অপরবাস্তব-২ এর মোড়ক উন্মোচনঃ আমার অনুভূতি
এবারে শরৎ বাস্তবিক অর্থে তেমন কোন উৎসবমুখর শারদীয় বিকেল উপহার দিতে পারেনি তাই একটু হতাশ ছিলাম। পৌষ পার্বণে পিঠে খাওয়ায় ব্যাপারটাও তেমন জমে ওঠেনি। তবে একুশ তার স্বমহিমায় সর্বদাই উজ্জ্বল। শোকের মাস কেমন করে যেন আনন্দের মাস হয়ে ওঠে। তেমনি একুশের বইমেলা তার চিরাচরিত উৎসবের আমেজ ছড়াতে এতোটুকু কার্পণ্য করেনি। একুশের বইমেলা বরাবরের মতোই ঢাকাবাসীদের সকল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এবারের উৎসাহের মাত্রাটা যেন একটু বেশীই ছিল।
গতবারের বইমেলায় অপরবাস্তব-১ আমাদের বাস্তবিক অর্থে হতাশ করেছিল। ছাপাকলের পেছনে যারা ছিলেন তারা ব্লগারদের সমালোচনার যাঁতাকলে রীতিমতো পিষ্ট হয়েছিলেন। তাদের সকল নিষ্ঠাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্লগের পৃষ্ঠায় শব্দের বিছুটি ছুটেছিল। তবে আশার কথা বলতে একটাই, ছাপাকলের নেপথ্যে যারা ছিলেন তারা কিন্তু এসব সমালোচনায় মোটেও দমে যাননি। বরং “পতনই উন্নতির স্তম্ভ” এই বাণীতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে বাস্তবতার সেই ভাঙ্গা দেয়াল অপার চেষ্টায় দক্ষতার সাথে জোড়া লাগানোর ব্রত নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন সেই সব হার না মানা কিছু ব্লগার, কিছু উদ্দমশীল ও কর্মঠ মানুষ। তাদের এই জোড়া লাগানোর প্রচেষ্টা কতটুকু সফল হয়েছে তা হয়তো সময়ই বলে দেবে। তবে আমরা আশাবাদী হতে দোষ কোথায়?
২২শে ফেব্রুয়ারী। বিকেল তিনটার পর থেকে পিঁপড়ার সাড়ির মতো অন্যরকম মানববন্ধনের বেষ্টনি ডিঙ্গিয়ে এক এক করে বই মেলায় জড়ো হলো সামহয়্যারইন ব্লগের বিশিষ্ট কিছু ব্লগার। ধৃতরাষ্ট্রের মতো কুটিল উদ্দেশ্য না হলেও সকলের ইচ্ছা অপরবাস্তব-২ এর বস্ত্র হরণ (মোড়ক উন্মোচন) স্বচক্ষে উপভোগ করা। রথদেখা ও কলাবেচা নাহলেও- বইদেখা ও বইকেনার সাথে ফাও হিসেবে রঙবেরঙের পোষাকে সজ্জিত নারীপুরুষের মিলনমেলা দেখার এমন সুযোগ কে’ইবা হাত ছাড়া করতে চায়? একরাশ উচ্ছল শিশু-কিশোরের উত্তাল আনন্দ, একঝাঁক উজ্জ্বল তরুণ-তরুণীর কাব্যময় উচ্ছাস, মাঝ বয়সী মানব-মানবীর প্রেমময় আবেগ, বিগত যৌবনের নারী-পুরুষের মধ্যাকাশে থেমে থাকা আবেগের বেলুন, আর ঐতিহ্যের প্রদীপ-শিখা জ্বালানো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই যেন ভাবাবেগে আপ্লুত- অন্যরকম এক আনন্দ-শিহরণে সজীব।
প্রকাশনার ইতিহাসে সম্ভবত সর্বাধিক সংখ্যক সংকলক সহযোগী নিয়ে প্রধান সংকলক শরৎ অন্যমনষ্কভাবে ছোটখাট কিছু ভুলত্রুটির চিহ্ন রেখে গেছেন অপরবাস্তব-২ এর কিছু কিছু পাতায়। মানুষ মাত্রই ভুল হয়, হতেই পারে- তবে কথা হলো, এমন টুকটাক ভুল পেলে কে কাকে ছাড়ে? শরৎ চতুরতার সাথে ব্লগের আসল নিকের কিছু অংশ কর্তন করে সম্পাদকের স্বভাবসুলভ কাঁচি চালানোর পুরোনো দাসবৃত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বীয় লেজ কর্তনের মাধ্যমে তিনি অন্যমনষ্কভাবে “চৌধুরী” হয়ে গেছেন।
ব্লগার “মুজিব মেহদী” তৃতীয়বারের মতো তার নামের বানানের লিঙ্গান্তর স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেছেন খুব সুচারু রূপে। মুজিব ভাইয়ের জিভ যথেষ্ট সংযত এবং মেহেদির রঙ যতই গাঢ় হোকনা কেন বাস্তবে তার প্রয়োগ যথার্থ নয় বলেই তাঁর অভিমত। কবিতার রঙে উজ্জ্বল এবং বাস্তব অর্থে বিলুপ্ত প্রজাতির “মাছরাঙ্গা” অপরবাস্তব-২ থেকে উড়ে গিয়ে কোন ডালে বসেছেন কেউ জানেনা। তাঁকে মনের খাঁচায় পুষবে বলে যারা বিশাল হৃদয় নিয়ে উপস্থিত ছিলেন তারা ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ফিরেছেন। তবে বইয়ের ডাল থেকে উড়ে গেলেও তিনি তার পুরাকীর্তির নিদর্শন কবিতা আকারে জমা রেখে গেছেন অব্লগার “শুভ্রা খান”-এর কাছে। না কোন রেপ্লিকা নয়, সেটা তার আসল কীর্তি।
শরৎকালে শিরশিরে শীত থাকেনা বলে শিশির তেমন জমেনা। শীতের শেষ আর বসন্তের শুরুতে অপরবাস্তবের প্রকাশ তাই শরৎপ্রভাবে শিশির কিছুটা শুকিয়ে গেছে বাস্তবতার নিরিখে। শিশির না থাকলেও দীর্ঘ বিরতির পর শশী’র দেখা মিলেছে কুয়াশাচ্ছন্ন বিকেলে। ধুমায়িত কফির সাথে আমরা সবাই এক হতে পেরেছিলাম অপরবাস্তব-২ এর মোড়ক উন্মোচনের অনাড়াম্বর এক অনুষ্ঠানে। বইয়ে সংকলকের তালিকায় অনেকের নাম সংকলিত হলেও বই প্রকাশনার কাজে তাদের জায়গার সংকুলান হয়নি ফলে অনেকেই শশরীরে উপস্থিত হয়ে ঘাম ঝরাতে পারেননি এই শ্রমনিষ্ঠ কাজে। নানা ব্যস্ততায় সংকলকদের অনেকই মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। যারা দেশে বা বাইরে থেকে আপরবাস্তবের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন বা গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন তাদের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা। যাদের লেখায়, সার্বিক সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় অপরবাস্তব-২ বাস্তবতা খুঁজে পেয়েছে তাদের সকলের প্রতি রইলো আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ জানাই সংকলক ও সংকলক সহোযোগীদের যাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা ব্লগারদের আরও ভাল লেখার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
(তাড়াহুরো করে লিখলাম। ভুল ত্রুটি মাজর্নীয়। কেউ ভুল বুঝবেননা আশা করি।)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:৪২