(ব্লগার সুরঞ্জনার নাতনী মানহা পারিসা সহ আমার সব কো-ব্লগারদের নাম না জানা ছোট ছোট বাবুদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত )
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা, তখন মানুষের জন্মই হয়নি। সে সময় আমাদের এই পৃথিবীটা কিন্ত আজকের মত এমন ছিল না। । তখন সূর্য্য, চাঁদ, সাগর কিন্ত আজকের মত এমন দুরে দুরেও থাকতোনা। এই পৃথিবীতে একত্রেই মিলেমিশে থাকত সবাই, প্রতিবেশীর মতই। সেই সময় সুর্য্য আর সাগর ছিল এক জন আরেক জনের প্রানের বন্ধু।
তখন সুর্য্য প্রায়ই বন্ধু সাগরের বাসায় বেড়াতে যেত, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে তারা নানা রকম গল্প স্বল্প করতো, সুখ দুঃখের আলাপ করতো। এই যে সুর্য্য প্রায়ই সাগরের বাসায় যেত কিন্ত সাগর কখনো তার বাড়ীতে বেড়াতে আসতোনা। এটা নিয়ে সুর্য্যের মনে একটা দুঃখ ছিল। শেষমেষ একদিন থাকতে না পেরে সুর্য্য তাকে জিজ্ঞেস করেই বসলো,
“ কিছু মনে করোনা বন্ধু একটা কথা জিজ্ঞেস করি তোমাকে”।
‘করো বন্ধু’ সাগর বল্লো।
“বলছিলাম কি বন্ধু, আমিতো তোমার বাসায় প্রায়ই বেড়াতে আসি। কিন্ত কই তুমিতো একটি দিনও আমার বাসায় বেড়াতে গেলেনা”!
সাগর সুর্য্যের গলায় অভিমানের সুর টের পেয়ে ইতস্ততঃ করে বল্লো, ‘বন্ধু অন্য কোন কারণ নেই, আসলে কি তোমার বাসাটা অনেক ছোট্ট। এখন আমি যদি আমার বাসার সব্বাইকে নিয়ে তোমার বাসায় বেড়াতে যাই তাহলে যে তুমি নিজেই ঘরে থাকতে পারবে না হে’।
এ কথা শুনে সুর্য্য মনমরা হয়ে পড়লো আর তা দেখে সাগরের মনটাও বিষন্ন হয়ে ঊঠলো। আর তাই সাগর তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
‘ঠিক আছে বন্ধু তোমার যদি মনে একান্তই ইচ্ছা থাকে যে আমাকে দাওয়াত করবে তাহলে তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে’।
“কি অনুরোধ বলতো” সাগ্রহে বলে ঊঠে সুর্য্য।
‘আমাকে নিতে হলে তোমাকে কিন্ত একটা বড় বাড়ী তৈরী করতে হবে। আবারও স্মরণ করিয়ে দেই, তোমাকে অবশ্যই একটি বিশাল বাড়ী তৈরী করতে হবে বন্ধু। কারন আমার সঙ্গী সাথীরা কিন্ত অগনিত আর তাদের বসার জন্য যে অনেক জায়গা দরকার’।
সুর্য্য তার বন্ধুকে বাড়ীতে নিতে এতই আগ্রহী ছিল যে সাথে সাথে প্রতিজ্ঞা করে বসলো, এবং জানালো যে সে খুব শীঘ্রই একটা বিশাল বাড়ী তৈরী করে সাগরকে আমন্ত্রন জানাবে।
সুর্য্য বাসায় আসতেই তার স্ত্রী চাঁদ চাঁদপানা মুখ করে একগাল হাসি নিয়ে তাকে দরজা খুলে দিল। সুর্য্য তখন তার স্ত্রীকে সবকিছু খুলে বল্লো, জানালো বন্ধু সাগরের কাছে তার প্রতিজ্ঞার কথা।
