এমনটি চাইনি সুস্মিতা,
আজকাল তুমি যেন বড্ড সংসারী হয়ে পড়েছো !
খোজ নিলেই শুনি রসুই ঘরে পেয়াজ কুঁচাচ্ছো ।
হয়তো রুটি সেঁকা শেষ, এখন আলু ভাজবে,
কিম্বা কুমড়োর ছক্কা।
নয়তো কল তলায় কাপড়ে ঘসে ঘসে মাখছো সাবান ।
শার্টের কলারটা বড্ড ময়লা তাই কঁচলে নিচ্ছো
দু হাতের তালুতে।
তারপরই উঠে গিয়ে বসলে রাজ্যের আনাজপাতি নিয়ে।
কাত করে রাখা বটিটা সোজা করে কাটতে বসলে
উঠোন থেকে তুলে আনা .. কি যেন নাম ?
ওহ, সেই কুলে খাঁড়া শাক?
গত রাতে অফিস ফেরত কর্তা তোমার
রুমালের কোনায় বেধে এনেছিল,
সারাদিনের বেচা বিক্রির পরে জেলেনীর ডালায়
পড়ে থাকা কিছু খয়ে যাওয়া গুড়োগাড়া মাছ ।
গভীর যত্ন নিয়ে তাই কেটে চলেছো তুমি মাথা নামিয়ে ।
এছাড়া তোমার কি নেই কোন কাজ !
ঝুম মাদক দুপুর না ঘুমিয়ে উঠোনের দড়ি থেকে এনে
শুকনো কাপড় জড়ো করে পরম মমতায়
শার্টের কুচকানো ভাজগুলো সমান করে চলেছো একমনে।
পড়নে তোমার রঙ জ্বলা ন্যাতানো শাড়ি
বদলে নেয়ার কথাও কি মনে পরেনি ?
মেঘ কালো দীঘল চুলে এলো খোপা বাঁধার
ফুরসৎই নেই তা জানি ,তবে ঐ লম্বা বেনীতে
এক গাছি বেল ফুলের মালা জড়াতেও তো পারো !
বলতো,
তোমার মতন এমন গৃহস্থ প্রেমিকাই কি আমি চেয়েছিলাম !
না সত্যি তা আমি চাইনি সুস্মিতা।
তবে কি চেয়েছি যদি জানতে চাও তাহলে বলি শোনো,
চেয়েছি সে হবে সাগর থেকে উঠে আসা সপ্তম ঢেউটির মত,
সফেদ ফেনার মুকুট পরে এক রাজকীয় উচ্চতায়
ভাসিয়ে নেবে আমার দু-কুল কোন এক দুর্নিবার আক্রোশে ।
সাইক্লোন হয়ে আসবে সে সমুদ্র মন্থন করে
দমকা থেকে ঝোড়ো হাওয়ার বেগে,
বজ্র আর বৃষ্টি হবে সঙ্গী তার, ঘুরে ঘুরে এসে
আছড়ে পড়বে মনের বসত ভিটায় ।
দৌড়ে গিয়ে দরজার কপাট জুড়তেই ,
জানালার খড়খড়ি গলে
মায়াময়ী কি দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায়
ঘরে এসে হাজির সুতানলী সাপের মতো,
কোমল হাতের কঠিন থাবায় মুহুর্তে ছড়িয়ে দিবে
টেবিলে সাজানো তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতার পান্ডুলিপি যত ,
এক ফুঁয়ে নিভিয়ে দেবে পিলসুজে সন্ধ্যায় জ্বেলে রাখা বাতি।
নিকষ কালো অন্ধকারে সে এক মাহেন্দ্রক্ষনে,
অপেক্ষায় আছি আমি সঁপে দেব বলে,
পাগল করা মাতাল রমনীর
সেই উষ্ণ আলিঙ্গনে।