রসায়নে ফেল করে এক বছর গ্রামেই কাটিয়েছি, সময়টাতে অনেক ডিপ্রেশনে থাকতাম। কারণ, যার চোখেই তাকাতাম আমাকে নিয়ে হতাশা ছাড়া কিছু দেখতে পেতামনা। এর মাঝে "রাজন আলম" ভাইয়ের আমেরিকায় মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা নিয়ে ব্লগ পড়ে বিদেশে পড়াশোনার ব্যাপারে আগ্রহ জন্মাতে শুরু করলো। একে একে রাজন আলম, রাগিব হাসান, বিসাগ(জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক ব্লগ), HSA, প্রজন্ম ফোরাম পড়া শুরু করলাম। HSA এর ইউটিউব থেকে রায়হান ভাইয়ের আইইএলটিএস এর সব ভিডিও দেখতে লাগলাম। এসএসসির পর সাইফুর্সে একটা স্পিকিং কোর্স করেছিলাম সেটাকে পুজি করে ইংলিশ প্র্যাক্টিস শুরু করলাম। এসএসসির পর এই প্রথম আমি কোন বিষয়ে সিরিয়াস হলাম। এমনই সিরিয়াস হলাম আমার রসায়ন পড়াই ভুলে গেলাম। জানতাম পাস করে যাবো তাই আর রসায়ন এ গুরুত্ব দিলামনা।
আব্বু আম্মুকে জানালাম দেশে আর পড়বোনা, বিদেশে চলে যাবো। পারিবারিক অর্থনৈতিক দূর্ধষার মধ্যেও তারা রাজি হলেন। আমার রেজাল্টের যে হাল ছিলো তাতে ভালো কোন দেশে পড়তে যাবো সেটা ভাবতেই ভয় লাগতো। তাই কোন দেশে সবচেয়ে সহজে পড়তে যেতে পারবো তা নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। এক বড়ভাই মালেয়শিয়া যাওয়ার পরামর্শ দিলো, ভাবলাম সাইবার সিকিউরিটিতে ডিপ্লোমা করে পরে বিএসসির জন্য ইউরোপে ট্রাই করবো। কিন্তু, আব্বু আম্মু রাজি হলেননা। কারন, তখন মালেয়শিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার নামে প্রচুর হিউম্যান ট্রাফিকিং হতো। আল্টিমেটলি বেশিরভাগেরই পড়াশোনা হতোনা তাই আব্বু আম্মু শর্ত দিলেন পড়লে আমেরিকা কিংবা ইউরোপ যেতে পারলে যাও নাহয় দেশেই থাকো। আমিও ঘাড়ত্যাড়া, তাই ইউরোপের ব্যাপারে খোজ নিতে শুরু করলাম। জার্মানিতে ১৩ বছরের স্টাডি দেখাতে হয়। মানে ইন্টারের পর কোন ইউনিতে এক বছর কমপ্লিট করলে জার্মানিতে ব্যাচেলর আবেদন করা যায়। কিন্তু আমার হাতেত অত টাইম নাই। তাই আমেরিকার যে ইউনি ভার্সিটি গুলা আইইএলটিএস ছাড়া এডমিশন দেয় সেগুলার লিস্ট করা শুরু করলাম। আমার খালি তখন মনে হতো হয়ত আমার লাইফে ম্যাজিকাল কিছু হবে।
এপ্রিলে পরিক্ষা দিয়েই বন্ধু ফরহাদের কাছে ঢাকায় চলে গেলাম। মিরপুরে এক ফ্যামিলি বাসায় সাবলেট উঠালাম, আন্টি খুব ভালো ছিলেন। যতদিন ছিলাম খুব আদরেই রেখেছেন কিন্তু বাসায় একটা পিচ্চি ছিলো খুব জ্বালিয়েছে। যাইহোক বাড়িতে জানালাম ঢাকায় গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স করবো, করা শুরু করলাম কোর্স আর পত্রিকায় ভিবিন্ন এজেন্সির এড দেখে ভিবিন্ন অফিসে যেতাম আর বিদেশে পড়ার ব্যাপারে খোজ নিতাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমি ব্লগ পড়ে যা ইনফরমেশন জানতাম তারা তাও জানতোনা। বেশিরভাগই ফ্রড, কথার কোন ঠিক নাই, সুন্দরী মেয়ে দিয়ে কথা বলাতো এটাই তাদের দক্ষতা। এর মধ্যে একটা এজেন্সির খোজ পেলাম, ওনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। কোন মিথ্যা স্বপ্ন দেখাননি, সব সত্য ইনফরমেশন দিলেন। ব্লগের ইনফরমেশনের সাথে ওনারটা মিলল! উনি ভিসার কোন গ্যারান্টি দেননি। বলেছেন এপ্লাই করতে যা যা করা লাগে উনি করে দিবেন আর আমি সব ফী পে করবো। ভিসা হলে উনি ৫০ হাজার নিবেন, না হলে কিছুই নিবেননা। আমিও রাজি হলাম, আব্বুকে এনে ওনার সাথে কথা বলিয়ে দিলাম আব্বুও কনভিন্স হয়েছেন।
পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো, পাস করলাম এবার শুরু আসল যুদ্ধ। আব্বুকে জানালাম বিদেশেত চেষ্টা করবো কিন্তু যদি না হয় তাহলে একটা বছর নষ্ট হবে তাই আগে প্রাইভেট ইউনিতে ভর্তি হবো। আব্বুও মেনে নিলেন, মোহাম্মদ পুরের এক ইউনিতে ১০০০০ হাজার টাকা দিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হলাম কিন্তু ক্যাম্পাস আর ক্লাস রুম দেখে প্রথম দিনের পর আর ক্লাসে যাইনি। এর মধ্যে বন্ধু জাফর পড়তো গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভারে। এদের ক্যাম্পাসটা অনেক সুন্দর, ক্যাম্পাস দেখেই মুগ্ধ হলাম। ছোট মামাকে বললাম যে গণতে ভর্তি হবো, যাতে আব্বুকে রাজি করায়। আমি যেহেতু মামার কাছে কখনো কিছু চাইনি মামা রাজি হয়ে গেলেন আর প্রথম ভর্তির ৩০ হাজার টাকা মামাই দিলেন। এই ইউনিভার্সিটিতে এসে এক সিনিয়র আপুর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। অন্বেষা, আমার ডিপ্রেশনের সময়টাতে আমরা স্মৃতি সৌধে অনেক সময় কাটিয়েছি। শুধুমাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে হাতে হাত রেখে হেটে বেড়িয়েছি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে। আমার কাগজ পত্র এটেস্টেশনের জন্য যত মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি অন্বেষা আমার সংগী ছিলো। মেয়েটা আমাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছে, ভরসা দিয়েছে। এমনো সময় গেছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু আমরা এখনো ধানমন্ডি। রাত ১১ টায় গিয়ে সাভার পৌঁছেছি আর মেয়েটা নির্দিদ্বায় আমার হাত ধরে রাস্তা পেরিয়েছে।
এর মধ্যে আমার প্রাক্তনের সাথে দূরত্ব তৈরি হতে লাগলো, আফটার অল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের একটা ছেলের সাথে দূরত্ব বজায় রাখাই তার কাছে ভালো মনে হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক্তনের আপুর বিয়ের ডেট ঠিক হলো। যতটুকু সম্পর্ক ছিলো তার দাবিতেই আমাকে দাওয়াত দিলো। সত্যি বলতে তখন ভালো কাপড় পড়ে যে দাওয়াত খেতে যাবো সে কাপড় কেনাটাও বিলাশিতা ছিলো। আমি আমার নবীন বরনে গিয়েছি বন্ধু জাফরের ব্লেজার পড়ে। যাইহোক, তারপরো প্রাক্তনের বোনের বিয়েতে একটা ড্রেসিং টেবিল উদাহরণ দিয়েছিলাম। প্রাক্তনের কাছে আমার বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা অনর্থক মনে হতো তাই তার সাথে শেয়ার করতামনা। লাইফটাই এমন!!! কাছের মানুষ গুলো মাঝে মাঝে আপনার উপর ভরসা করতে পারবেনা.... কিন্তু বহুদুরের কেউ আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে, চিন্তা করোনা ঠিক হয়ে যাবে সব।
এই লেখাটি ভিবিন্ন পর্বে সাজানো হয়েছে। বাকি পর্ব গুলো এখান থেকে পড়তে পারেনঃ
প্রেম, বিয়ে এবং জীবন পর্ব ১ঃ Click This Link
প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব - ২)ঃ Click This Link
প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব -৩) ( স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা)ঃ Click This Link
মিশন আমেরিকার ব্যার্থতা এবং একটি শুভ সূচনা। প্রেম, বিয়ে এবং জীবন। (পর্ব -৪)ঃ Click This Link