গত কয়েকদিন ধরে আমাদের এলাকার তাপমাত্রা থাকছে সর্বোচ্চ ৩২ আর সর্বনিম্ন ২২ ডিগ্রী (সেলসিয়াস) এর মধ্যে। মোটামুটি সহনীয় তাপমাত্রা বলা যায়। আজকের দিনের জন্য আগাম বার্তাও ছিল একই। সকালে খোলা জানালা দিয়ে আরামদায়ক একটা হাল্কা বায়ুপ্রবাহ গায়ে এসে লাগছিল। বেশ আরাম অনুভব করছিলাম। খানিক পরে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম, পীচ ঢালা পথটা ভেজা ভেজা। বুঝলাম, ভোর রাতের পরে আকাশটা ঝিরিঝিরি ঝরেছে। পূব-আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, হাল্কা রঙিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে চলছে সূর্যের লাজুক উঁকিঝুকি । মিনিট পাঁচেক পরেই মেঘ সরে গেলে সূয্যিমামা হেসে উঠলেন। কয়েকটি পাখি ইতস্ততঃ ওড়াউড়ি করছিল। একটা কোকিলও কুউউ কুউউ করে ডাকছিল, কিন্তু যখনই আমি তার বিরহী তান রেকর্ড করার জন্য ভিডিও করা শুরু করি, তখনই সে হতচ্ছাড়া কোকিলটা তার গান বন্ধ করে দেয়। কয়েকবার চেষ্টার পর দুটো মাত্র ডাক ধারণ করতে পারলাম। যেই না ভিডিও ধারণ বন্ধ করলাম, অমনি আবার শুরু হলো তার ক্রমাগত একটানা কুহুতান। আমি জানি আমি যদি আবার চেষ্টা করতাম, অমনি সে আবার চুপ হয়ে যেত। আমাদের মাঝে চাক্ষুষ কোন যোগাযোগ না থাকলেও এ কথা আমি পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
দুপুরে তাপমাত্রা বাড়লেও মৃদুমন্দ বাতাস বইছিল, ফলে গরম সেরকম অনুভূত হয় নি। যোহরের নামাযের পর মাসজিদের পার্শ্বস্থ পুকুরের চারপাশে খানিকক্ষণ হেঁটে বেড়ালাম। বাতাসের ফলে জলের বুকে সৃষ্ট মৃদুহিল্লোল কিছু “ripples of life” এর কথা মনে করিয়ে দিল। জীবনের রিখটার স্কেলে বড় বড় কম্পনগুলোর আনন্দ বা বেদনার আতিশয্য মানুষকে শারীরিকভাবেও কম্পমান করে তোলে। মানুষ হয় ভীত-সন্ত্রস্ত, নয় বিমূঢ়-বিহ্বল হয়। কিন্তু মৃদু হিল্লোল দ্বারা সৃষ্ট তিরতির করে মানুষের মনে বয়ে যাওয়া অনুভূতিগুলো মানুষকে শান্ত করে, ভাবতে শেখায়, সৌম্যভাব দান করে।
ছোটবেলায় ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ থাকার সেই বিখ্যাত ছড়া-কবিতা পড়েছি। কিন্তু তালগাছের মত নারকেল গাছও যে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সেটা অনেক সময় আমরা খেয়াল করি না। সাধারণতঃ তাল গাছ সোজা হয়েই দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু নারকেল গাছকে প্রায়ই বাঁকা হয়েও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আসরের নামাযের পর হাঁটার পথে সেরকমই একটা বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দর নারকেল গাছের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। গাছটির নীচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পুনরায় হাঁটা শুরু করলাম। ফেরার পথে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া কমলা আলোর সূর্যটাকে দেখে মনটা কেমন করে উঠলো। এ সময়টা আমাকে থিতু হতে বলে, তাকিয়ে চারিদিক দেখতে বলে। কিছুক্ষণ পর শুরু হবে পাখিদের নীড়ে ফেরা। প্রথমে কিছুক্ষণ সরব কলতান, তারপরে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া। একটা বাড়ির সামনে রাস্তার উপর শুয়ে থাকা একটা কুকুরকে দেখতে পেলাম। ওর সাথে আমার সখ্য নেই, আবার আমরা একেবারে অপরিচিতও নই। মাঝে মাঝেই পথ চলতে ওর সাথে আমার দেখা হয়, তাই ও আমাকে কিছুটা চেনে। আমার পদশব্দ শুনে তন্দ্রারত কুকুরটি কোন মতে চোখ খুলে আমাকে দেখে নিয়ে পুনরায় আয়েসে চোখ বুঁজলো। ও কোন পোষা কুকুর নয়। যেখানে আদর পায় সেখানেই শুয়ে থেকে পাহারা দেয়।
