ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক, সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি
অসাধারণ লেগেছে বান্দরবন বারবার এই গানের লাইনটাই মনে এসেছে এত সুন্দর আমার দেশ আর আমরা গালি দেই কি দেশে জন্মালাম কিছুই নেই ।
প্রথম থেকেই শুরু করি
আমরা ৭ জন বন্ধু মিলে অনেক দিন আগে থেকেই প্লান করে রেখেছি রাঙ্গামাটি যাবো কিন্তু যাবার এক সপ্তাহ আগে বান্দরবন নিয়ে সামুর কিছু পোস্ট দেখে সিদ্ধান্ত দিলাম পরিবর্তন করে রাঙ্গামাটি নয় আমরা যাবো বান্দরবন ।সবাইকে বললাম সবাই রাজি হলো । এবার রওয়ানা দেবার পালা
কুমিল্লা হতে চট্রগ্রাম রাতের ট্রেন ২.৩০ মিনিটে কিন্তু বেরসিক ট্রেন আসলো ৪ টায় এই সময় বসে বসে তাস খেলে সময় কাটালাম ।
সকাল সাড়ে সাতটায় পৌছলাম চট্রগ্রাম স্টেশনে তারপর খরচ বাচাতে সিএনজি না নিয়ে মিনিবাস দিয়ে সরাসরি বদ্দারহাট বাস টার্মিনালে ।
বান্দরবন যাবার ভালো কোন বাস দেখলাম না সবই ভাংগা চুড়া বাধ্য হয়ে বাস সার্ভিস পূবার্ণীতে উঠে পড়লাম ভাড়া নিলো পার মাথা ৭০ টাকা করে । যেতে যেতে লাগলো প্রায় আড়াই ঘন্টার মতো ।সাড়ে বারোটার মাঝেই হোটেল পেয়ে গেলাম এখন যেহেতু অফ সিজন তাই হোটেল ভাড়াও অনেক কম ৩ রুমের এক বিশাল হোটেল পেলাম ভাড়া মাত্ত ৮০০ টাকা নিলো ।আসলে এটা হোটেল না বলে বাসাই বলা যায় কারণ হলো এটা আগে বাসা ছিলো পরে হোটেল বানিয়েছে ।
সবাই তাড়াতাড়ি করে গোসল করে ঝটপট প্রস্তুতি নিয়ে খাবার খেতে তাজিংডং হোটেলে গেলাম সস্তায় খাবার খেয়ে বের হলাম গাড়ীর খুজে আমরা ঠিক করলাম আজকে কিছু জায়গায় যাবো আর কালকে বাকীগুলো দেখবো ।
যেহেতু আগেই সামুর পোস্ট হতে অনেক কিছু জেনেছি তাই সরাসরি জিপ গাড়ী ভাড়া করার জন্য গেলাম । গাড়ীওয়ালা দুই দিনের জন্য ৩৮০০ টাকা চায় সবাই দেখলাম এক জোট ভাড়া কমাবে না অবশেষে বাধ্য হয়ে ঠিক করলাম আমরা সবতো তেদড় তাই সব গাড়ীর ছাদের উপরে উঠে গেলাম এত উল্টাপাল্টা রাস্তা তার উপর আমরা সব গাড়ীর উপরে অসাধারন লাগলো ।আপনাদের তথ্যের জন্য বলছি বান্দরবনে ঘুরতে গেলে জিপ গাড়ী ভাড়া করা লাগে না হয় ঘুরতে পারবেন না দুই ধরনের জিপ গাড়ী পাবেন একধরনের হলো উপরের ছাদ খোলা আরেকধরনের হলো ছাদ বন্ধ ।মজা করতে চাইলে ছাদ খোলা জিপ গাড়ী ভাড়া নিবেন আর ফ্যামেলি নিয়ে গেলে ছাদ বন্ধ ওয়ালা গাড়ী সাধারণত একদিনেই ঘুরে আসা যায় আর এজণ্য আপনাকে ৩০০০ টাকার মতো দিতে হবে ।
ড্রাইভার আমাদের নিয়ে গেলো
নীলাচল অসাধারণ লাগলো এত উচুতে পুরো শহর দেখা যাচ্ছে কিছুক্ষনের জন্য বাকরুদ্দ হয়ে গেলাম ওয়াও ওয়াও ........
