ক্যান্সারে মারা গিয়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। কোন একদিন আবার তাকে বাঁচিয়ে তোলা যাবে, এমন আশায় নিজের দেহ হিমায়িত করে সংরক্ষণের অনুরোধ জানিয়েছিল মেয়েটি। আদালত তাঁর শেষ ইচ্ছের পক্ষে সম্মতি দিয়েছে।
মেয়েটি যখন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন, তখন ব্রিটেনে হাইকোর্টের বিচারপতি পিটার জ্যাকসন তাকে সেখানে দেখতে পর্যন্ত যান। তিনি জানিয়েছেন, মেয়েটি যেভাবে তার দুর্ভাগ্যকে মেনে নিয়ে এর মুখোমুখি হয়েছিল, সেটি তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে।
গত অক্টোবরে ক্যান্সারে আক্রান্ত এই কিশোরী মারা যায়। এর পর তার দেহ কবর দেয়ার পরিবর্তে হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।
এভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় 'ক্রায়োনিকস'। যারা এই পদ্ধতিতে মৃত্যুর পর তাদের দেহ সংরক্ষণ করতে চান, তারা বিশ্বাস করেন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে একদিন মৃত মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে এবং যে রোগে তারা মারা গেছেন তারও নিরাময় খুঁজে পাওয়া যাবে।
মৃত্যুর আগে এই কিশোরী আদালতের বিচারকের কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছিল, সে আরও বাঁচতে চায় এবং তার দেহ মাটিতে কবর দেয়া হোক সেটা চায় না।
"আমি মনে করি আমার দেহ যদি সংরক্ষণ করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমার অসুখ সারিয়ে আমাকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে, বহু শত বছর পরে হলেও।"
তবে মেয়েটির শেষ ইচ্ছে নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল তার বাবা-মার মধ্যে। মেয়েটির মা তার এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করলেও তার বাবা ছিলেন এর বিপক্ষে। তাই শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়ায়।
বিচারক মেয়েটির পক্ষে রায় দিয়ে বলেছে, তাদের এই সিদ্ধান্ত 'ক্রায়োনিক্স এর পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। মেয়েটির মৃতদেহ নিয়ে কী করা হবে, সেটা নিয়ে বাবা-মার মধ্যে যে বিরোধ দেখা দিয়েছে, সেটারই মীমাংসা দিয়েছেন তারা।
মৃত্যুর আগেই মেয়েটি আদালতের এই রায় জেনেছিল। এই মামলায় তার মায়ের পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালতের রায় শুনে মেয়েটি খুশি হয়েছিল।
ক্রায়োনিক্স এক বিতর্কিত বিষয়। এখনো পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত নন, আসলেই এভাবে সংরক্ষণ করা দেহ কোনদিন পুনরুজ্জীবিত করা যাবে কীনা।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ায় এই পদ্ধতিতে বহু মানুষের মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। তরলায়িত নাইট্রোজেনে হিমাংকের ১৩০ ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রায় এসব দেহ হিমায়িত করে রাখা হয়।
একটি দেহ এভাবে অসীম সময় পর্যন্ত রেখে দেয়ার খরচ ৩৭ হাজার ডলারের কাছাকাছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:০৮