ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়টা ছিল অপ্রত্যাশিত। বিশ্ববাসীর মতো বিপুল সংখ্যক আমেরিকানও হতভম্ব। যদিও একটি স্বচ্ছা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প।
কিন্তু এই জনরায় কিছুতেই মেনে পারছে না একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলছে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ। ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই রাস্তায় নেমে এসেছে তারা। ‘ট্রাম্প আমার প্রেসিডেন্ট নন’ স্লোগান দিচ্ছে লোকেরা। অনেক স্থানে বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সংঘর্ষেও। এমনকি গুঞ্জন উঠেছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে যাবে।
এরই মধ্যে হিলারিকে যেকোনো উপায়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
কিন্তু ফলাফল তো প্রকাশ হয়ে গেছে। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হবে ২০ জানুয়ারি। ফলাফল পাল্টে যাওয়ার কি কোনো সুযোগ আছে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে অবশ্য এমন একটি সুযোগ আছে।
এদের নাগরিকরা কার্যত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরোক্ষভাবে ভোট দিয়ে থাকেন। তারা ভোট দিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ নির্বাচন করেন। এ প্রতিনিধিরাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল প্রতিনিধি নির্বাচন করেন নাগরিকেরা। আগামী ১৯ ডিসেম্বর তারা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন সে সিদ্ধান্ত নিতে একত্রিত হবেন।
তাছাড়া ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়াসহ ৫০ অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে মোট ইলেক্টোরাল কলেজ সংখ্যা ৫১৮। এর মধ্যে জয়ের জন্য দরকার ২৭০টির সমর্থন। সেখানে ২৯০টি পেয়ে বিজয়ী হয়েছে ট্রাম্প, হিলারি পেয়েছেন ২২৮।
তবে পপুলার ভোটে এগিয়ে আছেন হিলারি। তিনি পেয়েছেন ৬ কোটি ২৭ লাখ ৪ হাজার ৯৭৪ এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৮টি ভোট। ভোট কম পেলেও ফ্লোরিডার মতো অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট বেশি পাওয়ার কারণেই জিতে গেছেন ট্রাম্প।
তাই ১৯ ডিসেম্বর ইলেক্টররা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে হিলারিকে সমর্থন দিলে অন্য কিছু ঘটতে পারে। ২০ লাখ পিটিশনকারীর এটিই শেষ ভরসা।
এ জন্য পিটিশনে স্বাক্ষরকারীরা ইলেক্টরদের হিলারিকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তারা বলছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত নন। অধিকাংশ আমেরিকান জনগণ ট্রাম্পের অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো স্বভাব, আবেগপ্রবণতা, রগচটা, মিথ্যা বলা স্বভাব, নারী কেলেংকারী ও রাজনীতিতে অনভিজ্ঞতার কারণে তাকে দেশটির জন্য বিপজ্জনক মনে করছেন।
তাছাড়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন পপুলার ভোটে বিজয়ী হয়েছেন, সুতরাং তারই প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী ইলেক্টররা এখন পক্ষ পরিবর্তন করলে আর্থিক জরিমানা দিতে হবে। পিটিশনকারীরা বলছেন, যেকোনো উপায়ে হিলারিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে হবে। জরিমানার টাকা তারাই শোধ করবেন।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জয়ী হওয়ার আগে ট্রাম্প নিজেই ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পদ্ধতিকে ‘গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী অঙ্গরাজ্যে বেশিরভাগ পপুলার ভোট পেলে তিনি ওই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন বলে ধরে নেয়া হয়। ভোটের ব্যবধানের কোনো সীমা এখানে বিবেচ্য নয়।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পপুলার ভোটে এগিয়ে থেকেও হেরে যাওয়ার রেকর্ড এটাই প্রথম নয়। এর আগে চারবার এমন ঘটনা ঘটেছে।
২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়েছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ডেমোক্রেট প্রার্থী আল গোর। তখন ৫ লাখ ৪০ হাজার বেশি পপুলার ভোট পেয়েও হেরে যান আল গোর। ২৭১ ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন বুশ।
১৮৮৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৪৫৬ ভোট বেশি পেয়েও হেরে যান ডেমোক্রেট প্রার্থী গ্রোভার ক্লেভল্যান্ড। ২৩৩ ইলেক্টোরাল ভোট (সেসময় নির্ধারিত) জিতে প্রেসিডেন্ট হয়ে যান হ্যারিসন।
১৮৭৬ সালে নির্বাচনে নির্বাচিত রিপাবলিকান প্রার্থী রাদারফোর্ড হায়েসের বেলাতেও এমনটা ঘটেছিল। সেবার ২ লাখ ৬৪ হাজার ২৯২ জনপ্রিয় ভোট পেয়েও হেরেছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী স্যামুয়েল টিলডেন। আর ১৮৫ ইলেক্টোরাল ভোট (সেসময় নির্ধারিত) পেয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন হায়েস।
১৮২৪ সালে অনেক বেশি পপুলার ভোট পেয়েও হেরে গিয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকসন, আর ইলেক্টোরাল ভোট বেশি জিতে প্রেসিডেন্ট হন অ্যাডামস।
সূত্র: মেট্রো
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২২