প্রথম অংশঃ পুরোনো কাসুন্দি- না ঘাটলেও কোন ক্ষতি নেই
(যাদের ইচ্ছে হয় পড়বেন)।
অতঃপর মোঘল সাম্রাজ্য পতনের পর ভারতবর্ষে ধূর্ত ও সাম্রাজ্যলোভী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের আগ্রাসন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে। কিছু বিশ্বাসঘাতক ও সুবিধাভোগী গোষ্ঠির কারণে সমগ্র ভারবর্ষজুড়েই তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিস্তার লাভ করতে থাকে। বাংলার মাটিতেও তাদের অভিশপ্ত ছায়া পড়ে। এদেশের কৃষকদের ফসলের জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য করে। প্রতিবাদী কৃষকদের উপর অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা ইংরেজদের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। ইংরেজদের ইন্ধনে উমি চাঁদ, জগৎ শেঠ, ঘসেটি বেগম, বীর বল্লভ এদের মতো অনেক দেশীয় কুচক্রীদের সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা বাংলার মসনদ হারায় এবং বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর কর্তৃক প্রাণ হারায়।
সিরাজ-উদ্-দৌলার মৃত্যুর পর বঙ্গভূমিতে ইংরেজরা তাদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির রাজত্ব কায়েম করে এবং খাজনা উসুলের জন্য বাঙলাকে বিভিন্ন জেলা ও পরগণায় বিভক্ত করে। তোষামোদকারী কিছু জমিদার ও নবাব ইংরেজদের এই কাজে সহযোগিতা করে। নবাবদের কিছু উত্তরসূরী ঢাকাতেও ছিল। নবাবেরা ছিলেন অত্যন্ত সৌখিন ও বিলাসী আবার অন্যদিকে ভীষণ রক্ষণশীল। নবাব পরিবারের বেগম ও কন্যারা ধর্মীয় আব্রুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতেন। এক্কাগাড়ী (ঘোড়ায় টানা গাড়ী) যখন নবাবদের বেগম-কন্যাদের নিয়ে বাইরে যেতো তখন মানুষের নজর এড়াবার জন্য এক্কাগাড়ীতে পর্দা টানানো হতো।
নবাবরা মোঘলদের বদৌলতে শাহী খাবার ও উর্দু ভাষা এবং ইংরেজদের বদৌলতে চোস্ত কায়দা-কানুন ও ইংরেজী ভাষা ভালই রপ্ত করেছিল। তাদের আয়েশী জীবনকে অন্যেরা ব্যাঙ্গ করে বা হিংসা করে "ফুটানি" বলতো। পানি ফুটালে বিশুদ্ধ হলেও নবাবদের ফুটানি তাদের জীবনকে কতটা বিশুদ্ধ রেখেছিল তা রহস্যে ঘেরা। সেসময় অধিকাংশ জমিদার ও নবাব ভোগ বিলাসে অভ্যস্ত ছিল। তাই জমিদারদের ছিল বাগানবাড়ী আর নবাবদের ছিল সুশোভন "বাগ" অর্থাৎ "বাগান" বা "উদ্যান"। নবাবরা খুব ফুলপ্রিয় ছিলেন। বাগ-বাগিচার প্রতি ছিল তাদের ছিল বিশেষ দুর্বলতা। সেকারণেই ঢাকার বহু জায়গার নামকরণ বাগ-বাগিচার নামে। তার প্রমাণ "লালবাগ" থেকে "সবুজবাগ", মাঝে পরী, চামেলী, গোপি, মেহেদি, আরাম, সোবহান আরো কত বাগের ছড়াছড়ি। একসময় এইসব বাগ-বাগিচায় নানারকম ফুল ফুটতো অথচ এখন ফুলের বদলে শুধুই মানুষ নামের "বাগ" (ইংরেজীতে ছাড়পোকা)।
উর্দুতে ফুলকে বলা হয় "গুল"। "গুলিস্তান"(গুল-ই-স্তান) নামের সূত্রপাত ঠিক একারণেই। বাংলা ভাষায় "গুলিস্তান" "ফুলবাগিচা" বা "ফুলের বাগান" নামেই পরিচিত। এই গুলিস্তান থেকেই এককালে নবাবরা সুগন্ধি মেখে “গুলদাস্তা” (ফুলের তোড়া) নিয়ে এক্কাগাড়ীতে (ঘোড়ায় টানা গাড়ী) করে "কাওরান বাজার" (মূল শব্দ কাঁরওয়াঁ যা বাঈজীদের ঘুংঘুর জাতীয় অলংকার) যেতেন বাঈজীদের "মুজরা" বা "নাচ-গান"দেখতে ও শুনতে। সাথে থাকতো রঙিন পানি আর বাদামের শরবত। এটাও ছিল তাদের ফুটানির একটা অংশ।
দ্বিতীয় অংশঃ নতুন কাসুন্দি- স্বাদ নিলেও নিতে পারেন
