এই চার্চেই অক্টোবরের ২৭ তারিখে দ্য ভিঞ্চির মাস্টারপীস "দ্য লাস্ট সাপার" বিশাল স্ক্রীনে দেখানো হয়। কর্তৃপক্ষ এই ছবিটির ১৬ বিলিয়ন পিক্সেলের ইমেজটি অনলাইনে প্রকাশ করেছে। এর ফলে সাধারন দর্শকরা ছবিটিকে আরো নিখুঁতভাবে দেখতে পাবেন, এমনকি ভিঞ্চি ম্যুরালটি তৈরি করার পূর্বে যে ড্রয়িং করেছিলেন তার ছাপও দেখতে পাওয়া যাবে। ১৬ বিলিয়ন পিক্সেলের এই ছবিটি কিন্তু একটি বিশ্বরেকর্ড। ১০ মিলিয়ন পিক্সেলের একটি ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে তোলা যে কোন ফটোগ্রাফের তুলনায় এটি ১৬০০ গুন বেশি শক্তিশালী। আশা করা হচ্ছে কয়েক বিলিয়ন দর্শক এই ছবিটা অনলাইনে দেখবেন।
সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে "দ্য লাস্ট সাপার" অন্যতম। মূল ছবিটি ভিঞ্চি একেঁছিলেন সান্তা মারিয়া ডেল্লি গ্রেজি চার্চের ডাইনিং হলের পেছনের দেয়ালে, ১৪৯৫ হতে ১৪৯৭ সালের মধ্যে। ইতালিতে এটি পরিচিত Cenacolo II নামে। ভিঞ্চির বিখ্যাত এই ছবিতে ক্রুসবিদ্ধ হবার পূর্ব রাত্রিতে অনুসারীদের নিয়ে যীশু'র জীবনের শেষ খাবার খেতে বসার মুহূর্তটি দেখানো হয়েছে। এর ঠিক পরের মুহূর্তেই যীশু তার অনুসারীদের কাছে নাটকীয়ভাবে ঘোষণা করেন “One of you shall betray me.”
পেসসি দাবি করেন তিনি ছবিটির মধ্যে একটি নতুন লুকানো নারীমূর্তি দেখতে পেয়েছেন। তার ভাষ্য মতে, তিনি যখন ভিঞ্চির মূল ছবিটির একটি বিপরীত প্রায় স্বচ্ছ ছবি তৈরি করে একটি অপরটির উপরে বসান তখন যীশুর কাছে এক হাতে সন্তান ও অপর হাতে পাত্র নিয়ে এক নারীমূর্তি দেখতে পান।
অনেক চিত্র সমালোচক এর সমালোচনা করলেও পেসসির এই আবিস্কার মানুষের মধ্যে প্রচন্ড কৌতুহল সৃষ্টি করেছে, ১৫ শতাব্দীর এই ম্যুরালটি দেখার জন্য খোঁজাখুজি শুরু হয়েছে অনলাইনে, এর ফলে ক্রাশ করেছে কয়েকটি ওয়েবসাইট।
যুক্তিবাদীরা পেসসির এই আবিস্কারের সাথে আমেরিকান লেখক ড্যান ব্রাউনের সর্বাধিক বিক্রীত বিখ্যাত উপন্যাস "দ্য ভিঞ্চি কোড" এর যুক্তির সাথে মিল খুঁজে পেয়েছেন। "দ্য ভিঞ্চি কোড" এই উপন্যাসটি নিয়ে এরই মধ্যে একটি ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। ড্যান ব্রাউনের মতে ম্যুরালে যীশুর ঠিক ডানপাশের পুরুষটি আসলে মেরী ম্যাগদালিন। বলা হয়েছে যীশু তার অনুসারী মেরী ম্যাগদালিনকে বিয়ে করেছেন এবং তাদের একটি সন্তানও রয়েছে আর তাছাড়া যীশুর রক্তধারা এখনো প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু তৎকালীন ক্যাথলিক চার্চগুলো বিয়ের এ খবর চেপে যায়।
কিন্তু কথা হচ্ছে প্রাচীন কোন লেখাতেই কিন্তু যীশুর বিয়ে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। Luke 8:1-3 এ বলা হয়েছে যীশুর সাথে থাকতেন তিন জন নারী - মেরী, জোয়ান্না ও সুসান্না; কিন্তু তাই বলে যীশু ও মেরীর মধ্যে কোন রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল তা ভাববার কোন কারনই ঘটেনি। আবার তথাকথিত Gospel of Philip থেকে জানা যায় যীশু মেরীকে চুমু খেয়েছিলেন। তবে এটিকে শক্ত কোন প্রমাণ বলা যাবে না কারণ Gospel of Philip লেখা হয়েছিল যীশুর সময়ের প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় পরে। তাছাড়া এ চুমু তো হতে পারে হাতে বা ঘাড়ে বন্ধুতার নিদর্শন হিসেবে। লেখার সে অংশ পড়া না যাওয়ায় যীশু চুমু কোথায় খেয়েছিলেন তা অজানা রয়েছে এখনো। তাছাড়া চরম সন্দেহজনক এই লেখাটিতেও কিন্তু তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছে এমনটি দাবী করা হয়নি।
বিতর্কের সূত্রপাত তো হয়ে গেছে এখন অবসান কবে হবে তাই দেখার বিষয়।
অনেক কথা বললাম। যাই হোক, দ্য ভিঞ্চি কোড মুভিটি আমার এখনো দেখা হয়ে ওঠেনি, দেখি দু-এক দিনের মধ্যে বায়তুল মোকাররমে হানা দেব এর ডিভিডি'র খোঁজে। আরেকটা তথ্য, বর্তমানে ড্যান ব্রাউনের Angels And Demons অবলম্বনে "দ্য ভিঞ্চি কোড" এর প্রিক্যুয়েল তৈরির কাজ চলছে, এটি মুক্তি পাবে ২০০৮ এর ডিসেম্বর মাসে।
১৬ বিলিয়ন পিক্সেলের ছবিটি দেখতে চাইলে নীচের লিংকে ক্লিক করুন।
Click This Link