somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন পোড়ে প্রেট্রোল বোমায়!!!!

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজু, থাকে বস্তিতে। মা আর একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে।বাবা দিন মজুরের কাজ করত।রোগে মারা গেল। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারলো না। ছোট ভাই রাতুল এবার এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিবে। কলেজের এক শিক্ষক গত কয়েক মাস অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তাকে ফ্রি পড়াচ্ছে। যেতে হয় বাসে। এই বাস বাড়াটা নিতে হয় বাসা থেকে। রাজু রং মিস্ত্রির কাজ করে। নিজের পরিবারটাকে কিভাবে সাজানো যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মা আর নিজের আয়ে সংসারটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নিজে টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে পারেনি। ছোট ভাইটা মেধাবী। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করছে। খুব বড় স্বপ্ন। একদিন ভালো কিছু হবে, তখন আর তাদের এত কষ্ট করতে হবে না।

গতকাল রাতুল বলল, তার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। চার হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা সে এখন এক সাথে কোথায় পাবে? অনেকের কাছে ধার চেয়েও পায়নি। গত কয়েকদিন অবরোধের কারণে কাজও আসতেছে না। মাও বেতন অগ্রিম চেয়েছে, কিন্তু তারা এখন দিতে পারবে না, বলে দিয়েছে। অথচ আগামি কালের মধ্যে টাকা দিতে হবে। অস্থির হয়ে উঠল সে। তার স্বপ্ন, তার মায়ের স্বপ্ন তার ভাইয়ের স্বপ্ন সব যে শেষ হয়ে যাবে যদি টাকার অভাবে রাতুল পরীক্ষা না দিতে পারে। কারো কাছে না পেয়ে শেষে গেল এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছে। বড় ভাই তাকে বড় মাপের এক নেতার কাছে নিয়ে গেল। ক্ষমতায় যখন ছিল এই নেতার খুব নাম ছিল। কিন্তু এখন ক্ষমতায় নাই তাই বিভিন্ন মামলা ঝুলতেছে। পালিয়েই থাকতে হয় বেশি সময়। নেতা টাকা দিতে সম্মত হলো। তবে তার আগে কত বড়ান দিল, হাত পাতার দরকার কি, কাজ করে খাও ইত্যাদি ইত্যাদি। রাজু বুঝালো অবরোধের কারণে এখন কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সে কাজও করতে পারছে না। নেতা বলল তুমি করলে আমি কাজ দিব। রাজু আশান্বিত হলো। এই অবরোধে কাজ! তার কাছে স্বপ্ন মনে হলো। সে রাজি হয়ে গেল। বড় ভাইকে নেতা নির্দেশ দিয়ে দিল যাতে তার কাজ আর টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

বড় ভাই রাজুকে যে কাজ দিল তা শুনে রাজু রীতিমত হতবাক! তাকে গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারতে হবে। একটা সফলভাবে মারতে পারলেই ৫০০। বেশি লোক মারা গেলে টাকার পরিমাণও বাড়ার সম্ভাবনা আছে! রাজু প্রথমে সাত-পাঁচ করলো। পরে নিজের ছোট ভাই এর টাকার কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে গেল।

প্রথমদিন রাজুর ভয় করতে লাগলো। কিন্তু পাড়ার কমলও এই কাজ করে। কমল তাকে প্রথমদিন শিখিয়ে দিল। রাজুর পেট্রোল বোমায় হাতেখড়ি হলো। প্রথমদিন সে সফলভাবে একটি গাড়ি পোড়াতে পারল। এতে কেউ মারা না গেলেও গুরুতর আহত হয়েছে।
এখন পেট্রোল বোমা মারা রাজুর কাছে ডাল ভাত। অনেকগুলা গাড়ি সে পোড়াইছে। আয় খারাপ হয়নি। আজ সকালে বড় ভাই দেখা করতে বলছে। কি যেন জরুরি কথা আছে। রাজু সকাল সকাল দেখা করলো। বড় ভাই বলল আন্দোলন আরো তীব্র করার জন্য নির্দেশ আসছে। মানুষ মারা যাইতে হবে। না হলে সরকারের টনক নড়বে না। তাই মারার সময় এবার আরো দেখে-শুনে এবং যে বাসে ভিড় বেশি সে বাসে মারতে হবে। যাতে নামতে নামতেই কাজ খতম হয়ে যায়। এই কাজের জন্য বরাদ্দও বেশি দেওয়া হবে। রাজু খুশি। একটা পেট্রোল বোমা মারলেই ৫০০। এখন বলতেছে একটু ভালোভাবে মারতে পারলে বেশি পওিয়া যাবে।বেশ।

