জেডের তৈরী গ্লোবের মধ্যে চীনের মানচিত্র
আজ বেজিং এ দ্বিতীয় দিন। সারা রাত জেগে থাকার মুল্য শরীর ঠিকই আদায় করে নিল। আমি খুব ভোরে উঠি, কিন্ত আজ ঘুম ভেঙে দেখি হোটেল রুমে আমি একা, ঘড়িতে ১০টা বাজে!
এখানে একটা কথা না বল্লেই নয়, তাহলো যে চাইনীজ ঘড়ি আর মোবাইল ফোনের সেটে বাংলাদেশ সয়লাব। এমনকি আমার বাসায় রান্নাঘরসহ রুমে রুমে দেয়াল ঘড়ি, এতো সময় সচেতন আমরা! সেখানে বেজিং এ হোটেলের কোনো রুমে দেয়াল ঘড়ির চিন্হ মাত্র নেই ! আর সেল ফোন আমি কোনো চীনাকে বিনা প্রয়োজনে হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখেছি বলে মনে পড়েনা, থাকলেও তাদের পকেটে।
খুব জরুরী কথা ছাড়া বোধহয় ওরা কোনো খেজুরে আলাপে নেই। আমাদের মত সারাক্ষন হাতে কানে সেল ফোন বোধহয় চিন্তাও করতে পারেনা!
ওয়াংফুজিং এর ফুটপাতে ব্রোন্জের ভাস্কর্য
যাক এসব কথা, কই গেল বাপ ছেলে ভাবতে ভাবতেই তাদের সহাস্য প্রবেশ। জানালো তারা ব্যাংক থেকে টাকা চেন্জ আর দুটো ট্যুর প্রোগ্রাম করেছে চায়না ট্রাভেলের সাথে কাল আমরা গ্রেট ওয়াল দেখতে যাবো সাথে মিং রাজার সমাধি সৌধ।
আমাদের তিনজনের জন্য লান্চ সহ সারাদিনের প্রোগ্রামে নেবে ১২৩০ আর এম বি।
আরেকটি হলো শিয়ান প্রদেশ ভ্রমন।
কালকের কথা কাল।
আজকের দিনটি আমরা নিজেদের মত ঘোরাঘুরি করেই কাটাবো। কই যাবো? ঠিক হোলো সিল্ক মার্কেট। মার্কেট টা আমাদের বসুন্ধরা মার্কেটের মতই মাঝখানে প্যাসেজ দু পাশে দোকান।আমরা নেটে দেখেছিলাম ওখানে এ ধরনের মার্কেটগুলোতে অনেক দরদাম করতে হয় কিন্ত সেটা যে এত ভয়ংকর তা ছিল ধারনার অতীত।
তার দুটো উদাহরনই শুধু দেই তাহোলো ১২০০ আর এম বি র একটা কোট কিনলাম ১০০ আর এম বি দিয়ে যা আমাদের হতভ্ম্ব করে দিল।আমাদের কেনার ইচ্ছা ছিলনা বলে ৫০ দিয়ে শুরু করেছিলাম নেটের উপদেশ অনুযায়ী! শেষ পর্যন্ত ১০০তে রফা হলো।না নিয়ে তখন আর উপায় নেই।
আর ২য়টা ছিল একটা লেডিস হাত ব্যাগ। আমার অপরাধ আমি দোকানের ভেতর ঢুকে ব্যাগটায় হাত দিয়েছিলাম।তাতে মেয়েটা আমার হাত চেপে ধরলো কিছুতেই বের হতে দেবেনা, সে এক ধস্তাধস্তি অবস্হা। একটা দাম আমাকে বলতেই হবে।আমি একটা দাম বলছি তারপরও বলছে 'নো, টেল লাস্ট প্রাইজ।'
আমার স্বামী পুত্র অসহায় ভাবে দাড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছে, ছেলের তো কান্না কান্না অবস্হা খালি বলছে 'আম্মু বের হয়ে আসো'।কিন্ত বের হব কি করে! সেই চৈনিক সুন্দরী তো আমার হাত মুচড়ে ধরে আছে তার শরীরের সাথে।শেষ পর্যন্ত আমি বাধ্য হোলাম ব্যাগটা কিনতে।পরে আমরা দেখলাম সেখানে অনেক দোকানেই ক্রেতারা প্যাসেজে দাড়িয়ে দোকান থেকে বের করে এনে জিনিস দেখছে। দোকানে ঢুকেছো মানে তোমাকে কিনতেই হবে ! তবে কিছু কিছু দোকান যে এর ব্যাতিক্রম ছিলনা তা নয়।
একটি শপিং সেন্টার
শপিং সেন্টারটা কয়েক তালা এবং সাথে বিরাট বিরাট রেস্টুরেন্ট। মানুষ খেয়ে দেয়ে আবার কেনা কাটায় ঝাপিয়ে পড়ছে। আমরা টুকটাক দু একটা প্রয়োজনীয় জিনিস আর কিছু স্যুভেনীর কিনলাম তার মধ্যে জেডের তৈরী ছোটো ছোটো হাতি যা আমার স্বামীর অত্যন্ত শখের সংগ্রহের জিনিস। আমি কিনলাম ছোটো ছোটো কাচের বোতল ভেতরে হাতে আঁকা চাইনীজ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক দৃশ্যের পেইন্টিং।
ফিরে এসে এক রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবারের জন্য বসলাম ।কি একটা চিকেন অর্ডার করলো আমার স্বামী যখন সার্ভ করলো দেখলাম যতটুকু মুরগী তার ডাবল চীনা বাদাম। আমি বল্লাম একি ! আমার স্বামী বল্লো চীন দেশে এসেছো এখন চীনা বাদাম খাবেনা তাই কি হয় নাকি! এত বাজে লাগছিল বলার নয়।পয়সার মায়া করেও ঐ বস্তু শেষ করতে পারলাম না।
আলো ঝলমল ওয়াংফুজিং স্ট্রিট
বিকালটা কাটালাম ওয়াংফুজিং এর রাস্তায় আর ফুটপাতে বেন্চে বসে কাঠিতে গাথা ল্যাম্ব স্টিক আর গরম শিরায় ডুবানো ফলের টুকরো খেতে খেতে। মাঝে মাঝে আমরা দোকানে ঢুকে জিনিস দেখছি আবার এসে বেন্চে বসছি। এলাকা জুড়ে শত শত মানুষ গিজ গিজ করছে।বেশিরভাগই মংগোলয়েড চেহারার।আমাদের মত রংয়ের মানুষ একজন দেখেছি দশদিনের মধ্যে। আফ্রিকান একজনও না। তবে সাদা চামড়ার ইউরোপীয় এবং আমেরিকান ছিল মোটামুটি বেশ কিছু। তবে চীন এখন তার বন্ধ দরজা জানাল খুলে দিয়েছে ফলে ভবিষ্যৎ এ ব্যাবসায়ীর সাথে সাথে বিভিন্ন দেশের প্রচুর পর্যটকও আসবে বলে আশা করা যায়। তবে ব্যাবসায়ীদের যাতায়াত মুলত হংকং, সাংহাই গুয়াং ঝ ও তার আশে পাশের এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ বেজিং এ খুব কম।
কাল যাবো স্বপ্নের গ্রেট ওয়াল দেখতে.....
ভাবতেই ভালো লাগছে দারুন।
এখান থেকেই কিনে খেলাম কাঠিতে গাথা ল্যাম্ব স্টিক আর চিনির শিরায় ভেজানো ফলের টুকরো
সাথে থাকুন----
চীন লাল পতাকার দেশে শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৪