ওখানে গাড়ী রাখার জন্য দিতে হলো ৫০ টাকা ।কিছুক্ষণ ছবি উঠানোর পর চলে আসলাম মেঘলাম ।মেঘলা হলো পার্কের মতো একটা জায়গা এর ভিতরে লেক আছে লেকের উপরে দুটো অসাধারণ ঝুলন্ত সেতু আছে সেতু তার নিচে লেক দেখে আর স্হির থাকতে পারলাম না আন্ডারওয়্যার রেখে প্যান্ট গেন্জি খোলে সবাই একসাথে সেতু থেকে লাফ দিয়ে পানিতে ।
এবার সরাসরি চলে গেলাম বৌদ্ধ মন্দিরে ।
মন্দিরটা খূবই সুন্দর কিছুক্ষণ ওখানে সময় কাটিয়ে একটা পাহাড়ের অনেক চূড়ায় উঠলাম সুযাস্ত দেখার জন্য কিন্তু সূর্যই খুজে পেলাম না তাই সন্ধ্যার দিকে গাড়ী বিদায় দিয়ে হোটেলে ফেরত আসলাম ।
হোটেলেই অনেক রাত পযর্ন্ত গলা খোলে গান গাইলাম তারপর ঘুম.............
২য় দিন খুব ভোরে নাস্তা করে সব কিছু নিয়ে হোটেল থেকে লগআউট করে সব গাড়ীতে উঠলাম উদ্দেশ্য শৈলপ্রপাত চিম্বুক নিলগীরি হয়ে রুমাতে যাবার ।আপনারা যারা বগালেক যাবেন তারা এই কাজটি করবেন গাড়ীওয়ালাকে আগেই বলবেন যে সবকিছু দেখানোর পর যেন রুমা বাজার আপনারদেরকে নামিয়ে দিয়ে আসে না হয় পরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রুমা যেতে হবে ।
শৈলপ্রপাত ঝরনার মতো একটা জায়গা শৈলপ্রপাত হয়ে গেলাম নীলগীরি ।নীলগিরি এক কথায় যদি বলি অসাধারন ,উচুতে উঠে চারদিকে তাকালে যা দেখা যায় তার কোন তুলনা নেই ।
নীলগিরিতে যে ব্যাপারটা সবচেয়ে কঠিন লেগেছে তা হলো আমি উচুতে দাড়িয়ে আছে অনেক দুরে আমার চোখের সামনে দেখলাম একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে আর চারপাশে রোদ এই দৃশ্য দেখে কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে গেলাম ।নিচের ছবিতে দেখুন
নিলগিরি পর্ব শেষ করে চিম্বুক দেখলাম তারপর সরাসরি গাড়ী আমাদেরকে নিয়ে গেলো রুমাতে, উদ্দেশ্য রুমা বাজার হয়ে বগালেক + কেওক্রাডাং ।
রুমাতে গিয়ে নৌকা করে সাংগু নদী দিয়ে গেলাম রুমা বাজার যেতে ৪৫ মিনিটের মতো লাগে আমরা গেলাম নৌকার ছাদে করে পার মাথা ৩০ টাকা করে নিলো রিজার্ভ নিলে ৮০০ টাকা নেয়। রিজার্ভ নেবার দরকার নেই কারণ প্রতি ৩০ মিনিট পর পর নৌকা যায় ।
রুমা বাজার নেমে হোটেল খুজতে লাগলাম পেয়েও গেলাম একখান ৪৫০ টাকা নিলো এক রুম ৩ বেড আমরা ৭ জনের জন্য যথেষ্ট ।যদিও আরও দামী হোটেল আছে কিন্তু আমরা ঘুরতে গেছি বিলাসীতা নয় তারউপরও যতটা টাকা বাচানো যায় ততই ভালো ।
