
প্রথমেই বলে নেই, এটা কোন রিভিউ না। মুভিটা কিভাবে বানানো হয়েছে, কোন এ্যান্গেল থেকে ক্যামেরা শুট করছে - এসব বোঝার মত জ্ঞান আমার নেই। আমি শুধু লিখি আমার কেমন লাগল, আজও তাই লিখব।
এই পোষ্টে মুভির কাহিনী মোটামুটি বলে দেয়া হয়েছে, তাই যদি মনে করেন সময় করে মুভিটা দেখবেন, তাহলে পোষ্ট না পড়লেই ভালো। তবে আমার মনে হয়েছে, রোমান্টিক মুভির ঘটনা কম-বেশী আমরা সবাই আচ করতে পারি, শুধু দেখার বিষয় কিভাবে মুভিটার গল্পগুলো খোলে। যারা এরপরও দেখবেন তাদের শুধু বলছি মুভিটা রোমান্টিক, ত্রিভুজ প্রেম, ভালবাসা, বিচ্ছেদ, মিথ্যা - এসব নিয়েই বানানো।
একদিন ইন্টারনেটে মুভি ব্রা্উজ করতে করতে হঠাৎ, একটা মুভির পোষ্টারে চোখ আটকে গেল। পোষ্টারটা ছিল এটা:

দেখেই মনে হলো, একটি ছেলে-মেয়ে সমুদ্রের দিকে ছুটে চলেছে সব বাধা ছিন্ন করে, কিন্তু সমুদ্রে তো মৃত্যু অপেক্ষা করছে! এরপরও কেন ওরা ওদিকেই ছুটছে?
মুভিটা ডাউনলোড করলাম টরেন্ট থেকে। বেশ কিছুদিন ধরে পড়েই ছিল, দেখব দেখব বলে আর দেখাই হয়না। টরেন্ট লিংক একদম নিচে দিয়ে দিচ্ছি।
হুমম কোথা থেকে শুরু করা যায়!
ঘটনা ৩ জন বন্ধুকে নিয়ে। ১টি ছেলে, ২টি মেয়ে। ছেলেটির নাম টমি, মেয়েদের একজনের নাম রুথ, অন্যজন ক্যাথি। ৩ জনই ছোটবেলা থেকে অনাথ আশ্রম ( বোর্ডিং স্কুল দেখানো হয়েছে ) বড় হচ্ছে। টমি খুব ভালো একটি ছেলে কিন্তু একটু বোকা টাইপের। তার দিন দুনিয়ায় মন খুব একটা থাকেনা, সে তার আকা-আকি আর জীবনের ছোটখাট আনন্দ নিয়েই ব্যস্ত। রুথের আবার অনেক রাগ এবং বন্ধুদের নিয়ে তামাশা করতেই তার ভাল লাগে। আর ক্যাথি - সে মনে হয়ে ছোট বেলা থেকেই টমিকে পছন্দ করে, কিন্তু সবাই কি মনে করবে ভেবে চুপ থাকে। এভাবেই তাদের জীবন কেটে যায়।
একদিন স্কুলে একজন নতুন শিক্ষিকা আসেন। তিনি সব ছেলেমেয়েদের আদর করেন, ওরাও উনাকে পছন্দ করে। হঠাৎ করে একদিন তিনি ক্লাসে সবাইকে জিজ্ঞেস করেন "আচ্ছা তোমরা কি জানো, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে কি হয়? কেউ ডাক্তার, কেউ ইন্জিনিয়ার, কেউ বা অভিনেতা। তোমরা বড় হয়ে কি হবে?" সবাই যখন চুপ, তখন উনি নিজেই বললেন, "তোমরা বড় হয়ে কিছুই হবে না! কারন তোমরা ২৫ বছরের মধ্যেই সবাই মরে যাবে। তোমাদের জন্ম হয়েছে, অন্যদের জীবন বাচানোর জন্য"। ক্লাসের অনেক ছেলেমেয়েই বুঝে উঠতে পারেনা একথার মানে। এর পরের দিনই স্কুল থেকে ঐ শিক্ষিকাকে বের করে দেয়া হয়!
