somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারী শিবসেনা সদস্য বলবীর এখন মোহাম্মদ আমির

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মোহাম্মদ আমির পণ করেছেন ১০০টি মসজিদ নতুন করে নির্মাণ ও সংস্কার করবেন। সুতীব্র এক অনুশোচনা থেকে তিনি এই কাজে নেমেছেন। এটাই তাঁর বাকি জীবনের লক্ষ্য। কী সেই অনুশোচনা? তিনি বাবরি মসজিদ ভাঙায় অংশ নেওয়া শিবসেনা কর্মী। তখন তিনি ছিলেন বলবীর সিং। আর এখন মোহাম্মদ আমির। হ্যাঁ, মুসলিম হয়েছেন তিনি।

বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজে অংশ নেওয়ার পর বলবীর সিংকে বাড়ি থেকে বের করে দেন বাবা দৌলতরাম। স্ত্রীও হাত ধরেননি বলবীরের। এরপর আর দ্বিতীয় সন্তান বলবীরের মুখ দেখেননি বাবা। মৃত্যুর সময় বলে গিয়েছিলেন, বলবীরকে যেন বাবার মুখাগ্নি করতে না দেওয়া হয়।

বাবার এই আচরণে অবশ্য অবাক হননি বলবীর। মহারাষ্ট্রের নাসিক রাজ্যের মালেগাঁওতে গভীর রাতে তখনকার বলবীর আর আজকের মোহাম্মদ আমিরের এক শুভাকাঙ্ক্ষীর কার্যালয়ে বসে এসব কথা হচ্ছিল। মোহাম্মদ আমির জানালেন, তাঁর পরিবার ছিল রাজপুত ঘরানার। তাঁদের মধ্যে উগ্র হিন্দুত্ববাদ কখনোই ছিল না। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর ইংরেজি তিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছিলেন। মা, বাবা, ভাইবোনদের সঙ্গে থাকতেন পানিপথের কাছে খুব ছোট্ট একটা গ্রামে। বলবীরের বয়স যখন ১০ বছর, বাবা দৌলতরাম তখন সন্তানদের পড়াশোনার জন্য চলে যান পানিপথে।

( চিত্রেঃ মোহাম্মদ আমির )

মোহাম্মদ আমির জানান, তাঁর বাবা বরাবরই গান্ধীবাদে বিশ্বাসী। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের যন্ত্রণা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। তাই প্রতিবেশী সংখ্যালঘু মুসলমানদের আগলে রাখতেন। বাবা কোনো দিনই মূর্তিপূজায় বিশ্বাস করতেন না। তাঁরা কখনো মন্দিরে যেতেন না। বাড়িতে গীতা ছিল। কিন্তু তিনি বা তাঁর ভাইয়েরা কেউই সেটা কখনো পড়েননি। পানিপথে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে হেয় করা হতো। কেউ বাঁ হাতে রুটি খেলে তাকে মুসলিম বলে গালি দেওয়া হতো। পানিপথে বলবীর সিংয়ের পরিবারকেও হেয় করা হতো। হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছিলেন বলে পানিপথের স্থানীয় লোকজন তাঁদের অবজ্ঞা করত। একটা দুঃখবোধ তাড়িয়ে বেড়াত তখনকার বলবীরকে। পানিপথের কাউকে তেমন ভালো লাগত না। এ রকম সময়েই দেখা হয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একটি শাখার কর্মীদের সঙ্গে। তাঁরা বলবীরকে বেশ সম্মান করতেন। দেখা হলে ‘আপ’, ‘আপ’ (আপনি আপনি) বলে সম্বোধন করতেন।
মোহাম্মদ আমির জানালেন, তখন থেকেই মিশতে শুরু করেন আরএসএসের কর্মীদের সঙ্গে। শিবসেনা করতে করতেই বিয়ে করেন। এমএ করেন রোহতকের মহর্ষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওই সময় প্রতিবেশীরা তাঁকে কট্টর হিন্দু ভাবতেন।
আজকের মোহাম্মদ আমির বলেন, শিবসেনার লোকজনদের কাছ থেকে ‘সম্মান’ পেয়ে তাঁদের ভালো লেগে গিয়েছিল। শিবসেনাই তাঁকে অযোধ্যায় পাঠিয়েছিল বাবরি মসজিদ ভাঙতে। পাঠিয়েছিল বলবীরের বন্ধু যোগেন্দ্র পালকেও। তাঁরা হয়ে যান করসেবক। বাবরি মসজিদ ভেঙে পানিপথে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে তাঁকে ও যোগেন্দ্রকে তুমুল সংবর্ধনা জানানো হয়। বাবরি মসজিদের মাথায় শাবল চালিয়ে ভাঙার পর দুটি ইট সঙ্গে এনেছিলেন তাঁরা। সেগুলো শিবসেনার স্থানীয় কার্যালয়ে সাজিয়ে রাখা হয়।
সংবর্ধনার পর বাড়িতে ঢুকতেই বাবা বলবীরকে বলেন, ‘হয় তুমি এই বাড়িতে থাকবে, না হলে আমি।’ অগত্যা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। স্ত্রীও তাঁর সঙ্গী হলেন না।
ওই সময় ভবঘুরের মতো জীবন কাটিয়েছেন বলবীর। জানিয়েছেন, লম্বা দাড়িওয়ালা কাউকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠতেন তখন। বেশ কিছুদিন পর বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, বাবা মারা গিয়েছেন।
এরপর পুরোনো বন্ধু যোগেন্দ্র পালের খোঁজখবর নিতে গিয়ে আরও মুষড়ে পড়েন বলবীর। জানতে পারেন, যোগেন্দ্র মুসলিম হয়ে গিয়েছেন। যোগেন্দ্র নাকি তখন বলবীরকে বলেছিলেন, বাবরি ভাঙার পর থেকেই তাঁর মাথা বিগড়ে গিয়েছিল। যোগেন্দ্রর মনে হয়েছিল, পাপ করেছিলেন বলেই সেটা হয়েছে। প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে তাই মুসলিম হয়ে যান যোগেন্দ্র।
এরপরই আর দেরি না করে সোনেপতে গিয়ে মাওলানা কলিম সিদ্দিকির কাছে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন বলবীর। হয়ে যান মোহাম্মদ আমির।
মোহাম্মদ আমির জানালেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রায়শ্চিত্ত করতে অন্তত ১০০টি মসজিদ নতুন করে নির্মাণ ও মেরামত করতে চান তিনি। তাঁর ভাষ্য, ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ভেঙে পড়া মসজিদ খুঁজে বের করে সেগুলো মেরামত করেছেন তিনি। মুম্বাই মিরর ও আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে
সূত্রঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪৯
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×