বাংলাদেশের জনগুরুত্বপূর্ন নানাবিধ বিষয় নিয়ে কাজ করে বেলা নামক প্রতিষ্ঠানটি তাদের স্বীকৃতি আদায় করেছে। সেজন্য তাদেরকে আমাদের দেশের কোন পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে কিনা জানি না, তবে বেলার নির্বাহী প্রধানের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মিলেছে ম্যাগসাইসাই পুরষ্কার।
পরিবেশকে ধ্বংস করে চলমান ভূমি খেকোদের অভিযানে কিছুটা হলেও লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয়েছেন বেলা সহ আরো কিছু পরিবেশ আন্দোলনকারী সংগঠন। শুধু তাই নয় জাহাজ শিল্পের নামে অনিরাপদ পরিবেশে শ্রমিকদের এবং বাংলাদের বঙ্গোপসাগরের প্রান প্রকৃতিকে যারা বিষাক্ত করে তুলেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বেলার নির্বাহী প্রধান।
প্রথমত, যে বিষয়গুলোতে তিনি হাত দিয়েছেন এবং যার সমাধানে তিনি প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছেন তার সাথে রাজনীতির বিশেষ করে লুটেরা শ্রেনীর রাজনীতির সম্পর্ক সমন্ধে বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকরা সবাই ওয়াকিবহাল। লুটেরা শ্রেনীর সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এই ধরনের অপকর্মগুলো করে আসছেন বহুদিন থেকে।
তাই বেলার কর্মকান্ডের একটি রাজনৈতিক দিক আছে। যে রাজনীতির পক্ষে তিনি অবশ্যই ব্যাপক মানুষের মোবালাইজেশন করতে পারবেন বলেই আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস।
দ্বিতীয়ত, এই কর্মকান্ডগুলো চালাবার সময় তিনি লুটেরা শ্রেনীকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছেন, যারা বাংলাদেশের লক্ষ মানুষেরও প্রতিপক্ষ বটে। এদেরকে মোকাবেলা ছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যত কল্পনা করা কঠিন।
বাংলাদেশের আইন আদালত এবং মানব বন্ধনের মত অসহিংস কাজ দিয়ে এদেরকে মোকাবেলা করার ব্যাপারে ভিন্নমত থাকতে পারে। তারপরেও বেলার এই প্রয়াস বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের প্রশংসা কুড়িয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।
আমার ব্যক্তিগতভাবে যে দিকটি ভাল লেগেছে যে , বেলার প্রধান নির্বাহী আইনবিদ রিজওয়ানা হাসান নিজ কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে তার জীবনে যে এই ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। শুধু তাই নয় তিনি এই বিপর্যয়ের মুখেও সত্যিকার অপরাধীদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করতেও পিছপা হন নাই। তার এই প্রবল দৃঢ মানসিকতা সাহস যোগাবে বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিককে। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করার দুঃসাহস করব না। প্রথম আলোতে করা নিউজে তার সেই অঙ্গুলি নির্দেশের সাহসিকতার নজির দেখে আমরা সবাই সাহস পেয়েছি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জেলা পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা যদি নারায়ণগঞ্জের টর্চার সেলগুলোতে অভিযান চালান, তাহলে হয়তো ওর খবর পাওয়া যেতে পারে।’ জবাবে জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, ‘আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলগুলো র্যাব অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের চলমান মানবাধিকার লংঘনের বাস্তবতার নিরিখে তিনি আমাদেরকেও বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, এখনও এই দেশে লুটেরা শ্রেনীরা তাদের কতৃত্ব চালাবার জন্য নিজেদের টর্চার সেল তৈরী করে রেখেছে। যেখানে লুটেরা শ্রেনীর বিরুদ্ধে যারা দাঁড়ায় তাদেরকে নির্মম নির্যাতনে স্বীকার হতে হয়।
নারায়নগঞ্জ বাংলাদেশের আইন আদালত এবং আইন শাসনের অনুপস্থিতির নজির হিসেবে প্রায় প্রতিদিনই জাতীয় দৈনিকগুলোর নিউজ কাভারেজের জায়গা হয়ে উঠছে। স্কুল ছাত্র খুন, নিখোঁজ আর গুমের ঘটনা অহরহ। সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য বানাতে সেখানে কাজ করছে সরকার মদদপুষ্ট সকলেই।
নাগরিক জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সেচ্ছাচারীতা এবং ক্ষমতাসীনদের দাম্ভিকতার স্টীম রোলারে নারায়নগঞ্জ এখন মৃত্যুপুরীতে পর্যবসিত হয়েছে। ক্যাপিটাল সিটি থেকে এক ঘন্টার পথের এই দুরত্বে যা হচ্ছে তা কেবল নারায়নগঞ্জের নয় সারা বাংলাদেশের বিভীষিকার কথা মনে করিয়ে দেয়।
নদীতে পাওয়া যায় বেওয়ারিস লাশের মিছিল, অস্বাভাবিকতা পরিনত হচ্ছে নিয়মে। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার আনাগোনা, সারা পৃথিবীতে মানবাধিকার লংঘনের নজিরগুলোর মাঝে বাংলাদেশের নেগেটিভ সূচকের উর্ধ্বমুখী প্রবনতা, নিরাপত্তা বিষয়ক মিনিষ্ট্রগুলোর অপদার্থতা সব কিছু মিলিয়ে মানুষের জীবন হতে চলেছে বিভীষিকাময়।
গনবিস্ফোরন ছাড়া এর মোকাবেলা হয়ত আর অন্য কোন পথে হবে না। রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহার যদি প্রতিনিয়ত অপরাধীকে নিরাপদের রাখার প্রয়াস ছাড়া অন্যকোন কাজে ব্যবহৃত না হয় তাহলে সেই রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগনের সোচ্চার হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:০১