এশার নামাযের পর আবার সেই পুকুরপারে এক চক্কর দিলাম। বয়স্ক লোক, মহিলা ও শিশুদের জন্য পুকুর পাড়ে রক্ষিত একটি বেঞ্চে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। উদ্দেশ্য বিশ্রাম নেয়া যতটা না, তার চেয়ে বেশি ছিল রাতের পুকুরের এবং পুকুর পারের দুই একটি ছবি তোলা, আর ‘টেক অফ’ করা উড্ডীয়মান প্লেনেরও দুই একটা ছবি তোলা। স্থলে মটর যান ও ধাবমান ট্রেনের শব্দ, গগনে ছোট বড় প্লেনের আসা যাওয়ার। শব্দদূষণ তো কিছুটা হয় বটেই, তবে আমার এ শব্দসাগরে ডুবে থাকতে মন্দ লাগে না। অন্যান্য সময় বেশ বড় বড় প্লেন ওড়ে, কিন্তু আজ কেবল তিনটে ক্ষুদ্র আকারের প্লেন উড়ে গেল। বড়গুলোর ওড়া শুরু হবে মধ্যরাতের দিকে, যা আমি সাধারণতঃ ব্যালকনি কিংবা শয়নকক্ষ থেকে দেখে থাকি। শেষের ছোট প্লেনটি উড়েও ঠিক আমার মাথার উপর এলো না, খানিক বাঁক নিয়ে দূর থেকেই আরও দূরে চলে গেল। কাঙ্খিত এবং প্রতীক্ষিতদের এভাবেই দূর থেকে দেখা দিয়ে দূরে চলে যাওয়াই যেন প্রকৃতির নিয়ম।
ঢাকা
১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ৫৭২
"পূব-আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, হাল্কা রঙিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে চলছে সূর্যের লাজুক উঁকিঝুকি"।
ছবি তোলার সময়ঃ সকাল ০৭ঃ৩৮, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"মিনিট পাঁচেক পরেই মেঘ সরে গেলে সূয্যিমামা হেসে উঠলেন"।
ছবি তোলার সময়ঃ সকাল ০৭ঃ৪৪, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"বাতাসের ফলে জলের বুকে সৃষ্ট মৃদুহিল্লোল কিছু “ripples of life” এর কথা মনে করিয়ে দিল।"
ছবি তোলার সময়ঃ দুপুর ০১ঃ৪২, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"একটা বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দর নারকেল গাছের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। গাছটির নীচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পুনরায় হাঁটা শুরু করলাম"।
ছবি তোলার সময়ঃ বিকেল ০৫ঃ০৭, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"একটা বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দর নারকেল গাছের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। গাছটির নীচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পুনরায় হাঁটা শুরু করলাম"।
ছবি তোলার সময়ঃ বিকেল ০৫ঃ১৯, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"ওর সাথে আমার সখ্য নেই, আবার আমরা একেবারে অপরিচিতও নই। মাঝে মাঝেই পথ চলতে ওর সাথে আমার দেখা হয়, তাই ও আমাকে কিছুটা চেনে। আমার পদশব্দ শুনে তন্দ্রারত কুকুরটি কোন মতে চোখ খুলে আমাকে দেখে নিয়ে পুনরায় আয়েসে চোখ বুঁজলো। ও কোন পোষা কুকুর নয়। যেখানে আদর পায় সেখানেই শুয়ে থেকে পাহারা দেয়"।
ছবি তোলার সময়ঃ বিকেল ০৫ঃ১৩, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"ফেরার পথে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া কমলা আলোর সূর্যটাকে দেখে মনটা কেমন করে উঠলো। এ সময়টা আমাকে থিতু হয়ে চারিদিক তাকিয়ে দেখতে বলে"।
ছবি তোলার সময়ঃ বিকেল ০৫ঃ১৩, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"কিছুক্ষণ পর শুরু হবে পাখিদের নীড়ে ফেরা। প্রথমে কিছুক্ষণ সরব কলতান, তারপরে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া।"।
ছবি তোলার সময়ঃ বিকেল ০৫ঃ১৮, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"উদ্দেশ্য বিশ্রাম নেয়া যতটা না, তার চেয়ে বেশি ছিল রাতের পুকুরের এবং পুকুর পারের দুই একটি ছবি তোলা"।
ছবি তোলার সময়ঃ রাত ০৮ঃ৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
"উদ্দেশ্য বিশ্রাম নেয়া যতটা না, তার চেয়ে বেশি ছিল রাতের পুকুরের এবং পুকুর পারের দুই একটি ছবি তোলা"।
ছবি তোলার সময়ঃ রাত ০৮ঃ৩৬, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
ডিভাইসঃ আই-১৩
(চারটা ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপও ধারণ করেছি। কিন্তু ভিডিও ক্লিপ কিভাবে আপলোড করতে হয়, তা এখনও শিখিনি বলে সেগুলো আপলোড করতে পারলাম না। এজন্য দুঃখিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:৪২