হুমম আসলে এই স্কুলটা হলো ক্লোনদের পরিচালনার জায়গা। এই স্কুলের প্রতিটি ছেলে-মেয়ে কোন না কোন মানুষের ক্লোন। প্রতিটি বাচ্চার একজন অরিজিনাল আছে, যার জীন থেকে বাচ্চাটিকে ক্লোন করা হয়েছে। এই ক্লোনড বাচ্চাকে এখন বড় করা হচ্ছে, কারন যেদিন ঐ অরিজিনাল মানুষের শরীরের কোন অংশ অকেজো হয়ে পড়বে, সেদিন সেই অরিজিনালের জীন থেকে তৈরী করা ক্লোনড বাচ্চার শরীর থেকে সেই অংশ (অন্গ-প্রত্যন্গ) সার্জারির মাধ্যমে কেটে নেয়া হবে, এবং অরিজিনালের শরীরে যুক্ত করা হবে।
এই কঠিন বাস্তব মাথায় রেখে টমি/রুথ/ক্যাথি বড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে টমি আর রুথের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। আর ক্যাথি একদম একলা হয়ে যায়।

একসময় টমি/রুথের মাঝে ঝগড়াও হয়, এবং রুথ বুঝতে পারে, টমি ওকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। আর যতদিন ক্যাথি আছে ততদিন সেই ভয় ওর মন থেকে মুছে যায় না। তাই একদিন রুথ, ক্যাথিকে অনেক উল্টা-পাল্টা কথা বলে ("তুমি অপেক্ষা করছ, যাতে আমাদের সম্পর্ক ভেংগে যায়, আর তুমি টমির সাথে সম্পর্ক করতে পারো, তাইনা?")। ক্যাথি তার ছোটবেলার বন্ধুর মুখে এসব শুনে অনেক কষ্ট পায়। সে পরদিনই দুরে চলে যাবার জন্য একজন কেয়ারার ( Carer - যে অন্য ক্লোনদের অপারেশনের আগে/পরে বিভিন্ন দিক দিয়ে সাহায্য করে ) হবার জন্য আবেদন করে। ক্যাথির আবেদন মন্জুর হয়ে যায়, আর জীবনে প্রথম বারের মতো সে টমি আর রুথ থেকে আলাদা হয়ে অনেক দুরে চলে যায়।
প্রায় ১০ বছর কেটে যায়, কেয়ারার হিসেবে ক্যাথির জীবন ভালোই কাটছে। সে অনেক কাছে থেকে দেখতে পায় কিভাবে ক্লোনদের জীবন আস্তে আস্তে নিভে যায়, যখন একটি ক্লোনকে তার অরিজিনালের জন্য শরীরের অন্গ দান করতে হয়। একদিন হাসপাতালে তার কাজের মাঝে সে কম্পিউটারের মনিটরে একটি চেনা মুখ দেখতে পায়। সেই রুথ তার ছোট বেলার বান্ধবী। সে ডেস্কে বসা মহিলার কাছ থেকে রুথের সমস্ত খবর জানতে পারে। মহিলা তাকে জানায়, রুথ তার ২টি অন্গ দিয়েছে, আর আরেকটি দেবার জন্য হসপিটালে আছে। যখন একজন ক্লোন তার দরকারী সব অন্গ দান করে, তখন সেটাকে বলা হয় Completion. মানে সেই ক্লোন তার জীবনের কাজ complete করল। Completion এর পর কোন ক্লোনই আর বেচে থাকেনা। কারন বেচে থাকার মত সব দরকারী অর্গান ততদিনে তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে।
ক্যাথি ধীরে ধীরে রুথের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়, গিয়ে দেখে রুথ বাথরুমে। ওর বিছানার পাশে ছোটবেলার কিছু পুতুল দেখতে পায়। এর মাঝে রুথ বের হয় এবং ক্যাথি দেখে রুথের ভন্ঙুর স্বাস্থ্য। কাশতে কাশতে রুথ এগিয়ে আসে, ক্রাচ ছাড়া এক পা ফেলতে পারেনা। দুই বন্ধুর মাঝে কথা হয়, ক্যাথি জানতে পারে টমিও ২টি অর্গান দান করেছে।
ওরা দুজনে মিলে টমির সাথে দেখা করে। এত বছর পর টমিকে দেখে খুব খুশি হয়ে দুজনই। ক্যাথি ওদের নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে যায়। ওখানে বসে গল্প করতে করতে রুথ মাফ চায় ক্যাথির কাছে। রুথ বলে "আমি জানতাম ক্যাথি তুমি টমিকে ভালবাসো, কিন্তু আমি একা হয়ে যেতে চাইনি, তাই আমি জোর করে টমির সাথে সম্পর্ক করেছিলাম"। রুথের মুখে এই বিশ্বাস ঘাতকতার কথা শুনে ক্যাথি বোবা হয়ে যায়। এরপর রুথ ওদের একটা ঠিকানা দিয়ে বলে, "এখানে যাও। এখানে গিয়ে বল, তোমাদের ভালবাসার কথা তাহলে তোমরা কিছুদিন বেশী বাচতে পারবে, তোমাদের অর্গান ডোনেশন দেরীতে নেয়া হবে। যারা সত্যিকারের প্রেমিক যুগল তারা আগেও এরকম করে বেশীদিন বাচতে পেরেছে। তোমরা এটা কর, কিছুদিন বেশী নিজেদের সাথে সময় দেবার জন্য"। টমি বিরক্ত হলেও ঠিকানাটা নেয়।
