কুকুর কাহিনী
সন্ধ্যার পর পাশের হোলসেল মার্কেটে গিয়েছি সংসারের টুকটাক জিনিস কিনতে আমরা দুজন বুড়ো বুড়ি । সেই মার্কেটের পাশ দিয়ে এলাকার একটি রাস্তা গিয়ে মিশেছে বড় রাস্তায়। যার ওইপাশে আরেকটি শপিং সেন্টার। সেই হোলসেল মার্কেটের সামনের দিকে বিশাল চত্বর যেখানে গাড়ি পার্কিং ছাড়াও খোলা জায়গা। আমরা সাইড রাস্তা দিয়ে ঢুকতেই দেখি এক জোড়া ছেলে মেয়ে একটি কুকুরের সাথে লুকোচুরি খেলছে। ওকে রেখে এদিক ওদিক দৌড়ে যাচ্ছে। আর কুকুরটাও ওদের খুজে বের করছে। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। একটু পর ওরা কুকুরটিকে একটু দুরে নিয়ে রেখেই চোখের পলকে দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে পাশের শপিং সেন্টারের কাচের দরজা খুলে ঢুকে গেলো। কুকুরটা দৌড়ে গেল ঠিকই কিন্ত আর তাদের খুজে পেলো না। পাবেও না কারন ওখান থেকে উল্টো দিক দিয়ে বের হয়ে যাবার অনেক দরজা আছে। কুকুরটা পাগলের মত একবার এদিকে ওদিকে যাচ্ছে, দরজা ঠেলেতো আর ভেতরে ঢুকতে পারছে না সেই অবোলা প্রানিটি। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম দেখার জন্য ওরা ফিরে আসে কি না? নাহ নেই নেই নেই তার মালকিনদের দেখা, আমার সংগী জানালো "বুঝেছো ওরা তাকে জন্মের মত পরিত্যাগ করে গেলো"। আমার যে কি ভীষণ কষ্ট লাগছিলো তা বলার মত নয়। কিছু না কিনেই ফিরে আসলাম।
বিড়াল কাহিনী
বিকেলের দিকে পার্কে হাটতে গিয়েছি। এক চক্কর দিয়ে আসতেই দুর থেকে দেখি অদুরে সদ্য চোখ ফোটা ছোট্ট এক বিড়াল ছানা দুজন বিদেশি ছেলের পা বেয়ে উঠতে চেষ্টা করছে আর মিউ মিউ করছে। ছেলে দুটো তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি কাছাকাছি আসতেই ছেলে দুটো বিড়াল ছানাকে রেখে এগিয়ে গেল গেটের দিকে। আমি তখন ছানাটাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি দ্রুততার সাথে। বিড়াল ছানাটি করুন স্বরে মিউ মিউ করতে করতে আমার পিছু পিছু আসতে লাগলো। আমি বারবার পিছন ফিরে দেখছি সে দৌড়ে আসতে
চেষ্টা করছে। একসময় হাল ছেড়ে বসে পরলো আর আমার দিকে এমন করুনভাবে চেয়ে রইলো যা আমি লিখে বোঝাতে পারবো না। এটা বেশ আগের ঘটনা, আমি ব্লগে অনেকের মন্তব্যে বলেছিও। কিন্ত আজও আমি তার সেই তাকিয়ে থাকাটা ভুলতে পারি নি। পরদিন পার্কের কেয়ার টেকারকে জিজ্ঞেস করলাম ছানাটার কথা। সে বল্লো সে জানে না।
পাখি কাহিনি
বুনো পাখিদের প্রতি আমার ভালোবাসার কথা অনেকেই জানেন। দেশের বাইরে থাকলে ফোনে প্রথম প্রশ্ন থাকে পাখিগুলোকে খেতে দিয়েছে নাকি? আর নিজে থাকলে তো কথাই নাই। তাদের ভালোলাগার খাবার দেই নিয়মিত দিনে তিন চারবার। কয়েক মাস আগে নীচ তালা থেকে অভিযোগ আসলো আমরা কি পাখি পালি নাকি? পাখির খাবার উড়ে গিয়ে তাদের বারান্দা নোংরা করছে। কিছু দিন বন্ধ রেখে আবার একটু আধটু দেয়া শুরু করলাম। কিন্ত কাল গৃহকর্তা নিজে ফোন করলো আমার কর্তাকে। সেই একই অভিযোগ। ও বল্লো থাক আর দিও না, ওনাদের যখন সমস্যা হচ্ছে। আজ সকাল থেকে দিনভর একের পর এক টিয়া, বুলবুলি, শালিকরা খালি থালা সামনে নিয়ে চেচামেচি করছে বারান্দার গ্রীলের সাথে বেধে দেয়া ডালে বসে। আবার ক্যা ক্যা করতে করতে উকি দিয়ে দিয়ে দরজার ভেতরে আমাকে দেখে শালিকগুলো। আমার যে কি কষ্ট হচ্ছে বলার না। কিন্ত শহুরে জীবনে এমন হাত পা বাধা হয়েই হয়তো চলতে হবে। কিন্ত আমার শিকলি কাটা স্বাধীন পাখিদের কি হবে?
প্রথম ও দ্বিতীয় ছবিটি নেট।
তৃতীয়টি আমার মোবাইলে আমার তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:২৮