ফরীদির তখন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা। একদিনের কথা, বেইলি রোডে কী কারণে যেন গিয়েছি, হঠাত দেখি ফুটপাতে বসে কে যেন আয়েশ করে চা খাচ্ছে। তাকে ঘিরে রাজ্যের ভিড়। কৌতূহলী হয়ে আমি এগিয়ে গেলাম। ভিড় ঠেলে উঁকি দিলাম, দেখি হুমায়ুন ফরীদি। চা খাচ্ছেন, সিগারেট টানছেন। রাজ্যের মানুষ চোখ বড় বড় করে দৃশ্য দেখছে যেন তাদের জীবন ধন্য। হঠাত ফরীদির আমার ওপর চোখ পড়ল। তিনি লজ্জিত গলায় বললেন, ‘আপনি এখানে কী করেন?’ আমি বললাম, ‘আপনার চা খাওয়া দেখি।’ ফরীদি উঠে এসে আমার হাত ধরে বললেন, ‘আশ্চর্য ব্যাপার। মিতা! আসুন তো আমার সঙ্গে। (নামের মিলের কারণে আমরা একজনকে অন্যজন মিতা সম্বোধন করি) তিনি একটা মনোহারি দোকানে আমাকে নিয়ে গেলেন। সেলসম্যানকে বললেন, ‘আপনার দোকানের সবচেয়ে ভালো কলমটি আমাকে দিন। আমি মিতাকে গিফট করব।’ ফরীদিকে আমি একটি বই উৎসর্গ করেছি।
সন্ধ্যাবেলায় ফরীদি টেলিফোন করেছেন। আমি ফোন ধরতেই বললেন, ‘মিতা, আপনি কি আচার খান? আমের আচার, তেঁতুলের আচার এসব?’
আমি বললাম, ‘খাই।’
ফরীদি বললেন, ‘সন্ধ্যায় আপনার সঙ্গে গল্প করতে আসব। ভাবছি তখন আচার নিয়ে আসব।’ তিনি গল্প করতে এলেন, সঙ্গে আচারের বোতল কোথায়? শেষ পর্যন্ত বলা হল না। আমরা দু’জন দু’জনকে মিতা ডাকি কিন্তু আমাদের মধ্যে তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। গল্প শেষ করার পর ফরীদি বিদায় নিলেন। রাত ১২টার মতো বাজে। দরজায় কলিং বেল। দরজা খুলে দেখি হুমায়ুন ফরীদির ড্রাইভার। তার সঙ্গে তেইশটা আচারের বোতল। তার দায়িত্ব ছিল দোকানে দোকানে ঘুরে যত রকমের আচারের বোতল ছিল সংগ্রহ করে নিয়ে আসা। সংগ্রহ করতে দেরি হয়েছে বলেই সে এত রাতে এসেছে।
..........................................
লেখা- "মিতা- হুমায়ূন আহমেদ"
..........................................
২৯ মে, কিংবদন্তী অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর জন্মদিন।
.....................................
ছবি- মোঃ মিজানুর রহমান
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৩৫