কি নবাবজাদা এখনও ঘুমিয়ে আছেন।
সকাল কয়টা বাজে জানেন।
শুধু ঘুম আর ঘুম।
আজ পর্যন্ত একটা চাকরিও জোগাড় করতে পারলে না।
শুধু খাওয়া আর ঘুমানো।
এই যা তো। একটু ঘুমাতে দে।
আমি আম্মুকে ডাক দেব।?
এই দাড়া দাড়া, আমি উঠে যাচ্ছি।
এভাবে প্রতিদিন মা অথবা বোনের বকুনি খেয়ে ঘুম থেকে উঠতে হয় অর্নবকে।
আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।
ঘুম থেকে উঠে একটু ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ল চাকরির সন্ধানে।
আজ অনেক দিন হল অর্নবের পড়া লেখা শেষ হওয়ার।
প্রতিনিয়তই ছুটে চলছে চাকরির উদ্দেশ্যে।
আজও বের হলো একটু আশা নিয়ে ভালো একটা চাকরি পাওয়ার জন্য।
কিন্তু বেলা শেষে নিরাশ হয়ে ফিরে আসল বাসায়।
আজ রাত আর খাবার খেলো না।
না খেয়েই শুতে গেল অর্নব।
কিন্তু ঘুম আর আসছে না তার।
বসে বসে ভাবছে ফ্যামিলিটার কথা।
ঘরে বিবাহ উপযুক্ত একটা বোন।
বাবা অসুস্ত।
সাথে অর্পাও অনেক দিন ধরে বায়না ধরেছে থাকে একটা আংটি কিনে দেওয়ার জন্য।
একের পর এক তারিখ করে তাকে সান্তনা দিয়ে যাচ্ছে।
এসব কথা ভাবতেই অর্পার ফোন।
বুঝতে আর দেরি হলো না অর্নবের।
নিশ্চয় আংটি কিনেছে কি না তা জানার জন্য।
হুম। কি বলো।(অর্নব)
কেমন আছো।
না। এইতো ভালো আছি।
আচ্ছা তুমি আংটিটা কিনেছো।?
তুমি কেন বুঝতে পারছো না।
বর্তমানে আমার পক্ষে তোমাকে আংটি কিনে দেওয়া সম্ভব না।
আর আমার কাছে টাকাও নেই।
কিছু ছিল তা দিয়ে বাবার অষুধ কিনে ফেলেছি।
আচ্ছা তোমার পক্ষে কি সম্ভব বলতো।
আজ অনেকদিন ধরে বলছি একটা আংটি কিনে দেওয়ার জন্য, তাও তুমি পারবে না।
একের পর এক তারিখ করে যাচ্চো।
থাকো তুমি তোমার সম্ভব নিয়ে।
তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
ভাল থেকো।
ফোন টা কেঠে দিল অর্পা।
মেয়েটির সাথে সম্পর্ক তার স্কুল লাইফ থেকে।
আজও পর্যন্ত কোন কিছু দিতে পারেনি মেয়েটাকে।
সম্পর্ক অনেক বার ভেঙ্গে গিয়েছিলো।
পরে আবার ঠিকও হয়েছিলো।
এখন বোধ হয় আর ঠিক হবে না।
এদিকে ঘরে বাবা অসুস্ত, বিবাহ উপযুক্ত বোনও একটা,সাথে অর্পাও চলে গেলো।
এক সাথে সব চাপ এসে পড়েছে অর্নবের মাথায়।
কি করবে বুঝে উঠতে পারতেছে না।
নিরবে বসে শুধু ভাবতেছে।
সান্তনা দেওয়ার মত একজন মানুষও পাচ্ছে না।
সেদিন রাত আর ঘুম হল না অর্নবের।
এভাবে একের পর এক দিন পার করতে হচ্ছে অর্নবকে।
সৃষ্টিকর্তা হয়ত এখনও তার দিকে চোখ তুলে থাকাননি।
তাই বলে সে তার চেষ্টার কোন কমতি করেনি।
প্রতিনিয়তই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভাল কিছু একটা করা জন্য।
নিয়মিত চেষ্টা আর অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে দিন পার করছে অর্নব।
(5 বছর পর) অর্নব অফিসে বসে আছে।
অর্নবের একটা কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে।
অফিসে বসে আছে আর সেই দিনগুলোর কথা ভাবছে।
যেই দিনগুলোতে বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে বেচে থাকতে হয়েছে অর্নবকে।
আর এই কারনেই অর্পা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।
চলে যাওয়ায় ভালই হয়েছে।
এখন আর সে অভাব নেই। অর্নবের তখনকার সেই দুঃসময়ে তাকে সান্তনা দেওয়ার মত একজন মানুষও খুজে পাচ্ছিলো না।
কিন্তু আজ আর তার শুভাকাঙ্খির অভাব নেই।
সেই দিন গুলোর কথা আজ তার খুব মনে পড়ছে।
কারন আজকের এই দিনেই বাবার চিকিৎসা করতে না পারায় তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।
এসব কথা ভাবছে আর অর্নবের চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে।
কেনো আজকের এই দিনটা তখন ছিলো না। কিন্তু আজ অর্নব খুব ভালই আছে।
কোম্পানিটাও খুব ভাল বেতন দেয় তাকে।
মা,ভাই,বোন নিয়ে ভালই চলছে তাদের পরিবার।
আত্বীয়স্বজনও এখন আগের চেয়ে একটু বেশি।
প্রতিদিনই আসা যাওয়া হয়।
তবে বাবার অনুপস্তিতির কারনে পরিবারের মাঝে কিছুটা শুন্যতা অনুভব হয়।
তবুও অর্নবের সেই কাঙ্খিত চাকরিটা হওয়ার কারনে আগের চেয়ে এখন অনেক ভালই চলতেছে তাঁদের পরিবার।
যা হয়ত সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে অর্নবের জন্য এক অফুরন্ত উপহার।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৫