প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন, আমার এ লেখাটা সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি "দেবী"র কোন রিভিউ নয়, কাল্পনিক_ভালবাসা কর্তৃক রচিত মিসির আলি এবং দেবী শীর্ষক একটা সাম্প্রতিক পোস্টে করা আমার একটি মন্তব্য এ পোস্টের বহুলাংশ জুড়ে রয়েছে। যারা ওনার পোস্টে আমার মন্তব্যটি ইতোমধ্যে দেখেছেন, তাদের কাছে আমার এ পোস্ট চর্বিত চর্বণ মনে হতে পারে, সেজন্য তাদের কাছে আমি আগে ভাগেই দুঃখ প্রকাশ করছি। "দেবী" নয়, বরং দেবী দর্শন করতে গিয়ে আমার কিছু সুখানুভূতিই এ পোস্টের মূল উপজীব্য।
গত পরশু সকালে গিন্নী অনেকটা আব্দার করেই বললেন, আজ বিকেলে আমরা কিন্তু “দেবী” দেখতে যাব, তুমি না করবে না। দেবী দর্শনের এ প্রস্তাবে প্রথমে একটু চমকিত হয়েছিলাম, ভাবছিলাম এ কোন দেবীর কথা বলছেন তিনি! সম্প্রতি তো দূর্গা পূজো শেষ হয়ে গেল, বাসার কাছে একটি পূজো মন্ডপও বসেছিল, কিন্তু তিনি নিশ্চয়ই সে দেবীর কথা বলছেন না আমাকে। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় দেবী দেখতে যাবে? যমুনা ফিউচার পার্কের কথা বলাতে মুহুর্তেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল, তিনি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত, বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র “দেবী”র কথা বলছেন। এর আগেও তিনি একবার আমার সাথে একসাথে হলে গিয়ে ‘বেলাশেষে” দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত নানা কারণে সময় দিতে পারিনি বলে সে ছবিটা আর আমাদের দু'জনের একসাথে বসে দেখা হয়নি। অথচ শুনেছি, আমাদের বয়সীদের আবেগ অনুভূতিই নাকি ছবিটির মূল উপজীব্য ছিল। যাহোক, এ নিয়ে আমার ভেতরে এমনিতেই একটা গাফিলতিবোধ কাজ করছিল। তাই এবারে এক কথায় রাজী হয়ে গেলাম। এছাড়া এ ছবির চিত্র পরিচালককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। সম্প্রতি চারিদিকে শুনছি, এ ছবি নিয়ে ওনার বেশ নাম ডাক হয়েছে। তাই একবার ভাবলাম, যাই দেখে আসি, উনি কেমন কাজ করেছেন।
তবে “দেবী” একে তো সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি, তার উপর হুমায়ুন আহমেদ এর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরীর মত ডাকসাঁইটে তারকা এতে অভিনয় করেছেন, এসব কারণে মুক্তির আগেই এ ছবি নিয়ে বেশ বড় একটা hype বাজারে তৈরী হয়েছিল। তাই এ ছবির টিকেট প্রাপ্তি নিয়ে একটা সংশয় এবং তজ্জনিত চাপ রাজী হবার পর থেকেই ভেতরে ভেতরে অনুভব করছিলাম। তাই ছোট ছেলের শরণাপন্ন হ’লাম, ওকে ফোন করে অনুরোধ করলাম একটু ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখতে, “দেবী” ছবির দুটো টিকেট অনলাইনে কাটা যায় কিনা। ওর সাথে কথা বলে বুঝলাম, ওকে ওর মা আগেই এ ব্যাপারে বলে রেখেছিলেন, কিন্তু ও সেটা বিশ্বাস করেনি কারণ ও কদাচিৎ আমাদেরকে হলে গিয়ে মুভি দেখতে দেখেছে। যাই হোক, আমার কাছ থেকে অনুরোধ পাবার পর ও বেশ উৎসাহ নিয়ে অনলাইনে দুটো টিকেট কিনে টিকেট কনফার্মেশন এর একটা কপি আমাকে মেইল করে পাঠিয়ে লিখলো যে হলে ঢোকার সময় এই মেইলটা গেটে দেখাতে হবে। তবে কোন ক্যাচাল এড়ানোর জন্য সেটার একটি প্রিন্ট কপি সাথে নিয়ে যেতে ও পরামর্শ দিল। আমার ঝামেলা ব্যস ঐ টুকুই- মেইলটার কপি করা। নিকটস্থ একটা শপিং মলের একটা ফটোকপি/কম্পিউটারের