পরদিন সুর্য্য তার দেয়া প্রতিশ্রুতি মত বিশাল উঠোন সহ এক বিরাট বাড়ী তৈরী করতে শুরু করলো যেখানে কিনা সে তার বন্ধু আর তার সাথে আসা সঙ্গীসাথীদেরকে স্বাগত জানাতে পারে।
অনেক মিস্ত্রি আর লোকজন নিয়ে খুব দ্রুতই বাসা তৈরী করে ফেল্লো সুর্য্য আর পরদিনই বন্ধু সাগরকে আমন্ত্রন জানালো তার নতুন বাসায় বেড়াতে আসার জন্য।
দাওয়াত পেয়েই সাগর সুর্য্যের বাড়ীর দরজায় এসে হাজির।
‘বন্ধু কোথায় তুমি ? আমি এসে পরেছি, তোমার কোন অসুবিধা নেই তো’।
সুর্য্য সাগরের গলা শুনে খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলো, বল্লো , “আরে আসো আসো বন্ধু, না, না কোন অসুবিধা নেই”।
বন্ধুর আশ্বাস পেয়ে সাগর তখন তার রাজ্যের যত্ত রকম প্রানী আছে যেমনঃ দৈত্যের মত বিশাল তিমি মাছ, রাক্ষুসে হাঙ্গর, হাসিখুশি আমুদে ডলফিন, শক্ত গামলা ঢাকা কচ্ছপ, ভয়ংকর আট পা ওয়ালা অক্টোপাস থেকে ক্ষুদে চিংড়ি ঝিনুক শামুক সব্বাইকে নিয়ে জোয়ারের বেগে সুর্য্যের বাসার গেট পেরিয়ে উঠোনে এসে হাজির হলো। আর অমনি সুর্য্যের ঘরের ভেতর হাটু সমান পানি হয়ে পড়লো।
সাগর আবারও তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো ‘বন্ধু তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছেনা তো! আমি কি আরো আসবো’?
সুর্য্য আবার বল্লো “না কোন সমস্যা নেই বন্ধু, তুমি আসো”।
একথা শুনে সুর্য্যের অতিথি সাগর পুর্নোদ্যমে বিপুল জলরাশি সহ তার বিরাট লটবহর নিয়ে সুর্য্যের বাসার ভেতরে যাবার জন্য এগুতে লাগলো। সাথে সাথেই মানুষের মাথার সমান পানিতে ভরে উঠলো সুর্য্যের বাসা।
সাগর আবারও প্রশ্ন করলো ‘বন্ধু তুমি কি এখনো চাও আমি আমার লোকজন তোমার বাসায় আসি’?
চাঁদ আর সুর্য্য ঘটনা কিছু বুঝতে না পেরেই একসাথে বলে উঠলো “ হ্যা, হ্যা বন্ধু আসো,তোমার লোকজন নিয়েই আসো, কোন অসুবিধা নেই”।
সুর্য্যের আশ্বাস পেয়ে এবার পানির স্রোত প্রবল বেগে ঢুকতে শুরু করলো বাসার ভেতর। অবস্থা দেখে দিশেহারা সুর্য্য আর তার স্ত্রী চাঁদ কোনরকমে বাসার ছাদ আঁকড়ে ঝুলে রইলো কিন্ত একটু পরেই যখন ছাদের উপর দিয়ে পানির নহর বইতে শুরু করলো আর সেই তীব্র স্রোতের তোড়ে উপরে উঠতে উঠতে সুর্য্য আর চাঁদ আকাশে গিয়ে ঠেকলো । আকাশের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল তাদের । আর উপরে ওঠার জায়গা নেই । ঝুলে রইলো ওখানেই
আর তখন থেকেই বেচারা সুর্য্য আর চাঁদ এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে আকাশেই বসত গাড়লো চিরদিনের জন্য।
আমার কথাটি ফুড়োলো
নটে গাছটি মুড়লো ।।
ছবিঃ নেট, তবে এর উপরে আমারো কিছু আকিবুকি
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৬