স্থাপন করি। তারপর নিচের দুটি স্বীকার্য গঠন করিঃ
স্বীকার্য ১: সাহারা মরুভূমির সিংহদের সেটটি ফাঁকা সেট নয়।
স্বীকার্য ২: যদি সাহারায় ১টি সিংহের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে খাঁচার মধ্যেও ১টি সিংহের অস্তিত্ব বিদ্যমান।
পদ্ধতিঃ আমরা জানি, যদি P একটি উপপাদ্য হয়, এবং যদি P সত্যি হলে Q সত্য হয়, তাহলে Q একটি উপপাদ্য। অতএব স্বীকার্য ১ ও ২ অনুসারে, খাঁচার মধ্যে একটি সিংহ বিদ্যমান।
২। জ্যামিতিক উৎক্রম পদ্ধতি (Geometrical inversion method)
মরুভূমিতে আমরা একটি গোলীয় খাঁচা স্থাপন করি, খাঁচার ভেতর প্রবেশ করি, এবং ভেতর থেকে খাঁচাটি তালাবদ্ধ করে দেই। অতঃপর আমরা খাঁচার সাপেক্ষে উৎক্রম (inversion) প্রয়োগ করি। ফলে আমরা খাঁচার বাইরে চলে আসি, আর সিংহ চলে যায় খাঁচার ভেতর।
৩। অভিক্ষেপ জ্যামিতিক পদ্ধতি (Projective geometry method)
সাধারণ নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে মরভূমিকে আমরা একটি সমতল পৃষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। এখন একটি সরলরেখায় আমরা মরুভূমি তলটির অভিক্ষেপ অঙ্কন করি। এরপর একটি বিন্দুতে আবার সরলরেখাটির অভিক্ষেপ অঙ্কন করি। অতএব উক্ত বিন্দুতে মরুভূমির সাথে সিংহটির ম্যাপিং হয়ে গেল।
৪। বোলযানো-ওয়েইরস্ট্রাস পদ্ধতি (Bolzano-Weierstrass method)
উত্তর দক্ষিণ বরাবর একটি রেখা টেনে মরভূমিকে দুই ভাগ করি। সুতরাং সিংহটি লাইনটির হয় পূর্ব পাশে, নয়তো পশ্চিম পাশে অবস্থিত।
ধরি, সিংহ রেখাটির পূর্বের অংশে অবস্থিত। পূর্ব পশ্চিম বরাবর আরেকটি রেখা টেনে এ অংশটুকুকেও দুই ভাগ করে ফেলি। অতএব সিংহ এখন রেখার উত্তর কিংবা দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। মনে করি, সিংহ দক্ষিণ পাশে অবস্থিত।
এভাবে বিভাজন পদ্ধতি প্রয়োগ করে সমগ্র মরুভূমিকে আমরা ক্রমাগত সংকীর্ণ অংশে ভাগ করে তাদের চারপাশে খাঁচা তুলে দিতে পারি। এতে অভীষ্ট অংশের ব্যাসের মান শূন্যে অভিমুখে ধাবিত হতে থাকবে, এবং এক সময় খুব ছোট ব্যাসের একটি খাঁচায় সিংহটি আবদ্ধ হয়ে পড়বে।
৫। সেট তত্ত্ব পদ্ধতি (set theoretical method)
আমরা পর্যবেক্ষণ করি মরুভূমি হচ্ছে বিচ্ছিন্নযোগ্য একটি ক্ষেত্র (space)। সুতরাং এতে রয়েছে গণনাযোগ্য সংখ্যক বিন্দুসমূহের একটি সেট যা গঠন করে একটি ধারা (sequence), যার সীমা (limit) হল সিংহটি। আমরা নীরবে সিংহের দিকে অগ্রসর হই, প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে।
৬। পিয়ানো পদ্ধতি (Peano method)
স্বাভাবিক নিয়মে মরুভূমির সবগুলি বিন্দু নিয়ে আমরা একটি বক্ররেখা (curve) অঙ্কন করি। পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে [1] এ ধরণের বক্ররেখাকে আমরা যথেচ্ছ ক্ষুদ্র সময়ে (arbitrarily short time) অতিক্রম করতে পারি। অতএব আমরা বক্ররেখাটি অতিক্রম করতে থাকি, হাতে বর্শাসহ, এমন সময় নিয়ে যা সিংহটিকে তার নিজের দৈর্ঘ্যের সমান দূরত্ব অতিক্রম করতে যে সময় লাগে তার চেয়ে কম।
৭। কালরা পদ্ধতি (Kalra method)
সিংহের সম্ভাব্য অবস্থানগুলির একটি তালিকা তৈরি করি। এদেরকে বিভিন্ন ফাযি সেটে (fuzzy sets) ভাগ করি। সিংহ এতে বিভ্রান্ত হয়ে যাবে এবং আমাদের ফাঁদে ধরা পড়বে।
৮। আইনস্টাইন পদ্ধতি (Einstein method)
সিংহের উল্টোদিকে আমরা দৌড়াতে থাকি। বিপরীতমুখী বেগের কারণে সিংহের আপেক্ষিক গতি বেড়ে যাবে, ফলে সিংহ হয়ে উঠবে আরো দ্রুতগতিসম্পন্ন। গতি বেড়ে যাওয়ার দরুন m(v)=m(0)/SQRT(1-v^2/c^2) সূত্রানুসারে সিংহের ওজন বেড়ে যাবে। ফলে সিংহ ক্লান্ত হয়ে এক সময় মরুভূমিতে বসে পড়বে।
