somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেটামরফোসিসঃ পরাবাস্তবতার সন্ধানে

৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাঁর সাহিত্যর দুর্বোধ্যতা, হতাশাবাদিতা এবং বাস্তবতা বিবর্জিত কাহিনীচিত্রের জন্য “ফ্রাঞ্জ কাফকা” বিশ্বসাহিত্যর একটি আলোচিত নাম। সাহিত্য সমালোচকেরা তাঁর সাহিত্যকর্মের ধোঁয়াশা চিত্র এবং দুর্বোধ্যতার জন্য তাঁর রচনাকে অস্থিত্তবাদী, অ্যাবসার্ড সহ বিভিন্ন অভিধায় অভিহিত করেছেন। মূলত কাফকার গল্পের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি পাঠকের কাছ থেকে অত্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক মনোযোগ দাবী করে তা গল্পগুলো পড়লেই বোঝা যায়।

প্রাগের এক সচ্ছল ইহুদি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৮৮৩ সালে কাফকা জন্মগ্রহণ করেন। প্রাগের জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের পাঠ সমাপ্ত করেন ১৯০৬ সালে এবং একটি বীমা কোম্পানিতে কয়েক বছর চাকরী করেন। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। পরবর্তীতে জীবনের অনিশ্চয়তা, ক্ষুধা এবং দারিদ্রপীড়িত হয়ে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে এক প্রতিভাময়ী ইহুদি অভিনেত্রী “ডোরা ডাইমান্ট” এর সাথে পরিচয় হবার সুবাদে তিনি এই বোধ কাটিয়ে উঠেছিলেন। প্রাগ ত্যাগ করে তিনি তাঁর স্ত্রী কে নিয়ে বার্লিনে বসবাস করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সময়ের দুরারোগ্য ব্যাধি যক্ষ্মায় অসহ্য কষ্ট এবং যন্ত্রণা ভোগের পড়ে মাত্র ৪১ বছর বয়সে ১৯২৪ সালের মাঝামাঝি প্রতিভাবান এই লেখক মৃত্যুবরণ করেন।







এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে তিনটি বিখ্যাত উপন্যাস ( দি ট্রায়াল, দি কাসল এবং আমেরিকা) ছাড়াও অত্যন্ত উচ্চমানের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ কিছু ছোটগল্প রচনা করেছেন। তবে বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে কাফকার নামের সাথে যে গল্পের (মূলত উপন্যাসিকা) নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে তা হলো – “মেটামরফোসিস” বা “রূপান্তর”। কোন কোন বিদগ্ধ সমালোচক এই গল্পের প্রথম বাক্যটিকে বর্ণনা করেছেন আধুনিক বিশ্ব সাহিত্যর সবচাইতে চমক সৃষ্টি করা বাক্য হিসেবেঃ

“নানা আজেবাজে স্বপ্ন দেখার পর একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে গ্রেগর সামসা দেখলো সে এক বিশাল পতঙ্গে রুপান্তরিত হয়ে তার বিছানায় শুয়ে আছে।“

গল্পের নায়ক গ্রেগর সামসা একজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কর্মী। মধ্যবিত্ত পরিবারে সে তার বাবা-মা এবং তরুণী ছোট বোনকে নিয়ে থাকে। সংসারের সব দায়িত্ব তার হাতে। কঠিন জীবনযুদ্ধ, একঘেয়ে নিরানন্দ কাজ, দুশ্চিন্তা এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদাসীনতা শর্তেও গ্রেগরের একটি লুকায়িত গর্ববোধ রয়েছে কেননা সেই সংসারটা চালাচ্ছে। ছোটবোনকে সে অসম্ভব ভালবাসে এবং তাকে সঙ্গীতবিদ হবার সুযোগ করে দিতে সে বদ্ধপরিকর। অপ্রত্যাশিত বাক্যটি দিয়ে গল্পটি শুরু হবার পড়েই পাঠকের চোখে গল্পের অগ্রগতির সাথে সাথে এই বিষয়গুলো ধরা পড়বে।

গ্রেগর সামসা প্রথমে ভেবেছিল পতঙ্গে রূপান্তরিত হবার ব্যাপারটা হয়তোবা তার “স্বপ্নের সম্প্রসারণ”। কিন্তু না, গ্রেগর আসলেই বড় একটি আরশোলায় পরিনত হয়। এই সময় লেখক গ্রেগরের যে বর্ণনা দিয়েছেন ঃ আরশোলায় রুপান্তরের পড়ে গ্রেগরের কি কি পরিবর্তন হয়েছিলো, কিভাবে সে তার অঙ্গপ্রতঙ্গ নাড়াচাড়া করবার কৌশল রপ্ত করলো- তার উজ্জ্বল বর্ণনা এক কথায় বিস্ময়কর, অসাধারণ।

আরশোলায় রূপান্তরের পড়ে গ্রেগর তার চেনা জগত থেকে এক সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার বাবার এবং বোনের আচরন দিনে দিনে তাকে হতাশাতে নিমজ্জিত করে। গ্রেগরের ট্র্যাজিক অবস্থার উজ্জ্বল চিত্র ফুটে উঠে তার আদরের ছোটবোনের আচরন এবং দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দিয়ে। তার করুন পরিনতি ফুটে উঠে গল্পের শেষ বাক্যটির মধ্যে দিয়েঃ

“......তার মাথা আপনা থেকেই মেঝের উপর লুটিয়ে পড়লো আর তার নাক থেকে নির্গত হলো তার শেষ নিঃশ্বাসের মৃদু মন্থর বায়ু”।

গল্পটি এক পর্যায়ে হয়তো অবিশ্বাস্য; কারন কোন মানুষই বাস্তবে আরশোলাতে রূপান্তরিত হতে পারে না! মানুষের হতাশা, কষ্ট, দুর্দশার এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটে উঠেছে নায়ক গ্রেগরের মাধ্যমে। পতঙ্গে রূপান্তরিত গ্রেগরের প্রাত্যহিক জীবনের হতাশা তাই পাঠককে মুহূর্তেই নিয়ে যায় পরাবাস্তবতার জগতে।

“কাফকার গল্পসমগ্র” অনেক আগেই সংগ্রহে ছিল।“মেটামরফোসিস” এর নাম অনেক শুনলেও আগে এই গল্পটি পড়া হয়ে উঠেনি। যারা এখনও পড়েননি তারা পড়ে ফেলতে পারেন। এক ভিন্ন রকম পরাবাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন এটুকু বলতে পারি।

৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×