মা,
..............." গরম তেলে সবার আগে চিনি ফরণ দিলে মাছের রঙ সুন্দর হয়। দেশলাইয়ের কৌটায় কিছু কাঁচা চাল রেখে দিলে তার উষ্ণতার কমতি হবে না কখনো।"
তোমার দেয়া এইসব সুখি ঘরোয়া টিপস,
প্রতিদিন পড়ছি।
আনাড়ি হাতে তাই ফস্কা পরেছে বহুবার।
নুন, ঝাল, মিষ্টির কেমিষ্ট্রীও ভুল করেছি।
তবুও অনেক কিছু এখন করতে শিখে গেছি।
কোন ফরনে কেমন ঝাঝে ঠিক কতটা চোঁখ জলে -
রক্ত না দেখা গেলেও কিভাবে ক্ষত তৈ্রি হয়ে যায়
জেনেছি।
জানছি, প্রতিদিন।
তবুও ...
শাস্ত্রে বলে আত্মরক্ষা করেই
রনক্ষেত্রে নামতে হয়।
এই নিরান্তর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার নাম মেয়েজীবন।
তার কুটনৈ্তিক সমাধান বা নিখাদ আত্মসমর্পনের নামও মেয়েজীবন।
এতকিছু তুমি আমাকে শিখাতে চাওনি,
কিন্তু মা, আমিও সেই , করতে করতে শিখে গেছি।
মা, তুমি হয়তো আমাকে ঢাকাই শাড়িতে জরিয়ে দেখতে চেয়েছো যেখানে-
প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গতেই কোন ময়াল সাপের মত জরিয়ে ধরে নিষ্শাশের প্রবল আর্তিতে বুঝতে পারবো এই চাপের নাম- মেয়েজীবন।
প্রতিদিন তোমার দেয়া শুখি ঘরোয়া টিপ্স প্রয়োগ করতে গিয়ে এক হল্কা চামড়াগুলোকে পুরিয়ে দিবে, ঝলসে যেতে যেতে বুঝতে পারবো,
এই জলে যাওয়ার নাম- মেয়েজীবন।
এই চিঠিটি তোমার মেয়ে হয়ে নয় শুধুমাত্র একজন নারী হিসেবে নতুন কিছু ভাবনা নিয়ে তোমাকে লিখছি যা হয়তো এতদিন যাবত তোমার স্কুলে শেখা আমার বুদ্ধি , বিবেচনা কে বদলে দিবে। শাস্ত্র বলে নিজের আত্মরক্ষা নিজেকেই করতে হবে। তাইতো তোমার আচল থেকে বেরিয়ে পা বারালাম। সেখানেও অনেক কিছু শিখেছি, হেরেছি আবার উঠতে শিখেছি।
প্রতিদিন নিজেকে টুকরো টুকরো হয়ে পন্য হতে দেখেছি
হর্ডিং এ, পোস্টারে, তেল, সাবান
এমনকি শেভিং ক্রমিএর বিজ্ঞাপনেও
লজ্জায় মুখ ঢাকতে ঢাকতে বুঝি
এই বাজারিকরনের নাম – মেয়েজীবন।
মা, এবারের নারিদিবসে নিজেকে নতুন করে কিছু শিক্ষা দিতে চাই -
না হয় ঘাস ফুল-ই হলাম, সূর্যমুখি নয়
স্বান দিয়ে রাখতে চাই মেধা ও মনে
চকচকে পাথর মনটাকে প্রস্তুত রাখতে চাই।
আগামিতেও কোন স্বপ্নের মৌসুমে বুঝতে পারবো
এই বিজয়ের নাম - মেয়েজীবন
অথবা,
কোন এক আকাশ কুসুম কল্পনার নাম - মেয়েজীবন।
--
খোলাচিঠি
পুনশ্চঃ উৎসর্গ নারিদিবস।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০০৮ ভোর ৬:০০