বাবার চাকরির সুবাদে আমার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে। এতে আনন্দ যত টুকু আছে তার চেয়ে বেশি আছে বন্ধু ও সহপাঠি দের থেকে দুরে থাকার যন্ত্রণা ,তবে এখনকার প্রযুক্তির দিনে এ যন্ত্রণা অনেকটা লাঘব ।
প্রতেক্যের স্কুল জীবনের অনেক মজার মজার স্মৃতি আছে । তেমনি
আমার স্কুল জীবনের অনেক মজার দিন গুলোর একটা হছে, হঠাৎ ক্লাসে ''আলকুশি বিলাই খামচির'' সন্ধান .।দিনটি ছিলো শনিবার ২০০০) ।
প্রতিদিনকার মত সেইদিনো ক্লাস রুম খোলার যথারীতি ১৫-২০ মিন আগেই আমরা পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র- ছাত্রী রা হাজির ।
সেই সময় সিটে বসা (দখল করাও বলা যেতে পারে ) নিয়ে প্রতিদিন লড়াই করতে হত । তা যাই হোক যথা সময়ে ক্লাসের দরজা খোলা হলো , সাথে সাথে আমরা সবাই যে যার মত পছন্দের আসন দখল করলাম । কিছু সময় পর হঠাৎ অসস্থি অনুভব করলাম । ক্লাসে আমরা সবাই খুব অসস্থি বোধ করছি কিন্তু কেউ কাউকে বলছি না। যথারীতি আমাদের সবার প্রিয় ''হযরত আলী'' স্যার ক্লাসে আসলেন , ক্লাসের পরিবেশটা স্যারের কাছেও ভালো ঠেকলো না তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কারো কোনো প্রবলেম কিনা ?
আমি যে প্রবলেম ফীল করছিলাম তা হলো, হাত আর গলার পাসে খুব চুল্কাছে স্থির থাকতে পারছিলাম না । প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটা আমার নিজের প্রবলেম কিন্তু যেইনা স্যার কে আমার প্রবলেমটা বললাম আমার কথা শেষ হওয়া মাত্র একসাথে সবাই বলল স্যার আমারও চুল্কাছে

ইতিমধ্যে সবার চুলকানির মাত্রা বেড়েই চলেছে , স্যার সবাই কে ক্লাস থেকে বের হয়ে ফাকা জায়গায় বিশ্রাম নিতে বললেন ।
ক্লাস থেকে বেরহয়ে এসে রোদের আলোয় হাতটা ভালো করে দেখে পুরাই অবাক , হাতে খুব সূক্ষ সূক্ষ মোকমলের মত কি যেন বিধে আছে যা শুধু রোদের আলোয় দেখা যাচ্ছে । একে একে সবাই নিজের হাতের দিকে খিয়াল করতে লাগলো এবং আলোচনা করছিল এমন সময় স্যার বললেন যে ও এবার বুজেছি এটা হছে, ''আলকুশি বিলাই খামচি'' নাম শুনে সবাই হাসতে লাগলো । তখন স্যার সবাই কে কাছে ডেকে এই অদ্ভুত নামটির সংক্ষেপে বর্ণনা দিলেন , এটি বাংলায় বিলাই-খামচি নামেই বেশী পরিচিত।
ছবি দেখতে চাইলে ফেবুর এই লিঙ্কে গুতান
এটি একটি গুল্ম জাতীয় গাছ। এটি বীন পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ফল অনেকটা সীমের মতো ৪ থেকে ৬ টা বীজ থাকে এবং এটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে যা সহজেই পৃথক হয়ে যায়। ঐ পৃথক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম গুলি ত্বকের সংস্পর্শে এলে প্রচন্ড চুলকানি সৃষ্টি করে।
কেউ হয়ত বাদরামি করে আমাদের ক্লাস ভুন্ডুল করতেই এমনটি করেছে . তবে সেই যাই হোক সেইদিন কিন্তু পরে আমরা খুব মজা করেছিলাম এবং বাংলাদেশের বিলুপ্তি প্রায় গুল্ম জাতীয় গাছটি সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম ।
এছাড়া এই গাছ আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। রক্তের ক্লোরোস্টেরল ও ডায়াবেটিক সমস্যা এটি ব্যবহৃত হয়। পার্কিনসন রোগেও এটা কর্যকরী।
তবে ''আলকুশি বিলাই খামচি''গাছের সাথে আমার প্রথম এবং শেষ দেখা দিনাজপুরের অদূরে সিংড়া ফরেস্ট পিকনিক স্পটে .।
আজ প্রায় ১২ বছর পরে ফেবুর সৌজন্যে আমার সেই স্কুল জীবনের হারিয়ে যাওয়া কয়েকজন বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বললাম ...সে এক অন্য রকম অনূভুতি .।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৪