রাজু অপেক্ষা করছে সুযোগের। সন্ধ্যার পর নামতে হবে কাজে। আজকে একটু বেশি টাকা পেলে ঘরের জন্য কিছু ভালো-মন্দ ফলমূল কিনতে হবে। রাতুলের সামনে পরীক্ষা। একটু ভালো মন্দ খাওয়া দরকার। অনেক্ষণ অপেক্ষার পর রাজু দেখলো একটা বাস বেশ জোরে আসছে। যাত্রিও ভরপুর। দেরি না করে হাতের পেট্রোল বোমাটা ছুড়ে মারলো বাসের দিকে। মুহূর্তেই বাসটাতে আগুন ধরে গেল। মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে। রাজুর সেদিকে তাকাবার সময় নেই। তাকে পালাতে হবে। না হয় রেহাই নাই। প্রাণপ্রণে ছুটে চলেছে সে। পিছনে কারা ছুটে আসছে। রাজু দৌঁড়াচ্ছে....প্রাণপ্রণে দৌঁড়াচ্ছে। এক সময় নিরাপদ দুরত্বে চলে এল সে। এবার প্রাণে একটু পানি এলো। যাক বাবা এই বাঁচায় বেঁচে গেলাম মনে মনে বলল। কিন্তু মানুষগুলোর জন্য একটু খারাপও লাগছে। কে জানে কতজন লোক মারা গেল। মন খারাপ করে বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করল।বড় ভাই যখন ১০০০ টাকা হাতে দিল সব দুঃখ যেন দূর হয়ে গেল। টাকা নিয়েই ছুটলো। বাসার জন্য কিছু বাজার করলো। আজ কিছু ফলও নিয়েছে। ছোট ভাই রাজুর জন্য ফুটপাত থেকে একটা শার্ট নিয়েছে ৪৫০ টাকা দিয়ে । বেচারা সামনে পরীক্ষ দিবে, মনটা ভালো রাখা দরকার।

বাড়িতে আসার সময় রাস্তার পাশে দোকানে টেলিভিশনের দিকে তাকালো। আজ সে যে গাড়িটা পুড়েছে তা দেখাচ্ছে। ২৯ জনের মত পুড়েছে। ৫ জন মারা গেছে আরো অনেকের অবস্থা আশংকা জনক। রাজু আস্তে আস্তে বাসার দিকে হাঁটতে লাগলো। বাসার কাছে আসতেই দেখে তাদের বাসায় মানুষের ভিড়। বস্তির সবাই তাদের বাসায়। রাজু অবাক হয়। আস্তে আস্তে ঘরের দিকে যায়। সবাই তার দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে। সে কিছু বুঝতে পারছে না। কেউ একজন বলল রাতুল আর নেই।নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। সবাই বলাবলি করছে সন্ধ্যায় কোচিং করে বাসে আসার সময় ঝাউতলা মোড়ে প্রেট্রোল বোমা মারা হয়। রাতুল সে বাসে ছিল। গাড়িতেই পুড়ে মারা যায়। রাজু নিস্তব্দ। আজ ঝাউতলায় বাসে পেট্রোল বোমটা যে সেই মেরেছে!

{এইভাবেই শেষ হয়ে যায় একটি পরিবারের স্বপ্ন। পেট্রোল বোমায় মরে না কোনো এম.পি, মন্ত্রী বা নেতা। মরে শুধু রাতুলের মত মায়ের একমাত্র অবলম্বন গুলো। মরে সাধারন মানুষরা। তাই আসুন আমরা এদের রুখে দাঁড়াই।}
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×