somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপিঃ আনন্দঘন পরিবেশে Fort Qu'Appelle এ কয়েকটা ঘণ্টা কাটিয়ে এলাম-- কানাডা জার্নাল -৩

০৯ ই জুন, ২০২৩ রাত ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Quietness precedes darkness....
14 May 2023, 18:59 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada

গতরাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে বারটা পার হয়েছিল। আজ সকাল সাড়ে আটটায় দশ বারটি পরিবার মিলে পিকনিকে ফোর্ট ক্যু'পেল (Fort Qu'Appelle) যাবার প্রোগ্রাম আমরা এখানে আসার আগেই আমাদেরকে ইনক্লুড করে নির্ধারিত হয়েছিল। রিজাইনা থেকে গাড়িতে যেতে এক ঘণ্টার মত সময় লাগে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই যথাসময়ে তৈরি হবার একটা তাড়া ছিল। Fort Qu'Appelle কানাডা'র সাচকাচুয়ান প্রদেশের রাজধানী রিজাইনা থেকে ৭০ কিমি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি ছোট শহর। Qu'Appelle নদীর দক্ষিণ তীরে এ শহরটি গড়ে উঠেছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে এ শহরটিকে কানাডা'র পশমজাত দ্রব্যের ঐতিহাসিক বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ শহরটির জনসংখ্যা মাত্র ২২৫৭ জন।

অনতিদূরেই, রিজাইনা শহরের প্রবেশপথে/বহির্মুখে Costco মোড়ে গাড়ি থামিয়ে হাল্কা স্ন্যাকস ও চা-কফি খেয়ে নিলাম। গাড়িগুলোতেও তেল ভর্তি করা হলো। নির্ধারিত সময়ের সামান্য দেরিতে আমরা ফোর্ট ক্যু'পেল অভিমুখে রওনা হ'লাম। সুন্দর রাস্তা, সুন্দর দু'পাশের প্রকৃতি। একনাগাড়ে বরফপাত আর তীব্র শীতের কশাঘাতে জর্জরিত নাঙ্গা নাঙ্গা গাছগুলোয় কেবল নবকিশলয় প্রস্ফূটিত হতে শুরু হয়েছে। অনুমান করলাম, আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরেই প্রকৃতি সবুজে আচ্ছাদিত হতে শুরু করবে, আরও খানিকটা পরে আরও সুন্দর হবে। তখন হয়তো আবার এ পথে আসা যাবে আরেকদিন।

Pasqua, Echo, Mission, and Katepwa – Qu'Appelle উপত্যকার আশ-পাশ দিয়ে এ চারটি বড় হ্রদ প্রবাহিত। এগুলোই উপত্যকার ব্যস্ততম অংশ এবং সবচেয়ে বেশি জন-অধ্যুষিত। এগুলোর মধ্যেই একটির পাশে এসে আমাদের গাড়ি থামলো। হাল্কা ঠাণ্ডা মৃদুমন্দ বাতাস বইছিলো, হ্রদের জলে ছিল মৃদুহিল্লোল। সবাই বাসা থেকে পোর্টেবল চেয়ার, চাদর, মাদুর, পাটি ইত্যদি বসার সরঞ্জামাদি নিয়ে এসেছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন আহার্য দ্রব্যাদি এনেছিল। এ ছাড়া যে যার মত চা, কফি এবং বাচ্চাদের পছন্দানুযায়ী স্ন্যাকস নিয়ে এসেছিল। ইকবাল নামে জনৈক আয়োজক অনেক যত্ন করে আমার হাতে চায়ের একটি ছোট ফ্লাস্ক দিয়ে গেল। আমরা কয়েকজন মিলে অত্যন্ত চমৎকার সেই চা পান করলাম।

বাচ্চারা চরম আনন্দে চারিদিকে ছুটাছুটি শুরু করে দিল। ওদের খেলার জন্য কিছু ব্যবস্থা ছিল। তাদের মা বাবারা খোশ গল্পে মেতে উঠলো, কেউ কেউ হ্রদের তীর ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। একটু পরে সবাইকে লাঞ্চ প্যাকেট দেয়া হলো। অনুষ্ঠান স্থলে কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হবার পর একটা সমস্যা দেখা দিল; সেখানে কাছাকাছি কোন ওয়াশরুমের ব্যবস্থা নেই। যাদের প্রয়োজন হলো, তারা গাড়ি নিয়ে অনতিদূরের একটি মার্কেটপ্লেসে গিয়ে রেস্টুরেন্ট/কফিশপ থেকে কাজ সেরে এলো। বিকেলে মহিলা ও শিশুদের জন্য কিছু খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল। আয়োজকরা এসব প্রতিযোগিতায় আমাকে অন্য কয়েকজনের সাথে বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ জানালো। আমি সানন্দে সম্মত হ'লাম। প্রথমে ছিল বাচ্চাদের জন্য মার্বেল দৌড় প্রতিযোগিতা, পরে নারীদের জন্যেও একই প্রতিযোগিতা। এর পরে নারীদের পিলো পাসিং এবং সবশেষে বয়সভেদে দুই দলে বিভক্ত বাচ্চাদের মেমোরী টেস্ট। সবগুলো প্রতিযোগিতাই সুন্দরভাবে সুসম্পন্ন হয়েছিল এবং প্রতিযোগিতার পর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছিল। বিজয়ী হোক বা না হোক, অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক শিশুই কিছু না কিছু পুরস্কার পেয়েছিল। খেলাগুলো পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল সবুজ, তার সাথে আরও কয়েকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করেছিল। এতগুলো বাচ্চাকে ঠিকমত ব্রীফিং করে, তাদেরকে সামলিয়ে প্রতিযোগিতায় পাঠাতে আয়োজকদেরকে বেশ গলদঘর্ম হতে হয়েছিল।

এক ফাঁকে আমি একটু আলাদা হয়ে উপত্যকার আশে পাশে ঘুরে এলাম। কিছু ছবিও তুললাম। হ্রদের জলের ছবি তুলতে তুলতে আমার মনে ভাসছিলঃ

ক্যু'পেল এর জল

ক্যু'পেল এর জল
করে টলমল,
কুলুকুলু রবে
বহে নীরবে।

দূর থেকে এসে
থামে তীর ঘেঁষে।
আকাশটা তাকে
ছায়া দিয়ে রাখে।

সূর্যের আলো
করে ঝলোমলো।
বিকেল বেলায়
ম্লান হয়ে যায়।

ক্যু'পেল এর জল
অথৈ অতল।
তার হিল্লোলে
অস্তরবি দোলে।

ফিরে এসে দেখি সবাই প্রস্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফেরার আগে জায়গাটাকে পরিষ্কার করে যে যার মত রওনা দিলাম। ঘরে ফিরে এসে মনে হলো সপ্তাহান্তের দুটো দিন বেশ ভালোই কাটালাম। পরের পাঁচদিনের ব্যস্ত সপ্তাহের জন্য সবাই মানসিকভাবে তৈরি হতে থাকলো। আমাদের দু'জনের অখণ্ড অবসর। আমাদের সে ব্যস্ততা নেই। কিন্তু মস্তিষ্ক তো অলস বসে থাকেনা। তাই কিছু না কিছু ভাবতেই হয়, কিছু না কিছু করতেই হয়, যার কিছু কিছু আপনাদের সাথে শেয়ার করি। এসব করেই দিন কেটে যায়।

রিজাইনা, কানাডা
১৪ মে ২০২৩


নীচের ছবিগুলো আমার নিজস্ব সেলফোন ক্যামেরা আই-১৩ দিয়ে তোলা। প্রত্যেকটি ছবির নীচে ছবি তোলার স্থান, সময় ও তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।




Welcome board
14 May 2023, 20:13 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


বহে নিরবধি.....
14 May 2023, 16:03 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


Forlorn.....
14 May 2023, 17:09 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


Loved this sight, loved the soil.
14 May 2023, 17:11 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


Country roads.... take me home
14 May 2023, 17:14 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


A view of the Qu'Appelle valley....
14 May 2023, 17:14 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


Railway lines.... they attract me wherever they are!
14 May 2023, 20:12 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


Reflection....
14 May 2023, 17:48 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


Anayah appearing in the memory test...
14 May 2023, 19:21 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


At the lake side
14 May 2023, 16:28 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


জলতরঙ্গে আলোর খেলা....
14 May 2023, 17:26 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada


Sunset pictures, taken from the running car while returning home
14 May 2023, 20:27 @Fort Qu'Appelle, SK, Canada
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৩ সকাল ১১:১৮
৪৫৬ বার পঠিত
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস সরকার নিজেই নিজের চাপ তৈরি করছে

লিখেছেন রাকু হাসান, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩


ইউনূস সরকার সব সংস্কার কিংবা কাজ করতে পারবে না ,সেটা নিয়মিতর নিয়ম মেনে নিতে হবে । রাজনৈতিক দলগুলো , যে কালচার তৈরি করে গেছে সেটা এই সরকার আমূলে বদলে দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×