কিছুদিন ধরে কোরীয় উপদ্বীপে সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। একদিকে উত্তর-কোরিয়া এবং অপর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া। একটু পিছনে জাপানও আছে তাদের সাথে। দেশ চারটির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়া ঘোষিত ভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। উভয়ের কাছে পারমাণবিক বোমা আছে। হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশী আছে এবং কোরিয়ার কাছে কম আছে। তবে কোরিয়ার কাছে কম থাকলেও যা আছে তা কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট। ফলে যুদ্ধটি সমানে সমান হওয়ার সম্ভবনা।
জাপান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ নয়, তবে প্রয়োজনে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পারমাণবিক বোমা বানানোর মত উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। অনেকে মনে করেন তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে বা তারও কম সময়ে জাপান পারমাণবিক বোমা বানাতে সক্ষম। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়ারও উন্নত মানের পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে। যেসব চুল্লি থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। অনেকে মনে করেন উন্নত পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তারাও পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলতে পারে।
পাশে রয়েছে চীন। বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তি এবং উন্নত পারমাণবিক প্রযুক্তির অধিকারী দেশ। কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক যুদ্ধ হলে চীন চাক বা না চাক, তার দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বলতে গেলে আক্রান্ত হবে। কারণ উত্তর কোরিয়াতে পারমাণবিক বোমা বর্ষিত হলে সেই বোমার আঘাত চীনা ভূখন্ডেও যেয়ে লাগবে। স্বাভাবিক কারণে চীন এই রকম একটি যুদ্ধ বসে বসে দেখবে না। হয়তো জড়িয়ে পড়বে যুদ্ধে, তবে আমেরিকা বা দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে নয়। আর চীন যদি জড়িয়েই পড়ে তাহলে এই যুদ্ধ আর আঞ্চলিক যুদ্ধ থাকবে না। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হবে। পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে গোটা পৃথিবী প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসবে। ফলে কোরীয়া উপদ্বীপে সামরিক উস্কানী কোনভাবেই কাম্য নয়।
বাস্তবে এটা সত্য যে, উত্তর কোরিয়া আক্রান্ত না হলে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান বা যুক্তরাষ্ট্রে হামলা করতে যাবে না। কারণ, উত্তর কোরিয়া জানে যে, চীন তার পক্ষ সমর্থন করলেও যুদ্ধের মূল ক্ষেত্র হবে তার দেশ। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হলেও, উত্তর কোরিয়ার কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। পারমাণবিক যুদ্ধে পুরো দেশটি পুড়ে তাবা তাবা হয়ে যাবে। জাতি হিসেবে তাদের বিলুপ্তি ঘটবে, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মত। ফলে একটি পারমাণবিক যুদ্ধ তাদের কাছে কোন অবস্থায় কাম্য নয়।
তারপরও উত্তর কোরিয়া আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণ করবে এবং পারমাণবিক যুদ্ধে যাবে, কেন? কারণ আফগানিস্তান ও ইরাকের ঘটনাবলী তার সামনে রয়েছে। উত্তর কোরিয়া যদি ভদ্রতা ও নমনীয়তা প্রদর্শণ করতে গিয়ে যুদ্ধে হেরে যায়, তাহলে সাদ্দাম হোসেন ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের ভাগ্যে যা ঘটেছিল উত্তর কোরিয়ার নেতাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে। বাস্তব সম্মত কারণেই উত্তর কোরিয়া বা তাদের নেতারা এই রকম একটি পরিস্থিতিতে কোনক্রমেই পড়তে চান না। তাই আক্রান্ত হলে, পাল্টা আক্রমণ ব্যাতীত তাদের কাছে কোন বিকল্প নাই। পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে উত্তর কোরিয়া যা করবে তাতে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পুরো ভূখন্ড হিরোশিমা ও নাগাসাকির মত জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। তাদের কাছে ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধ প্রযুক্তি থাকলেও তা খুব একটা কাজে আসবে না।
অপরদিকে আমেরিকা দূরে অবস্থিত হওয়ায়, ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধ প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তর কোরিয়ার নিক্ষিপ্ত কিছু ক্ষেপনাস্ত্র হয়ত ধ্বংস করার সময় পাবে এবং ধ্বংশ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া থেকে ধেয়ে আসা সবগুলো ক্ষেপনাস্ত্র তারা ধ্বংস করতে পারবে এমন নিশ্চয়তা আমেরিকান সমর বিশেষজ্ঞরাও দিতে পারছেন না। আমেরিকাতে মাত্র চার পাঁচটি পারমাণবিক বোমা আঘাত হানলে তাতে যে ধ্বংসাত্মক ফলাফল ঘটবে, তাতে সেদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, যা সম্ভবত মার্কিনীদেরও কাম্য নয়।
কাজেই একটি পারমাণবিক যুদ্ধ বাঁধানোর বিলাসীতা তাদের জন্য কতটা মঙ্গলজনক সেটা দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ঠিক করতে হবে। বলতে গেলে বল তাদের কোটে।
সবার সুবুদ্ধি উদয় হোক, সবার সম্পদ ভাল কাজে ব্যবহার হোক, বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:০৮