শুক্রবার বিকাল ৪:২০ এ ফ্লাইট। এর আগের রাতে বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগিয়েছি। রাতে ভালো মত ঘুমাইতে পারি নাই, শরীর জ্বর জ্বর লাগছে। ২:১৫ এর মধ্যেই এয়ারপোর্টে ঢুকলাম। চেকিন ব্যাগেজের লাইনে অনেক ভিড় ছিল। ইমিগ্রেশন কার্ড পূরণ করে দাড়িয়ে আছি। অনেকক্ষণ লেগে গেল লাগেজ রিসিভ করাতেই। বোর্ডিং পাস নিয়ে আমাদের ইমিগ্রেশনের সিল মেরে আমরা ভিতরে ঢুকলাম। সরাসরি চলে গেলাম ব্রিজে, দেখলাম আমাদের প্লেন যেটা মালদ্বিপ থেকে আসবে সেটা এখনো ল্যান্ড করে নাই। দাড়িয়ে থাকা পসিবল না ভাঙা পা নিয়ে, চলে গেলাম স্কাই লাউন্জে। দিনটা খারাপ আমার জন্য। ওয়েদার ভালো না। কালকে রাতে বৃষ্টি হয়েছে। এখনো আকাশ ঘোলা। শরীরটাও ভালো না। খাবার রুচি নাই..
আমাদের প্লেন ল্যান্ড করেছে। মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্স। এয়ারক্রাফ্ট টাইপ: এয়ারবাস এ৩২১। সিটিং ক্যাপাসিটি: নরমাল: ১৯৪, বিজনেস : মাত্র ৬টা। রেজিস্ট্রেশন: 8Q-IAI প্লেনের বয়স: ১২ বছর! :/ মালদিপ কিনেছে: ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। আমরা গেটে দাড়ালাম।
মেডিফ ফর্ম: আপনি যদি মালদিপ এয়ারলাইন্সে সরাসরি ঢাকা থেকে চেন্নাইতে মেডিকেল ভিসায় যান তাহলে আপনাকে একটা এক্সট্রা মেডিফ ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিতে হবে টিকেট কেনার আগেই। তা না হলে ওরা আপনাকে টিকেট কিনতে দিবে না। আর পেশেন্ট নিজে ওয়ান ওয়ে টিকেট কাটতে পারবে। আর পেশেন্টের সাথে যেই যাক, তার ভিসা যেটাই থাকুক, অবশ্যই তার ভারত থেকে বের হওয়ার রিটার্ণ টিকেট থাকতে হবে, সেটা মালদিপ এয়ারলাইন্সের হোক বা কোলকাতা থেকে বাস/ট্রেনের/এয়ার টিকেট হউক। ঐ মেডিফ ফর্মের কপি আপনি টিকেট কেনার সময় জমা দিবেন আর ওটার অর্জিনাল কপি আপনাকে এয়ারপোর্টে বোর্ডিং পাস নেবার আগে জমা দিতে হবে, ওটা দিয়েই আপনি বোর্ডিং পাস নিবেন।
খাবার: মালদিপ এয়ারলাইন্সে সারা ভারতবর্ষের মতই ভেগ / নন-ভেগ মেন্যু রয়েছে। ননভেগ মেন্যুতে আমাদের দিলো ২ পিস বোনলেস চিকেনের সাথে নুডুলস, একটা ফ্রুট কেক আর চাটনি বড়া সাথে ছিল চা-কফি, এপল / মিক্সড ফ্রুট জ্যুস।
ছয়টা বিজনেস ক্লাস সিটের তিনটায় তিনজন মানুষ। সামনের টায় এক আংকেল বসেছে। তিনি সারা ক্ষনই আইপ্যাড টিপছেন। স্বল্প আলোয় পুরো কেবিনে কবরের স্তব্ধতা! আমরা পর্দা সরিয়ে পিছনে বাঙালিদের সাথে মিশে গেলাম। সাথে সাথেই পুরো ডাইমেনশনটাই চেইন্জ! ভয়ংকর ব্যস্ততা সেখানে, সবাই ওয়াশরুমের লাইনে। আমার টাইটানিক ছবির একটা দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেল। রোজ যখন ফার্স্ট ক্লাস থেকে থার্ড ক্লাসে গেল, তখন অবাক হয়ে গেল! কেউ গোল হয়ে বসে জুয়া খেলছে, কেউবা নাঁচছে!! আনন্দ উৎসবমূখর মেলার মত পরিবেশ। যাইহোক, ল্যান্ডিং এর টাইমে যখন অল্টিচিউড লো করল তখন সিটবেল্ট বাঁধার সাইন জ্বলে উঠল, আমাদেরকেও আমাদের নির্ধারিত সিটে চলে যেতে হল।
আমরা নামলাম চেন্নাই বিমান বন্দরে, গুটি কয়েক লোক যারা মালদ্বিপের রাজধানী মালে যাবে তারা সিটে বসে রইল। বোর্ডিং চ্যানেল আমরা ইমিগ্রেশনের দিকে আগালাম। শুরু হল আরেক এডভেন্চার! চেন্নাই এয়ারপোর্ট যথেষ্ট সুন্দর। এখানে আফ্রিকান কান্ট্রি থেকে আসা প্যাসেন্জারের জন্য মেডিকেল ক্লিয়ারেন্স বাধ্যতামূলক।
এরাইভাল কার্ড পূরণ করে লাইনে দাড়ালাম। অন্যসব ওয়ারপোর্টের মতই এখানে ফ্রী টেলিফোন আছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টেলিফোনের দিকে গেলাম। ওগুলা শুধু লোকাল কল করার জন্যে, ইন্টার ন্যাশনাল কল করা যাবে না। কিন্তু বাসায় জানানো দরকার আমরা ল্যান্ড করেছি। এয়ারপোর্টে অবশ্যই ওয়াইফাই আছে। ঐ ওয়াইফাই অবশ্যই ফ্রী! কিন্তু ইন্ডিয়ান সিম না হলে ওটিপি আসবেনা এবং ওটিপি না আসলে ইন্টারনেটও কানেক্ট হবেনা। আমরা তখনও জানতাম না পরবর্তী ৫ টা দিন আমরা এই সিম না থাকার কারণে প্রবল সমস্যায় পড়ব।
পাসপোর্টে সিল মেরে বাইরে বের হলাম। একটা ডিউটি ফ্রি শপে গেলাম। এখানে ডলারে কেনাবেচা করা যাবে কিন্তু ডলার ভাঙানো প্রয়োজন। ১০০ ডলার = ৬৫৬০ টাকা এই হিসাবে ডলার এনেছি। এয়ারপোর্টে দিতে চাইলো ৫৯০০ রুপি। এখানেই প্রথম গোলমালটা লাগলো। আমার ৭ পর্বের এই লেখায় ফাইনান্সিয়াল গোলমালের কথাই থাকবে সবচেয়ে বেশি!!
এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আমরা রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। রুপি নাই, সিম নাই, প্রিপেইড ট্যাক্সি নাই!!! তারপর কিভাবে আমরা চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক জহির ভাই এর সাথে এ্যাপোলো হাসপাতাল পর্যন্ত গেলাম, তার বিবরণ সামনের পর্বে থাকবে...
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২১