এদিকে রুথের Complete করার দিন আসে। ডাক্তাররা রুথের বুক থেকে লিভার কেটে নেবার পর পরই সে মারা যায়।
অন্যদিকে টমি আর ক্যাথি ঐ ঠিকানায় যায়, যেখানে গেলে ওদের ডোনেশনের সময় আরো পেছানো যাবে। ওখানে গিয়ে ওরা আবিস্কার করে, এটা ওদের সেই বোর্ডিং স্কুলের হেডমিস্ট্রেসের বাসা। টমি তার সাথে আনা কিছু পেইনটিং দেখায়, ও বোঝানোর চেষ্টা করে যে, ঐসব পেইনটিং গুলোতে ক্যাথির জন্য তার ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। হেডমিস্ট্রেস তাকে জানায়, ডোনেশন পেছানোর কোন নিয়ম নেই। আগে কখনই হয়নি এরকম, আর হবেও না ভবিষ্যতে।
তাদের সমস্ত আশা ভেংগে যাবার জন্যই বোধহয় ফিরতি পথে টমি বাচ্চাদের মতো কেদে উঠে। দুহাত উপরে তুলে চিৎকার করে সে জবাব চায়। কিন্তু কোন জবাব পায়না। ক্যাথি ওকে আকড়ে ধরে।
এরপরে দেখা যায় টমি অপারেশনের টেবিলে শুয়ে আছে। তার হাতে নল লাগানো, গায়ে আগের দেয়া ডোনশনের ক্ষত এখন যেন শুকায়নি। সে অপারেটিং রুমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে, যেখানে দাড়িয়ে আছে ক্যাথি। সমস্ত ব্যাথা নিয়ে ক্যাথি দেখে তার ভালবাসার মানুষটাকে মৃত্যুর জন্য তৈরি করছে ডাক্তাররা। টমির নল দিয়ে চেতনানাশক ইনজেকশন দেয়া হয়, আর টমির মুখে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে, কারন মৃত্যুর শেষ মুহুর্তে তার চোখের সামনেই সে ক্যাথির চেহারা দেখতে পাচ্ছে।
টমি চেতনা হারানো সাথে সাথেই ডাক্তাররা ওর শরীরে কাজ শুরু করে দেয়, এই দৃশ্য না দেখার জন্যই বের হয়ে যায় ক্যাথি।
এরপর ক্যাথি গাড়ী নিয়ে বের হয়ে যায়। এক অচেনা, অজানা গাছের নিচে সে গাড়ী থামায়। তার মনে হয় ঠিক এই গাছের নিচেই যেন তার সমস্ত শৈশবের সুখকর সময়গুলো এসে জমা হয়েছে। যেন একটু খুজলেই সে সন্ধান পাবে সেই সুখের। একটু অপেক্ষা করলেই যেন ঐ দিগন্ত দিয়ে টমি হেটে হেটে আসবে, আর এসে মুচকি হেসে ওর হাত ধরবে।
এবার ক্যাথি ডোনেশনের পালা, হাসপাতাল থেকে নোটিশ এসেছে, এক মাস পরই ওর প্রথম ডোনেশন। সে জানে এভাবে সেও চলে যাবে। কিন্তু ক্যাথির খুব জানতে ইচ্ছে হয়, যাদের জীবন বাচাতে ওরা নিজেদের শরীর কেটে দিচ্ছে, ওদের ভাগ্যটা কি ওর ভাগ্যের চেয়ে ভিন্ন? কারন শেষ পর্যন্ত আমাদের সবাইকেই তো Complete করতে হয়, আর শেষ সময় আমাদের সবারই মনে হয়, জীবনের সময়টা কত অল্প!
এখানেই মুভির শেষ! সমস্ত মুভিতে আমাদের দূঃখ বাড়ানোর জন্য মনে হয় পরিচালক ব্যাকগ্রাউন্ডে বেহালার সুর বাজিয়েছেন। আমার কাছে ক্যাথি চরিত্রের আভিনেত্রী Carrey Mulligan এর অভিনয় অনেক ভালো লেগেছে। এই চরিত্রে জন্য সে একাই ৬/৭ টি পুরস্কার জিতে নিয়েছে।
কিছু ভুল থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।
ডাউনলোড লিংক: Never Let Me Go মাএ 300mb.
স্ক্রিনশট: http://www.postimg.com/32000/photo-31781.jpg
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:১৩