(পড়া বাধ্যতামূলক নয়)।
আজ সেই নবাবী আমল নেই। আমরা কেউ নবাব নই। আমাদের ঘোড়ায় টানা এক্কাগাড়ীও নেই। কাওরান বাজারে বাঈজীদের সেই জলসাঘরও নেই। তাই মুজরা দেখার বা শোনার কোন সুযোগ আমাদের নেই। তবে নবাবদের বিলাসিতার একটা অংশ হিসেবে সকলেই যা উপভোগ করতে পারি তাহলো "উদ্যান ভ্রমণ" বা "বাগ-বাগিচার ফুল দর্শন"। তবে আজকাল তরুণ ও যুবাদের কাছে "গাছে ফোটা ফুল"-এর চাইতে "ফুলকলি"দের দেখাতেই আনন্দ বেশী। তাই যে কোন গার্ডেনে অবারিত দৃষ্টি প্রসারের জন্য গার্জিয়ানদের তদারকি করার কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ ও যুবক হলেও তাদের ইচ্ছে ছিল বাগানে ঘুরে ঘুরে কোন ফুল তোলা নয়, কোন ফুলকলিও নয় বরং মনের আনন্দে কিছু ছবি তোলা। আর ছবি তুলতে হলে দল বেঁধে যাওয়াই বেশী আনন্দের। তাই ঠিক হলো দ্বিতীয় ফটোব্লগ কোন বিশাল উদ্যানে।
আমরা যারা উদ্যানে যাবো তাদের জন্য নবাব আমলের সেই এক্কাগাড়ী নেই। তাই বাস-সিএনজি আর পদযুগলই একমাত্র ভরষা। মোটকথা আনন্দের একটা অংশ হিসেবেই ব্লগীয় ফটোওয়াকের অবতাড়না। যারা এই মিশনে যাবে বলে আগে ঘোষণা দিয়েছিল তারা অনেকেই আসেনি। আবার যারা ঘোষণা দেয়নি তারা এই সুযোগটা হাতছাড়া করেনি। প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষে সকলেই হাতে নানাবিধ ফুল সজ্জিত গুলদাস্তার বদলে নানা ধরণের ক্যামেরা নিয়ে হাজির।
এরপর একত্রে উদ্যানে প্রবেশ। উদ্যানে পৌঁছেই নবাবী ঢংগে সবাই তথাকথিত বাঈজীর বদলে সাবজেক্টের পিছনে দাপাদাপি; মুজরার বদলে প্রজাপতি আর কীট-পতঙ্গের মোহনীয় ভঙ্গিমার পেছতে মাতামাতি; রঙিন পানির বদলে মামের স্বচ্ছ বোতলে প্রেমময় চুমু, বাদামের শরবতের বদলে তারকাখ্যাত (স্টার কাবাবের) ডাইল পুরীর (ফেন্সীর সাথে এর কোন ডিল নেই) বস্ত্রহরণ। নবাবদের আতুরে (আতর মাখার প্রবণতা) ফুটানির বদলে হাতুড়ে (থুক্কু, অভিজ্ঞ) ফটোগ্রাফারদের বোতাম খোলা (শাটার রিলিজ) ও টেপাটিপি (ক্লিক)। আমরা সেই আমলের নবাব না হলেও ফুটানিক্যাল গার্ডেনে সেদিন আমরা নিজেরাই যেন এক একজন স্বেচ্ছাস্বাধীন নবাব, যাদের সঙ্গী ছিল নির্মল আনন্দ, প্রাণঢালা খুশী আর একে অপরের সাথে বন্ধুত্বের নিবিড় হাতছানি। বোটানিকাল গার্ডেন সত্যিই আমাদের জন্য সেদিন ছিল এক "ফুটানিক্যাল গার্ডেন"।
তৃতীয় অংশঃ এবার আর পড়তে হবেনা, দেখলেই চলবে
(কথায় আছে সিইং ইজ বিলিভিং)।
১। ঐ মিয়া, আপনের প্যাচাল বন্ করেন। আমরা আয়া পড়ছি।
২। খাইছে! আমারে ছেলেধরা ভাবছে নাকি! আমার মাইয়াতো কথা কইবার পারেনা। বাপ না ডাকলে বুঝবো কেমনে?
৩। আহাম্মক নাকি গাছে ধরে। মনে হয় পাইছে কোন আহাম্মক রে।
৪। মনে করলাম ছেলেধরা নিয়া একটা রিপোর্ট করুম- মাইয়াটা কলো থিকা নাইমা মায়ের কাছে দৌড়। আফসুস!!
৫। সবাইরে ফাঁকি দিয়া যে মাইয়ার ছবি তুলছি এই সুযোগে একটু দেইখা লই। মুবাইল নম্বরটা চাইতে হইবো।
৬। খাইছে! মাইয়ার লগে দেখি বডিগার্ড বইসা আছে। কেমনে যে নম্বরটা পাই।
৭। সব পাবলিক দেখি গ্যালারিতে বইসা আছে। এইহানে আবার কুনো মুজরা হইবো নিহি? দেখবার মুন চায়।
৮। ভুয়া খবর! সবাই ফুল (বোকা না) না। আল্লাই জানে হেরা কুন ফুল দেখবার লাগছে।
৯। হাচা কইতাছি, ওরা ফুল দেখতাছে। আপনেও দ্যাখেন।
১০। সবাই ফুলের শুভ্রতা শুভেচ্ছা।
১১। বিনা পয়সায় আরো কিছু ছবি দেইখা লন। চোখের ব্যথা কমবো।
১২।
১৩।
১৪।
১৫।
১৬।
১৭।
১৮।
১৯।
২০।