দোকানে কাজ করা একজন তরুণের সাথে সম্প্রতি পরিচয় হয়েছিল। ভাগ্যিস তার সেলফোন নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানাটা আমার ফোনে সেভ করে রেখেছিলাম। ছেলের মেইলটা ওকে ফরোয়ার্ড করে ওকে একটা ফোন দিয়ে অনুরোধ করলাম, ওটার একটা প্রিন্ট কপি করে রাখার জন্য। পরে ড্রাইভার পাঠিয়ে সেটা নিয়ে এলাম এবং সেই সাথে টিকেট বিষয়ক সব চিন্তার অবসান হলো। ছবি শুরু হবার দশ মিনিট আগে আমরা ব্লকবাস্টার সিনেমায় গিয়ে পৌঁছলাম। একটা নাতিদীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুটো মাসালা পপকর্ণ এর চোঙ্গা প্যাকেট হাতে করে আসন গ্রহণ করার সাথে সাথেই জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠলো। মিনিট বিশেক পরে ছেলে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, হলে প্রবেশ করতে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। ওকে জানালাম আমরা হলে বসে গেছি এবং ছবি দেখছি। ওর এই ফোনটা পেয়ে ভাল লাগলো। ওরা তিনভাই যখন ছোট ছিল, আমরা তখন ওদের সমস্যাগুলো সবসময় পুরোপুরি সমাধান করে দিতাম না। কিছুটা সমাধান করে ওদের ওপর ছেড়ে দিয়ে দেখতাম, ওরা নিজেরাই বাকীটুকু সমাধান করতে পারে কিনা। মনে হলো, সেও আজ আমাদের একটা ছোট্ট পরীক্ষা নিল; ইচ্ছে করেই একটু দেরীতে ফোন করে দেখে নিল, আমরা আমাদের বাকী পথটুকু নিজেরাই হাঁটতে পেরেছি কিনা।
ছবিটি দেখার পর ছবিটি নিয়ে অনেকগুলো রিভিউ সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং ব্লগে পড়লাম। পড়ে বুঝতে পারলাম, আমার মত অন্য অনেকেই ভেবেছেন, “আয়নাবাজী”তে চঞ্চল চৌধুরী যতটা সাবলীল ও সার্থক অভিনয় করতে পেরেছেন, “দেবী”তে তিনি তা পারেন নি। আর এ ছবিতে তার মেকাপ/গেটাপও মিসির আলীকে সফলভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি। "কন্ঠ এবং শারীরিক গঠনের দিক দিয়েও মিসির আলীর সাথে তার পার্থক্য রয়েছে। তবুও আমি ইতিবাচকভাবেই ছবিটিকে দেখছি" - কাল্পনিক_ভালবাসা এর এ কথাগুলোকেই আমারও মনের কথা বলে মনে হয়েছে। আর, এটাই প্রথম বাংলাদেশী প্যারাসাইকোলজিকাল হরর ফিল্ম, সে হিসেবে এ ছবিটা কিছুটা ছাড় তো পেতেই পারে। তবে জয়া আহসান এর অভিনয় বহুলাংশে অনবদ্য হয়েছে এ কথাটা সহজেই বলা যায়। নতুন শিল্পী হিসেবে ইরেশ জাকের এবং ফারিয়াও ভালই করেছেন। আরও ইতিবাচক/নেতিবাচক অনেক কিছুই বলা যায়, তবে আমি তা করছিনা। বহুযুগ পর শুধু আমরা দু’জন একসাথে ছবি দেখতে গিয়েছি, এটাই আমি বেশী উপভোগ করেছি। ছবি দেখার চেয়ে ছবি দেখার আগে পরে কাটানো সময়গুলো আরো বেশী ভাল লেগেছে।
ছবি দেখা শেষে দু’জনে KFC তে বসে আর্লী ডিনার করে ঘরে ফিরলাম। ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড আমাদের উভয়ের জন্য পরিত্যাজ্য, কিন্তু আমরা সেই সন্ধ্যায় নিয়মের একটু ব্যতিক্রম করতে সম্মত হয়েছিলাম। ফেরার পথে গাড়ীতে বসে মনে হলো, KFC এর ছোট গ্লাসের পেপসিতে যেন তৃষ্ণা মেটেনি। তাই পথে গাড়ী থামিয়ে একটা ঠান্ডা পেপসি’র বোতল কিনে নিষেধহীন পেপসিপানে একে অপরকে প্রশ্রয় দিতে দিতে আমরা বাড়ী ফিরেছিলাম।
বের হবার সময় যখন গাড়ীর জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, তখন দূর আকাশে চাঁদটা এভাবেই দেখা দিয়েছিল।
ঢাকা
২৩ অক্টোবর ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।