আধুনিক বাংলায় অনুস্বার এবং উঁয়ো-র উচ্চারণ এক রকম। কিছু কিছু বানানে এদের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হলেও, অন্যান্য ক্ষেত্রে একটি আরেকটির বিকল্প নয়।
৪.১ সাধু ভাষার /ঙ্গ/ এর কোমল রূপ হিসেবে চলিত ভাষায় /ঙ/
আঙ্গিনা > আঙিনা
আঙ্গুর > আঙুর
গাঙ্গ > গাঙ
গোঙ্গানি > গোঙানি
ঠ্যাঙ্গারে > ঠ্যাঙারে
বাঙ্গালি > বাঙালি
ঢ্যাঙ্গা > ঢ্যাঙা
ল্যাঙ্গট > ল্যাঙট
স্যাঙ্গাৎ > স্যাঙাৎ
৪.২ অবিকল্প ঙ (যেখানে শুধুমাত্র ঙ প্রযোজ্য)
ক-বর্গের /ক খ গ ঘ/ এর সাথে নাসিক্য-ব্যঞ্জন (ঙ্, ঞ্, ণ্, ন্, ম্) যুক্ত হওয়ার সময় নাসিক্য-ব্যঞ্জনটি শুধুমাত্র /ঙ/ হবে; /ঙ/ এর পরিবর্তে অনুস্বার ব্যবহার করা যাবে না।
/ঙ্ ঞ্ ণ্ ন্ ম্/ + /ক খ গ ঘ/ = ঙ্ক ঙ্খ ঙ্গ ঙ্ঘ
ঙ্ + ক (ঙ্ক): অঙ্ক (অংক নয়), আতঙ্ক (আতংক নয়);
এমনিভাবে, অঙ্কুর, আশঙ্কা, কঙ্কর, কঙ্কাল, কেলেঙ্কারি, চিত্রাঙ্কন, পঙ্কিল,
বঙ্কিম, শশাঙ্ক।
দ্রষ্টব্য পঙ্ক্তি বানানটি বেশ মজার।
ঙ্ + ক্ষ (ঙ্ক্ষ): আকাঙ্ক্ষা, হিতাকাঙ্ক্ষী
ঙ্ + খ (ঙ্খ): উচ্ছৃঙ্খল, পুঙ্খানুপুঙ্খ, শঙ্খ
ঙ্ + গ (ঙ্গ): অঙ্গ, অঙ্গার, অঙ্গীকার, অঙ্গীভূত, অঙ্গুরি, আনুষঙ্গিক, অন্তরঙ্গ, আঙ্গিক, ইঙ্গ-বঙ্গ, ইঙ্গিত, কুরঙ্গ, গাঙ্গেয়, জঙ্গম, পিঙ্গল, প্রাঙ্গন, ভঙ্গুর, ভৃঙ্গু, শৃঙ্গ, সাঙ্গোপাঙ্গ, স্ফুলিঙ্গ
ঙ্ + ঘ (ঙ্ঘ): উল্লঙ্ঘন, জঙ্ঘা, লঙ্ঘন
তবে সাধিত শব্দের পূর্বপদের শেষ বর্ণ কেবলমাত্র /ম্/ হলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ /ক খ গ ঘ/ হলে সন্ধির নিয়মে /ঙ/-র বিকল্পে অনুস্বার ব্যবহার করা যাবে।
ম্/ + /ক খ গ ঘ/ = ংক বা ঙ্ক, ংখ বা ঙ্খ, ংগ বা ঙ্গ, ংঘ বা ঙ্ঘ/
যেমন, অহম্ + কার = অহংকার/অহঙ্কার।
বানানে সরলতার জন্য এসব ক্ষেত্রে অনুস্বারই বর্তমানে বহুল প্রচলিত। নিচে আরো কিছু উদাহরণ দেখানো হল:
অলম্- অলংকার অলংকৃত
অহম্- অহংকার, অহংকারী
কিম্-কিংকর, কিংকিণী।
তবে কিংকর্তব্য, কিংকর্তব্যবিমূঢ় বানানে কেবলমাত্র অনুস্বার হবে।
ঝম্- ঝংকার, ঝংকৃত
ভয়ম্- ভয়ংকর
শম্- শংকরী
