প্রিয় অগ্রসর তরুণ প্রজন্ম,
তোমরা যারা ডিজিটাল যুগের অগ্রসর সমাজের প্রতিনিধি তাদের উদ্দেশ্যে দু'লাইন লিখছি। যুগের সাথে খাপ খাইয়ে ওঠতে অনেক কিছু আস্তাকুঁড়ে ফেলতে হয়। সেটা কেবলই যুগের দাবি, চেতনার চালবাজি নয়। অনেকসময় এ সহজ কথাটাই বুঝতে বেগ পেতে হয়। হয়তো এরজন্য আমাদের তোমরা ব্যাকডেটেড বলে ব্লকের খাতায় ফেলে দাও। এই যেমন,আমরা একসময় সিনিয়রদের দেখলে সালাম - আদাব দিতাম। এখন তোমার সিনিয়রদের আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সমীহ করে 'হ্যাই ব্লো' বা ইইও ইইও বলো। আমাদের শিক্ষাগুরুদেরকে শ্রদ্ধাভরে দেবতার আসনে রাখতাম। তোমার সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বের হয়ে। শিক্ষকদের দাসত্ব শৃঙ্খলে পিষ্ট না করে ভালোবেসে ক্যাসিনোর আসনের পার্টনার হিসাবে রাখো। কত সহজ সমাধান হিসাবে, তোমাদের পরীক্ষার খাতাটি লেখার দায়িত্ব স্বয়ং শিক্ষকেই দিয়ে দাও। আমরা যখন কিশোরের এ্যাডিকশনে দুরন্তপনায় নদী পুকুর ও ডোবায় ডুব দিতাম। আর তোমরা এখন এডভান্স এ্যাকশন বিশেষজ্ঞরা ডিভাইসের রাজ্যে কখনোবা নীল তিমি, কখনো বা পাবজির জগতের কৌশলি ডুবুরি হও।
হে অ্যাপস পারদর্শীরা
আমরা আগডুম - বাগডুম করে যেতাম এ বাড়ি ও বাড়ি।কখনো বন্ধুদের সাথে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে যেতাম এপাড়- ওপার হাঁটে, মাঠে -ঘাঠে। আম খুঁড়ানির সুখ খুঁজতে খালি পায়ে ভোঁ দৌড়ে যেতাম নানাবাড়ি ,বড়বাড়ি, মামাবাড়ি, খালা বাড়ি । আর তোমার বুকের পাঁজরে ইমারত ভেঙ্গে গড়ে তুলো শিতলপাটি। এ বিশ্বজুড়েই তোমাদের অভিন্ন বসতবাড়ি। তাই'তো ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুক, টিকটিকে চলে গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সংযুক্তি। আর সত্য মিথ্যা যাইহোক মুহুর্তের মধ্যে অ্যাপস থেকে ঢেলে দাও প্রতিবেদনে- প্রতিবাদের মহড়া। তোমরা বজ্র কন্ঠে বলো, পুরাতন আইনের অস্বস্তিকর শাসন নয়, বরং অ্যাপসের শৃঙ্খলাই নতুনত্ব।
হে সভ্যতার সন্তানের,
আমরা কেউ একজন কাউকে সামান্য কটুক্তি করলে প্রতিবাদ করতাম। তোমার কে ভুক্তভোগী আর কে ভূস্বামী তার তোয়াক্কা করো না। আমরা কেউ কাউকে প্রাণে মারা তো দূরের কথা নেহাৎ কঠিন স্বরে কথা বললে, প্রাণভোমরা ঘাবড়ে যেতো। আমরা বুঝতে পারতাম না নিজে বাঁচাই আসল বাঁচা। তোমাদের কাছে কে বাঁচলো আর কে মরলো তার কোন যৌক্তিকতা নেই। আমরা একজন অন্যায় করলে তাকে তিরস্কার করতাম। তোমরা কালক্ষেপণ না করেই, একটু পান থেকে চুন খসলে তোমরা সহজেই যে কাউকে কেটেকুটে রেঁধে ফেলতে পারো। হোক সেটা সাম্প্রদায়িক উস্কানি,হোক গুণীজন ও রাষ্ট্রের মত পথের আলোচনা -সমালোচনা। এমনকি কাউকে চোখের সামনে কোপাতে দেখলে কোন কর্নপাত করোনা। আর কেনইবা অযথা সময় নষ্ট করবে ! আসলেই কারো কোন কিছুতে নাক গলানো সভ্যতার সংজ্ঞায় যে পরে না।
হে সময়ের সন্তানেরা,
সময় তোমাদের কাছে বড্ড স্থির। ঘরের কথা পরে কেন জানবে? তাই আমরা নিজদের বিভিন্ন সমস্যা নিজের কাছেই গোপন রাখতাম। পারিবারিক অনুষ্ঠান,সামাজিক টানাপোড়ন, অসংশোধনীয় বন্ধুর পথ, সিক্রেট মতামত, শারীরবৃত্তীয় কসরত সবগুলোতে আমাদের 'প্রাইভেসি' র অটল পাহাড় চূড়ায় রাখতাম ।তোমরা এসব চুলোয় পুড়ে, কখন কি রাঁধলে, কে কোথায় হাগু দিলো, বাথরুমে নৃত্য করলে, বাঁচার সূত্র, মলমূত্রত্যাগ সবকিছু লাইভে এসে শেয়ার করাকে "প্রগ্রেসিভ" সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবেই প্রাধান্য দাও । এটাও আমাদের জানার ও বুঝার ঘাটতি। আমরা প্রায়ই অলসতায় নিমজ্জিত থেকে রাতে ঘুমাতাম। বড্ড সময় সচেতন তোমরা ২৪/৭ সপ্তাহের সাতদিন ও চব্বিশ ঘণ্টা লেগে থাকো যন্ত্রচালিত মিশনের সাথে। তাইতো সহজেই পেয়ে যাও তারকা খ্যাতি। চারিদিকে জয়জয়কার। হয়ে যাও শারিরীক ও মানসিকভাবো স্মার্ট ও মর্ডান।
তাই আমরা ডিজিটাল যন্ত্রণা কি সেটা এতটুকু অনুভব করতে পারিনা?
জীবনের মূল্যবান সময় যন্ত্রের ঘোরে লেগে থাকা পরিণতি কি তাও জানিনা?
হে প্রযুক্তির সন্তানেরা,
বড়ই বেদনাহত হই যখন দেখি প্রযুক্তির এ সুসময়ে তোমাদের দিনের সূচনা হয় প্রযুক্তির কোপা ঘাতে জর্জরিত মানবদেহের পতনের দৃশ্য চিত্রায়ন দেখে।
যখন দেখি ভার্চুয়াল জগতের কুশীলবরা রিয়্যালিটি কি তা বুঝতে পারে না?
ষখন দেখি সম্মান আর সম্পদের পিছনে ছুটতে ছুটতে সম্ভ্রম আর সম্পর্কে মরুফাটল চোখে পড়ে না ?
প্রযুক্তি তবে কে মিথ্যাবুলির ঝুলিতে অবৈধকে বৈধতায় রুপান্তরিত করার এক কৌশল ?
প্রযুক্তি তবে কি মানবসভ্যতার বুকে নিষিদ্ধ ক্যু'র বিশুদ্ধতম প্রতীক?
আমার অক্ষমতাকে ক্ষমা করো হে বঙ্গসন্তান।।
----অসমাপ্ত ----
রহমান লতিফ, অক্টোবর ২০১৯.
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২২