এবার টার্গেট বগালেক হয়ে কেওক্রাডাং । বগালেক যেতে হলে অবশ্যই টুরিষ্ট গাইড নিয়ে যেতে হয়, না হয় আর্মি যেতে দেয়না ।আমরা রাতেই রুমা বাজারে গিয়ে টুরিষ্ট গাইড খুজলাম এবং কাল সকাল ৭ টার মধ্যেই আসার জণ্য বললাম ।টুরিষ্ট গাইডকে প্রতিদিনের জন্য ৩০০ টাকা করে দিতে হয় যদিও আমাদেরকে বললো ৪০০ টাকা করে দিতে হয় পরে জেনেছি যে ৩০০ টাকা করে আমাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে বেশি নিয়েছে । যদি আপনাদের কাছে বেশি চায় তাহলে বাজারের সাথে আর্মি ক্যাম্পে চলে যান দেখবেন আর্মি কি করে ।
বগালেক দুই ভাবে যাওয়া যায় চান্দের গাড়িতে ১১ কিমি তারপর ২ ঘন্টা হাটতে হয় অথবা ঝিরিপথ [বনের মধ্য দিয়ে ঝরনার ফলে যে রাস্তা তৈরী হয়েছে] দিয়ে সাড়ে পাচ ঘন্টা হাটতে হয় ।আমরা ঠিক করলাম চান্দের গাড়িতে যাবো তবে আসার পথে ঝিরিপথে আসবো ।
সকালে গাইড নিয়ে রওয়ানা দিলাম চান্দের গাড়িতে ছোট এক গাড়িতে ২৮ জন লোক আমরা স্বভাবমতো ছাদেই উঠলাম পার মাথা ৫০ টাকা ভাড়া তবে রিজার্ভ ১৪০০ টাকা নেয়।
খুবই ঝুকিপূর্ন রাস্তা দেখলে মনে হয় মূর্ত্যুর হাতছানি এই গাড়ি কি করে এই রাস্তা উঠে এখনো মাথা ধরেনা মিথ্যা কথা বলবো না আমি গাড়ীতে উঠেই মনে মনে বলা শূরু করে দিয়েছি যে আল্লাহ এইবার রক্ষা করো নামাজ কালাম সব ঠিক করে পড়বো ।পথে পুলিশের কাছে নাম ধাম সব দিতে হলো কারন যদি মারা যাই লাশ যেনো বাড়ীতে পৌছে ।
১১ কিমি যাবার পর হাটা শুরু করলাম ২ ঘন্টা পাহাড় পাড়ি দিয়ে পৌছলাম বগালেক [সমুদ্রপৃস্ট হতে ১২৫০ ফুট উপরে লেক যদিও অনেক বইয়ে ২৭০০ ফুট লেখা আছে কিন্তু ২৭০০ ফুট তথ্যটা ভুল]
সেনাবাহিনীর কাছে নাম ধাম বন্ধক রেখে একটা কটেজে উঠলাম পার মাথা ১০০ করে আর খাওয়া খরচ ।
দুপুরে খাবার পর বিশ্রাম না নিয়েই ক্লান্ত শরীরে কেওক্রাডাও এর উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম সাড়ে সাত ঘন্টা লাগলো কেওক্রাডাং ঘুরে আসতে রাস্তায় কিছু ঝরনা পাবেন অসাধারণ ।
রাতে গানের আসর +ফাজলামি করার পর দিলাম ঘুম সকালে উঠেই কুমিল্লা যেতে হবে যে ।