৯। নিউটন পদ্ধতি (Newton method)
সিংহটিকে সুযোগ দিন আপনাকে ধরার (আমরা ধরে নেই, আপনি তারপরও বেঁচে আছেন)। প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অতএব সিংহ আপনাকে ধরার ফলে আপনিও সিংহকে ধরে ফেললেন।
১০। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা পদ্ধতি (Heisenberg method)
একটি গতিশীল সিংহের অবস্থান ও গতিবেগ একই সাথে পরিমাপ করা অসম্ভব। গতিশীল সিংহের যেহেতু সুনির্দিষ্ট কোনো অবস্থান মরুভূমিতে নেই, কেউ তাদের ধরতে পারবে না। অতএব সিংহ শিকার সমস্যাটির সমাধান কেবলমাত্র বিশ্রামরত সিংহের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। এখন গতিশীল না, বরং বিশ্রামরত সিংহকে কীভাবে ধরা যায়, এ সমস্যাটি পাঠককে হোমওয়ার্ক হিসেব দেয়া হল।
১১। ত্রিকোণমিতিক ফাংশন পদ্ধতি (Trigonometric function method )
সিংহ যেহেতু সারা জীবন সাহারার সূর্যের নিচে কাটিয়েছে, নিঃসন্দেহে তার গায়ের রং ট্যান (tan) হয়ে গেছে। এখন কোনোভাবে সিংহকে চিৎ হয়ে শোওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করি। উল্টানোর ফলে সে এখন 1/tan বা cot হয়ে গেল।
১২। এরাতোস্থেনিসের ছাঁকনি পদ্ধতি (Eratosthenes sieve method)
মরুভূমির সকল বস্তুকে সংখ্যায়িত করি; তাদেরকে একের পর এক পর্যবেক্ষণ করি; যেগুলি অ-সিংহ (non-lion) তাদের বাদ দেই। ফলে কেবলমাত্র মৌলিক সিংহগুলি (prime lions) অবশিষ্ট থেকে যাবে।
১৩। কশি পদ্ধতি (Cauchy method)
আমরা সিংহ-মানীয় ফাংশন (lion-valued function) f(z)কে পর্যবেক্ষণ করি। ধরি, ζ হচ্ছে খাঁচা। এখন নিচের ইন্টগ্রালটি বিবেচনা করিঃ

যেখানে C নির্দেশ করে মরুভূমির সীমা। এর মান হচ্ছে f(ζ), অর্থাৎ খাঁচার ভেতর একটি সিংহ রয়েছে। [2].
১৪। মন্টি কার্লো পদ্ধতি (Monte-Carlo method)
যে ক্ষেত্রকে আমরা অনুসন্ধান করছি দৈবচয়ন (random) পদ্ধতিতে তার একটি সংখ্যাসূচক নির্বাচন করি। অনুসন্ধান থেকে সন্নিকটবর্তী বিন্দুগুলি বাদ দিয়ে আমরা বিবেচনাযোগ্য বিন্দুর সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে পারি। সম্ভাব্যতার সূত্রানুসারে, আগে হোক, পরে হোক, সিংহ আসবেই।
১৫। টপোলজিক্যাল পদ্ধতি (Topological method)
আমরা লক্ষ করি যে সিংহ ন্যুনতমপক্ষে টোরাসের (torus) সাথে সম্পর্কিত। মরুভূমিকে চতুর্মাত্রিক ক্ষেত্রে (4-dimensional) স্থানান্তরিত করি। এখন আমাদের পক্ষে এমন ক্ষেত্র রূপান্তর সম্ভব, যাতে সিংহকে ত্রিমাত্রিক (3-dimensional) ক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনা যাবে এবং সেই সাথে সে থাকবে আবদ্ধ অবস্থায়। সিংহ তখন থাকবে অসহায় পড়বে।
References[1] After Hilbert, cf. E. W. Hobson, “The Theory of Functions of a Real Variable and the Theory of Fourier’s Series” (1927), vol. 1, pp 456-457
[2] According to the Picard theorem (W. F. Osgood, Lehrbuch der Funktionentheorie, vol 1 (1928), p 178) it is possible to catch every lion except for at most one.
[অনুবাদকৃত সংগ্রহ]
ও, হ্যাঁ, আরেকটা আছেঃ
১৬। সোহায়লা রিদওয়ান পদ্ধতি (Sohaila- Ridwan Method)
লেট'স এসিউম, সাথে আছে একজন হলিউডি সিনেমা পরিচালক। এটি সিদ্ধ করতে আমরা একটি ক্যামেরা ইউনিট সেট কল্পনা করি। এখন রিকারেন্স ফর্মুলা (Recurrence formula) ব্যবহার করে খুব সহজেই ডিরেক্টর'স ফর্মুলা (Director’s formula) প্রয়োগ করে সাহারাতে সিংহের সাথে খালি হাতে লড়াই করে, সেটাকে খাঁচাবন্দী করা যাবে।