২৭ মার্চ সময় রাত ১০.৩০ মিনিট
কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আজমিরা বিনতে জামাল ও সাধারণ সম্পাদক লিসা চাম্বুগং সুমাইয়ার ব্যাগে শিবিরের বই পত্র ঢুকিয়ে শিবির আখ্যায়িত করে ব্যাপক মারধর করে।মারাত্মক আহত করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাকে রুমে পাঠিয়ে দেয় ওরা। হলের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা তৎক্ষনাৎএর তীব্র প্রতিবাদ জানায়, প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে দুই ছাত্রলীগ নেত্রী প্রভোস্ট এর রুমে আশ্রয় নেয়।
ঘটনার সূত্রপাত "লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা" অনুষ্ঠানের পর থেকে। অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে ছাত্রীরা ব্যাপক লাঞ্ছিত হন, কেউ মাটিতে পড়ে যান।সবাই এক সাথে গাড়ীতে গেলেও সব মেয়েরাই বিশৃঙ্খল হয়ে যাওয়ায় একা একা নিজের মত করে হলে ফেরেন। এর প্রতিবাদে গত রাতে ছাত্রীরা ভিসির বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। তারা রাত ২টা পর্যন্ত অবস্থান করেন, প্রতিবাদ জানান। পরবর্তীতে ভি.সি ও প্রক্টর তাদেরকে বুঝিয়ে সুজিয়ে হলে ফেরত পাঠান।
এই ঘটনার পেছনে নেতৃত্ব দেন কুয়েত মৈত্রী হলের কয়েকটি মেয়ে, সুমাইয়া তাদের মধ্যে একজন।
রাত ১১.০০ টা
ছেলেদের বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কুয়েত মৈত্রী হলের সামনে ভীড় করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হলের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকবার জন্য হম্বিতম্বি করতে থাকে। ছাত্রলীগের নারী হলের নেত্রীরা কিছুক্ষনের মধ্যেই সেখানে হাজির হন। প্রক্টর উপস্থিত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের বাইরে সরিয়ে দেন।
রাত ১১.৩০ টা
হলের ছাত্রীরা ৬দফা দাবী পেশ করেন প্রক্টরের কাছে। ছাত্রলীগের গণরুম বন্ধ করা সহ দুই নেত্রীর ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি তোলেন ছাত্রীরা। কিন্তু প্রক্টর ও হল প্রভোষ্ট বিভিন্ন কৌশলে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালান।একপর্যায়ে তারা আজমিরা ও লিসাকে নিয়ে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন কিন্তু ছাত্রীদের তীব্র বাধার মুখে সে দফা তারা ব্যর্থ হন। তারা নির্যাতিত ছাত্রী সুমাইয়াকে দিয়ে দুই নেত্রীর মুচলেকা পাঠ করান এবং তাকে দিয়ে বলান যেন সবাই বিষয়টি ভুলে যায়। আজমিরা ও লিসা সবার সামনে মারধরের জন্য ক্ষমা চান। এরপরও উত্তেজনা বাড়তে থাকলে প্রক্টর বলেন "যাও তোমাদের হাতে দু্জন কে দিয়ে গেলাম ওদের মার, কিন্তু ছাত্রলীগ হলে এসে যদি কিছু করে আমরা কিছু করতে পারব না"। গুঞ্জন কমে আসে.... সত্যিই তো বাইরে থাকা সোনার ছেলরা কি করতে পারে সে ব্যাপারে শঙ্কা জাগাই স্বাভাবিক।
রাত ১২.০০ টা
প্রক্টর ছাত্রীদেরকে বলেন "ওদের দুজনকে বহিস্কার করা হয়েছে, কুয়েত মৈত্রী হল অনেক সুন্দর হল এসব ঘটনা বাইরে গেলে হলের বদনাম হবে" তিনি কাউকে না জানাতে বলে দেন।
হল প্রভোস্ট ছাত্রীদের শাসিয়ে বলেন এ্খানকার কোন ছবি কিংবা ঘটনা যদি কেউ ফেসবুকে দেয় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে"
আমরা জানি, যে বহিস্কারের কথা কেউ জানবে না সেই বহিস্কার নেত্রীদের মুকুটের নতুন পালক।
আমরা জানি, নারীর জন্য ক্যাম্পাসকে যে চূড়ান্ত অনিরাপদ করে তুলছে যে সংগঠনের অাজ্ঞাবাহীরা, তাদের পক্ষে যে কোন জায়গায় যে কোন নারীকে বর্বর নির্যাতন চালানো সম্ভব। এবং বিচার না হওয়াই স্বাভাবিক ঘটনা।
আমরা জানি, যারা সুমাইয়ারা এগিয়ে না আসলে অনুক্ত কথা গুলো বলা হয়না। এগিয়ে আসা মানুষদেরই নিপীড়ন সহ্য করতে হয় সবচে বেশী। আর নিপীড়নকারীরা কখনো ছাত্রদল, কখনো ছাত্রলীগ কখনোবা শিবির। এদের বিরুদ্ধে একজোট হয়েই দাড়াতে হয়।
আমরা জানি, প্রশাসন কখনো সাধারনের পক্ষে কথা বলবে না। সরকারি আদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রক্টর আর প্রভোস্টরা কথা বলবেন ছাত্রলীগ স্টাইলে। কিন্তু আমরা এক থাকলে সকল বর্বর শক্তিকে মোকাবেলা করা সম্ভব।
আমরা দাবি জানাই ছাত্রী নির্যাতনকারী ছাত্রলীগনেত্রী লিসা ও আজমিরার আইনানুগ শাস্তি দিতে হবে।
পরবর্তীতে এই ঘটনার রেশ ধরে কুয়েত-মৈত্রী হলের কোন ছাত্রী যদি আক্রান্ত হন এর দায়ভার দুই নেত্রীর উপর বর্তাবে।
প্রক্টর প্রভোস্টের দায়দায়িত্বহীন কথাবার্তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। আর অবিলম্বে ২৬ মার্চের ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
চুপচাপ সহ্য করে যাবার দিন শেষ, নারীর বিরুদ্ধে অব্যাহত নিপীড়ন ফেয়ার এন্ড লাভলী নারী দিবস পালন করে আর "আমরা দুঃখিত" টাইপ বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বন্ধ হবেনা। লাঠি হাতে নিপীড়কদের একযোগে ধাওয়া না দিলে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে না। আমাদের এটা পারতেই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:২৪