এবার শুরু আসল এ্যাডভান্ঝর ।ঝিরি পর দিয়ে সাড়ে পাচ ঘন্টা হাটা ।সেনাবাহিনী হতে বিদায় নিয়ে আল্লার নামে দিলাম হাটা হাতে একটা লাঠি যেনো পিছলে না যাই আর ১০০ কলা ব্যাগে নিয়ে । অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ ঝিরি পথ যে কত সুন্দর তা কল্পনা করতে পারবেন না ঝরনার পানি যাচ্ছে বড় বড় পাথর এগুলোর উপরে দিয়ে হেটে চলছি চারদিকে বন আর বন বড় বড় গাছ রাস্তাগুলো দৃগর্ম, আমরা কি বলবো সাড়ে সাচ ঘন্টা হাটার পরও কাল্তি আসেনি বরং মনে হয়েছে রাস্তাটা আরেকটু লম্বা হলে ভালো হতো ।ঝিরিপথে একটা বড় ঝরনা পাবেন এতে অবশ্য ই গোসল করবেন ।আমাদের টুরিষ্ট গাইডটা ছিলো খুবই ভালো আমাদের জন্য একটু পর পর পেপে কলা পেয়ারা নিয়ে আসতো ।ঝিরি পথে রওয়ানা দেবার আগে প্রায় ১০০ টা পাহাড়ী কলা কিনে নিয়েছিলাম মাত্ত ৬০ টাকায় পুরো রাস্তায় কলা খেতে খেতে এসেছি।
ঝিরি পথের কিছু ছবি
এক কথায়.....................
আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর হলো বান্দরবন
নিরাপত্তা নিয়ে একটু ও ভাববেন না সেনাবাহিনী এত একটিভ যে ভাবার দরকার হবেনা
কোন মেয়ে একলা গেলেও সমস্যা নেই কারণ ওখানকার সবাই জানে যদি টুরিষ্টের গায়ে একটু আছড় পড়ে তাহলে সেনাবাহনী গুল্লি করে দিবে ।আপনার নুন্যতম কিছু হলে টুরিষ্ট গাইডের খবর করে দিবে ।টুরিষ্ট গাইড আমাদেরকে যেটা বলবো যে এখানে যদি কোন টুরিষ্টের কোন ক্ষতি হয় তাহলে আর্মির মাইর মাফ নাই তাই টুরিষ্টরা সবসময় নিরাপদ ।স্যালুট আর্মি ভাইদের
আমরা একদিনেই বগালেক আর কেওক্রাডাং ঘুরে এসেছি যা ৯৯.৯৯% পারেনা কারণ এত হাটা অধিকাংশদেরই পক্ষে সম্ভব নয় তাই বগালেক এ অধিকাংশরাই ২ রাত থাকে আমরা যেখানে থেকেছি এক রাত ।
রুমা বাজার হতে অবশ্যই ঝিরি পথে যাবেন নতুবা আসার সময় আসবেন ।ঝিরি পথ দিয়ে না গেলে অনেক বড় কিছু দেখা হতে বন্ঞিত হবেন ।কখন যে সময় কাটবে তা টেরই পাবেন না ।
আমাদের গাইডটা ছিলো খুবই ভালো নাম বেলাল রুমা বাজারে গিয়ে নাম বললেই হবে ।
অবশ্যই যাবেন বান্দরবন খুব সুন্দর ট্যুর দিয়ে আসলাম তবে আবারও যেতে হবে কারণ পুরোটা ঘুরা হয়নি পরের বার গেলে তাজিংডং+চাপাহাফং চুড়াতে +তিন্দু +ঝিরিপথে যাবার সময় মধ্যপথে একটা লেক নাকি আছে যার চারদিকে ঝরনা পড়ে এই জায়গা গুলো অবশ্যই যাবো ।
আমাদের মোট (ব্যক্তিগত খরচ ছাড়া)২৫০০ টাকা করে খরচ হয়েছে ।সবাই ভালো থাকবেন আর হ্যা বিদেশ দেখার আগে আমাদের দেশটা দেখুন ।
অবশেষে বিদায় যাবার আগে বলুনতো ছবিটা কেমন হয়েছে
মন্দিরের কাছ থেকে এন ৭৩ দিয়ে উঠিয়েছি
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:০২