একবার চিলির একটা খনিতে কয়েকজন শ্রমিক আটকা পড়েছিলো। খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে দেশের ঘরে ঘরে হাহাকার শুরু হয়। এই মানুষগুলো বাঁচবে তো! রাষ্ট্রপ্রধান নিযে ঘটনাস্থলে হাজির হন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের উদ্ধারের নির্দেশনা দেন। বাইরের দেশের সাহায্য কামনা করেন। বিদেশী সহায়তায় অবশেষে তাদের উদ্ধার করা হয়। পয়েন্ট টু বি নোটেড, এরা কেউ চিলির ন্যাশনাল ফুটবল টিমের সদস্য ছিল না, চিলির মুক্তিযুদ্দা ছিল না, জাস্ট সাধারণ শ্রমিক ছিল।
.
তুরস্কে সন্ত্রাসী হামলায় কয়েকজন নিহত হন। প্রেসিডেন্ট তখন বিদেশ সফরে ছিলেন। তৎক্ষণাৎ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে যান। পরিস্থিতি মোকাবেলার সব ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন।
শীতপ্রধান দেশগুলোতে প্রায়ই শোনা যায় শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির। এতজন মারা গেছেন। সেসময় সেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়।
যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের বিপর্যস্ত করে তুলে। রাষ্ট্রপ্রধানরা মনে করেন, এটা তাদের জন্য যুদ্ধাবস্থার মতো। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এরকম তঠপরতা বহুবার দেখা গেছে। কিন্তু পৃথিবীর সেরা দেশ একমাত্র বাংলাদেশই ব্যতিক্রম। এদেশের মানুষের দুর্যোগ নিয়ে রাষ্ট্রের মন্ত্রীরা হাসাহাসি করেন!
সুনামগঞ্জের হাওড়ের বন্যা পরিস্থিতিতে ফসল এবং জলজ প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রকাশ করায় মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনারা বলতেছেন, এত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এত মেট্রিক টন মাছ মরেছে। এটা মেপে দেখলো কে? ( সূত্রঃ Click This Link )
আমার তখন আবুল মনসুর আহমদের "আদুভাই" এর কথাই মনে পড়ে! আদুভাই দেখলো বইয়ে লেখা, "পৃথিবীর তিনভাগ জল একভাগ স্থল।" তখন সে ঠাট্টা করছিলো, " এঁহ...এটা মেপে দেখলো কে?"
.
হাওড়ের পানিতে ইউরেনিয়াম থাকা নিয়েও মন্ত্রীসভার বৈঠকে হাসাহাসি হয়। তারা হাসতে হাসতে বলেন, "ইউরেনিয়াম পাওয়া গেলে তো ভালো কথা। ইউরেনিয়াম অনেক দামি জিনিস!"
.......ইটস টাইম টু leave the earth!
ইউরেনিয়াম পাওয়া না পাওয়ার বিতর্কে যেতে চাচ্ছি না। মানুষ কষ্টে আছে। সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, সব। মাছ মরে গেছে সব। হাঁস মরছে। নানা পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।গরুর খাদ্যের অভাবে গৃহস্থরা পানির দামে গরু বিক্রি করে দিয়েছে দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, তিনভাগের একভাগ দাম দিয়েও বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে গরু বিক্রি করে দিয়েছে!
.
পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারছেন? সুরমার দুই তীরে এক কিলোমিটার পর্যন্ত পানির প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। আর ফসলের ক্ষতির প্রভাব যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে, কয়েকমাস পর আরও বাড়বে। আর ইউরেনিয়াম থাকলে তো কথাই নেই। সেটা হবে ভয়ানক! এই পরিস্থিতিতে দিলীপ কুমার সাহাকে (যিনি একটা গ্লাসে একটু পানি নিয়ে সুন্দরভাবে পোজ দিয়েছেন, ছবি তুলেছেন। বাকি দুইজন দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন) পাঠিয়েই সরকার নিশ্চিন্ত হয়ে যায়। মন্ত্রিরা দেশের মানুষের দুর্গতি নিয়ে ঠাট্টা করেন। আহ! বাংলাদেশ!
(শনির হাওড়ে পানিতে ডুবে গেছে গাছ )
আমি অতিকাছ থেকে দুর্গত মানুষের কষ্ট দেখেছি দেখছি, তাদের সাথে কথা বলে তাদের অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি পরিবারেই হাহাকার। আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে ফাঁসি দিন। তবু আমি বলবো, এদেশে জন্ম হওয়ায় আমি নিজেকে দুর্ভাগ্যবান মনে করছি। বেলজিয়াম, তুরস্ক, ফ্রান্স চিলি কিংবা পৃথিবীর অন্য যেকোনো রাষ্ট্রে হলে ভালো হতো। কিছু না পেতাম, অন্তত ঠাট্টা পেতাম না।
- ধন্যবাদান্তে কাওসার ভাই
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