২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরপর সারা দুনিয়ায় শুরু হয় আরেকটি যুদ্ধ। যেটা তৎকালিক দুই পরাশক্তির মধ্যে। কেউ কারোর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে নাই কিন্তু যুদ্ধ চলেছে সমানে সমানে। ইতিহাসের পাতায় এ যুদ্ধ শীতল যুদ্ধ কিংবা স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত।
স্নায়ুযুদ্ধ শব্দটি ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কুটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হতো।
এই দীর্ঘ সময় তারা নিজ নিজ রাষ্ট্রের আদর্শ স্থাপনের জন্য পরোক্ষভাবে লড়াই করে গেছেন নানা রকম হুমকি, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, গোয়েন্দা তৎপরতা, মহাকাশ গবেষণা, আর বিভিন্নদেশে নিজ নিজ আদর্শ স্থাপনার নামে কুটনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ প্রভাবিত করে। স্নায়ু যুদ্ধ রক্তক্ষয়ী নয়, এই যুদ্ধে কখনো শান্তি সম্ভাবনা ভেস্তে যায় না, আর দুটি দেশের সৈন্যবাহিনী প্রকৃত যুদ্ধে জড়িয়ে না পরে সবসময় একটা স্নায়ু চাপের মাঝে থেকে একে অপরকে পাহারা দেয় আর সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। মার্কিন সোভিয়েত স্নায়ু যুদ্ধের সময় বিশ্ব স্পষ্টত বিরোধিতা পূর্ণ দুটি ব্লক এ বিভক্ত ছিল এবং দুটো ব্লকের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি জটিল প্যাটার্ন সামঞ্জস্য লড়াই আর অবিশ্বাস নিয়ে থাকত সবসময়।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ & সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির বিশ্বব্যাপী তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। তবে সিআইএর দাদাগিরি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক লেখক চমৎকার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি জানবেন না অথবা বুঝবেন না, আপনি যাকে সবচেয়ে আপন এবং বিশ্বস্ত মনে করেন, তিনি একজন সিআইএ’র হয়ে কাজ করছেন। আর এমনও হতে পারে, সেই ব্যক্তিটি আন্তরিকভাবেই জানে সে সিআইএ’র লোক নয়।
সিআইএ সেসময়ে এমন এমন গোয়েন্দা তৈরি করেছিল যারা কট্টর কমিউনিস্ট সেজে ঢুকে পড়েছিল সোভিয়েত রাজনীতিতে। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের ছিল অবাধ বিচরণ। কেউ বুঝতে পারেনি এরা সিআইএ। সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের এবং শেষে সফলতা পেয়েছিল। এমন কমিউনিস্ট সেজেছিল যে, কিসের লেনিন, কিসের স্ট্যালিন, কিসের সেই ক্রুশ্চেভ, তাদের থেকেও বড় কমিউনিস্ট!!
ইরানি বিপ্লবের নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে পত্র দিয়ে বলেছিলেন, কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্রকে জাদুঘরে পাওয়া যাবে। বাস্তবে নয়। তার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ইয়েলৎসিনের উত্থান হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মানচিত্র মুছে যায়।
তাহলে বরিস ইয়েলৎসিন কি সিআইএ'র এজেন্ট ছিল??
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৬