প্রয়াত ব্লগারদের স্মরণে
ধরো, আজ সকালে ব্লগ খুলতেই একটা দুঃসংবাদ পেলে।
মানুষের মৃত্যুর সংবাদ সচারচর দুঃসংবাদই হয় বটে।
খবরটা এরকম-“ব্লগার কালপুরুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে”।
চমকে উঠলে! চমকে ওঠার তেমন কোন কারণ নেই,
অহরহ এমন দুঃসংবাদ খবরের কাগজে রোজই ছাপা হয়।
কালপুরুষ আর অন্য মানুষের মধ্যে এমন কী তফাৎ!
পরিচয়ের সূত্র ধরে কেউ কাছের, কেউবা দূরের।
মৃত্যু অনেক সময় মানুষকে মহান করে তোলে।
সত্যিই তোলে কি! হয়তো তোলে। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
শীর্ষ সন্ত্রাসীর মৃত্যু কিংবা ক্রশ ফায়ারে মৃত্যু
অনেককেই ব্যথিত করেনা, আমাকেও করেনা।
তবে মিথ্যে সন্দেহে গণ পিটুনি কিংবা লাঠি বৈঠা দিয়ে কাউকে পিটিয়ে হত্যা
আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। কষ্ট দেয় দোররা মেরে নারী হত্যা।
বেঁচে থাকাকালীন আমার বোধোদয় এমনটাই।
তাইতো একদিন যে মানুষটিকে তার মিথ্যাচার ও অসদাচরণের জন্য
মোটেও পছন্দ করতাম না, একদিন তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ব্যথিত হলাম।
আমার মন থেকে তার প্রতি সকল ঘৃণা-ক্ষোভ মুছে গেল।
বরং মানুষটিকে মৃত ভেবে কষ্ট পেয়েছি-
মৃত্যুর আগে লোকটি উত্তরসূরীদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেনি।
ঘরে ছিল তার বৃদ্ধা মা, অসহায় স্ত্রী আর দুই কিশোর সন্তান।
তাদের কষ্টের কথা ভেবে মানুষটির প্রতি আমার এতোটুকু বিদ্বেষ জন্মায়নি।
তার দাফন ক্রিয়াও হয়েছিল প্রতিবেশীদের সহায়তায়।
জানাজার আগে যখন তার কিশোর সন্তান এসে বললো-
“আমার বাবার যদি কারো কাছে কোন ঋণ থাকে বলবেন,
আমি ওয়াদা করছি আমি তা পরিশোধ করে দেবো”।
কেউ তখন মুখ খোলেনি- কেউ কিছু দাবী করেনি।
মানুষ সময়ে অনেক বদলে যায়, ক্ষমাশীল হয়ে ওঠে।
বেচারা ক্ষমা পেয়ে গেলেন অবাঞ্ছিত কিছু ঋণের বোঝা থেকে।
জীবদ্দশায় কিছু কিছু মানুষ বিরক্তিকর হলেও মৃত্যুর পর
তারাও কিছুনা কিছু সহানুভূতি পায়। একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর মা’ও
তার পুত্রের মৃত্যু হলে অশ্রু বিসর্জন করে।
ক্ষমা করবেন, কালপুরুষের মৃত্যু সংবাদ কেবলই একটি উপমা মাত্র।
সাধারণ মানুষের মৃত্যুর কথা মানুষ সহজেই ভুলে যায়,
যেমন আমরাও মাঝে মাঝে ভুলে যাই আমাদের সহব্লগাদের মৃত্যুর কথা।
আবার কেউ কেউ আমারি মতো নস্টালজিকতায় ভুগেন,
স্মরণ করেন প্রয়াত জুবায়ের আহমেদ, মাহবুব মাতিন আর ইবনদের কথা।