সম্- বিপদসংকুল, সংকট, সংকর, সংকলক, সংকল্প, সংকীর্ণ, সংকীর্তন, সংকোচন, সংগতি, সংগীত, সংঘর্ষ
হুম্- হুংকার, হুহুংকার
দ্রষ্টব্য সংক্রান্ত, সংক্রান্তি, সংক্ষিপ্ত, সংক্ষুব্ধ, সংক্ষোভ, সংখ্যা, সংখ্যক, সংগঠন, সংগোপন, সংগ্রাম, সায়ংকাল, সায়ংকৃত ইত্যাদি বানানে কেবলমাত্র অনুস্বারই হবে।
----------------------------------------------------
৪.৩ অবিকল্প ং (যেখানে শুধুমাত্র অনুস্বার প্রযোজ্য)
৪.২-এ দেখছি /ম্/ + /ক খ গ ঘ/ = অনুস্বার বা ঙ উভয়ই প্রচলিত।
তবে এছাড়া
ম্/ + অন্তস্থ বর্ণ /য র ল ব/ বা উষ্ম বর্ণ /শ ষ স হ/ = অনুস্বার /
(সন্ধির নিয়মে এক্ষেত্রে অনুস্বারের কোন বিকল্প নেই)
কিম্- কিংবদন্তি, কিংবা, কিংশুক
সম্- সংবৎসর, সংবরণ, সংবর্ধনা, সংবলিত, সংবিৎ, সংবিধান, সংরক্ষণ, সংশপ্তক, সংশ্লেষণ, সংস্করণ, সংস্ক্রিয়া, সংহিতা, স্বয়ংবর
দ্রষ্টব্য সম্বন্ধ, সম্বল, সম্বোধন এগুলি এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয় কারণ এখানে পরপদের /ব/ বর্গীয়-ব, অন্তস্থ-ব নয়।
৪.৪ সংস্কৃত থেকে আগত কিছু শব্দে মূলত অনুস্বার
অংশ, অংস, কাংস্য, জিঘাংসা, দংশন, দংষ্ট্রা, নপুংসক, নৃশংস, পাংশু, পুংলিঙ্গ, প্রাংশু, প্রিয়ংবদা, বৃংহণ, মীমাংসা, রিরংসা, শংসাপত্র, হিংসাত্মক
৪.৫ তদ্ভব ও দেশি শব্দে অনুস্বার
এসব ক্ষেত্রে /অং/ বা /ng/ উচ্চারণে সাধারণত অনুস্বার হয়:
আংটি, গাংচিল, চিচিংফাঁক, চিৎপটাং, চ্যাংদোলা, ঝপাং, ডাংগুলি, তিড়িংবিড়িং, ভড়ং, ভেংচানো, ল্যাংচানো, ল্যাংড়া
৪.৬ বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে /ng/ ধ্বনির উচ্চারণে বর্তমানে প্রায় সর্বত্র অবিকল্প অনুস্বার
যেমন, পূর্বে ব্যাঙ্ক বেশ প্রচলিত থাকলেও, এখন ব্যাংকই অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
আংটা, ইংলিশ, ওয়েটিংরুম, কংক্রিট, কিংখাব, ঠুংরি, ডায়ালিং, পিকেটিং, বিয়ারিং, শিলিং
দ্রষ্টব্য কঙ্গো, ক্যাঙ্গারু, চাঙ্গা, জঙ্গি, ডেঙ্গু, দঙ্গল, নাঙ্গা, লুঙ্গি, হাঙ্গামা প্রভৃতি ব্যতিক্রম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩৬