বিরতির এক ফাঁকে আয়োজক এবং অংশগ্রহণকারীদের সাথে
১৩ মে ২০২৩
আজ আমাদের কানাডা পৌঁছানোর প্রথম সপ্তাহ পূর্ণ হলো। আজ বিকেলে আমাদের স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটি কর্তৃক আয়োজিত একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাবার কথা। এ নিয়ে গত রাত থেকেই আনায়া বেশ এক্সাইটেড, তার সাথে সাথে আমরাও। সকালে উঠেই কে কী পোষাক পরবে সেটা ওর দিদি ঠিক করে দিল। তানিয়া সকালে ওর খালাকে টেলিফোন করে অনুষ্ঠান সম্পর্কে একটা প্রাক-ধারণা দিল। অনুষ্ঠানে যেন আমরা সবাই সময়মত উপস্থিত হই, সে ব্যাপারেও একটু তাগিদ দিল। খুব বড় কোন অনুষ্ঠান নয়, রিজাইনায় বসবাসকারী দশ পনেরটা বাংলাদেশি পরিবার মিলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। তারা নিজেরাই স্ক্রিপ্ট লিখে, উপস্থাপন করে এবং তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে সবাই মিলে গান গেয়ে, নৃ্ত্য পরিবেশন করে, কবিতা আবৃত্তি করে অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সামান্য বিশ্রাম নিলাম। আনায়াকে ওর দিদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রস্তুত করে নিজেও তৈরি হয়ে নিল এবং আমাদেরকে রওনা হবার তাগিদ দিল। আমরা যথাসময়ে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থি্ত হ'লাম।
স্বদেশভূমি থেকে প্রায় আঠার হাজার কিলোমিটার আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে কিছুটা উচ্চমানের জীবন যাপনের আশায় কানাডায় এসে রিজাইনায় প্রবাস জীবন যাপনকারী বাংলাদেশি এই পরিবারগুলোর আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ হ'লাম। বিশেষ করে আপন সন্তানেরা যেন স্বদেশীয় সংস্কৃতি ভুলে না যায়, এজন্য ওরা সবাই সচেষ্ট থাকে। এজন্য ওরা সন্তানদের সাথে বাসায় সচেতনভাবে ইংরেজী পরিহার করে বাংলায় কথা বলে। সুযোগ পেলেই ওরা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দেয় এবং পারফরম্যান্স যেমনই হোক না কেন, এ ধরণের অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণে ওদের উদ্বুদ্ধ করে। এ অনুষ্ঠানটির উপলক্ষ ছিল দ্বৈতভাবে বৈশাখ বরণ এবং ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলন। তাই বাচ্চাদের এবং তাদের মা-বাবার চোখে মুখে পুরোটা সময় জুড়ে উৎসবের এবং আনন্দের একটা স্বতঃস্ফূর্ত ছাপ ছিল। বাচ্চা-বুড়ো প্রায় সবাই বৈশাখী সাজে সজ্জিত হয়েছিল।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিল তানিয়া আর ওর স্বামী সবুজ। ছন্দে ছন্দে ওদের স্বচ্ছন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থাপনা অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং উপভোগ্য ছিল। আমাদের আনায়া ওর দুইজন কাজিন এবং আরও কয়েকটি বাচ্চার সাথে তানিয়ার নেপথ্য তত্ত্বাবধানে "আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি" গানটির তালে তালে একটি নৃ্ত্য পরিবেশন করলো। নাচের উপর ওর কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। ওর নাচ দেখে মনে হলো ওর ফুপি রিহার্সেল এর জন্য সামান্য যে ক'দিন সময় পেয়েছিল, তাতেই ওকে ঘষে মেজে নৃ্ত্য পরিবেশনের জন্য তৈরি করে নিয়েছিল। বাচ্চারা সুন্দর সুন্দর কবিতা ও ছড়া আবৃত্তি করে, কোথাও কেউ কোন হোঁচট না খেয়েই। বিশেষ করে আমি মুগ্ধ হয়েছি সাজিদ এর কণ্ঠে একটি দীর্ঘ কবিতার নির্ভুল আবৃত্তি শুনে। অনুষ্ঠান সঞ্চালকদের অনুরোধে আমাকেও একটি স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতে হয়। আমি 'পথ চলা' শিরোনামে আমার একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ (আবৃত্তি নয়) করেছি।
চা-নাশতাসহ নৈশভোজের (প্রকৃতপক্ষে সান্ধ্যভোজ) সব খাবার-দাবারই ছিল হোম-মেড। ভর্তা ভাজি, মাছ মাংস, দই মিষ্টান্নসহ সব কিছুরই আয়োজন ছিল, এমনকি পান্তা ভাতেরও। অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে মাগরিবের নামায এবং সান্ধ্যভোজের জন্য সংক্ষিপ্ত বিরতি দেয়া হয়। সেই সুযোগে টুকটাক আলাপচারিতার মাধ্যমে অনেকের সাথে আমরা পরিচিত হয়ে নেই। এর মধ্যে আমার আলমা মাটর এমসিসি'র এক্স-ক্যাডেট নাসিম এর সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হলো এবং কলেজ নিয়ে কিছু স্মৃতিচারণ হলো। এক প্রজন্ম ব্যবধানের, ৩৩ ব্যাচের নাসিম আমার কাছ থেকে আমাদের সময়ের কলেজের কথা আগ্রহের সাথে শুনে নিল এবং তাদের ও আমাদের সময়ের একটা তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরলো। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে কিছু তাৎক্ষণিক ফটোসেশনও চললো। বিরতির পর পুনরায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এবারে কিছুটা ধুম ধারাক্কা টাইপেরও নৃ্ত্য-গীত পরিবেশিত হয়, যেখানে মা বাবার সাথে সাথে বাচ্চা-কাচ্চারাও নাচ গানে অংশ নেয়। বিশেষ করে একটি ছোট্ট ছেলে খুবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেচে যাচ্ছিল। চাপা পড়ার ভয়ে বারবার কেউ না কেউ তাকে কোলে করে সরিয়ে দিলেও খানিক পরেই সে আবার নাচতে নাচতে বড় নাচিয়েদের দলে যোগদান করছিল। তার নাচ দেখে মনে হচ্ছিল তার ভেতরে ছন্দ আছে। একটু বাজনা শুনলেই সে নাচের ছন্দে আন্দোলিত হতে থাকে। অনুষ্ঠানের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল দম্পতিদের যুগলে যুগলে নৃ্ত্য-গীত ও অভিনয়ে অংশগ্রহণ।
সব মিলিয়ে একটি আনন্দঘন পরিবেশে আজকের বিকেল ও সন্ধ্যাটা কাটলো। সবচেয়ে বড় কথা, প্রবাসে বসে স্বদেশীয় উৎসব পার্বনগুলোর কথা মনে রেখে এমন সম্মিলন আয়োজন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত রাখে, সেই সাথে একে অপরের সাথে যূথবদ্ধ থাকার ফলে কমিউনিটি ফীলিংসও গড়ে ওঠে এবং দৃঢ় হয়। রিজাইনা প্রবাসী সকল বাংলাদেশি পরিবারগুলোর প্রতি আমার আন্তরিক শুভকামনা রইলো। প্রবাসে তাদের অবস্থান সুখের হোক, শান্তির হোক, সমৃদ্ধির হোক!
রিজাইনা, কানাডা
১৩ মে ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ৬৩৮
কয়েকজন অংশগ্রহণকারী
১৩ মে ২০২৩
উৎফুল্ল তিন অংশগ্রহণকারী
১৩ মে ২০২৩
অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে আনায়া আমার কোলে উঠে বসলো
১৩ মে ২০২৩
দুই সঞ্চালক এবং তিন ক্ষুদে শিল্পীর সাথে
১৩ মে ২০২৩
উৎফুল্ল শিশুরা....
১৩ মে ২০২৩
সায়াহ্নকালে.... (আহ্নিক গতি এবং জীবন পরিক্রমা, উভয় গতির)
১৩ মে ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২৩ রাত ৮:০০