ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে গত শনিবার থেমে থেমে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছিল ঢাকায়। আমি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে হাঁটছি। সেদিন সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ। টার্মিনালটি অনেকটাই জনশূন্য। হকারের ছুটোছুটি, হাঁকডাক নেই বললেই চলে। আমি ঘুরে ঘুরে বন্ধ টার্মিনালের ছবি তুলছিলাম।
.
হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল ছোট একটা জটলা। আমার কাঁধে ক্যামেরা ঝোলানো দেখে জটলা থেকে এক ব্যক্তি বললেন, ‘ভাই, একটা ছবি তুলবেন? এই ছেলেটার!’ আমি জানতে চাইলাম, ‘ঘটনা কী? ছেলেটার কী হয়েছে?’
.
ছবি তুলতে যিনি অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর নাম মো. রনি। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে রুটি, বিস্কুট বিক্রি করেন। বললেন, ‘ছেলেটির নাম জুয়েল। ১৮-১৯ বছর বয়স। বেশ কয়েক বছর হলো হারিয়ে গেছে। সে মা-বাবার কাছে ফিরতে চায়। কোনো ঠিকানা বলতে পারে না, শুধু বলতে পারে, তার মামা বরিশালে তরমুজ বিক্রি করত।’
.
আমি জুয়েলের চোখের দিকে তাকাই। অসহায় সেই চোখের দৃষ্টি! বাবা-মার কাছে ফেরার আকুতি! এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে সে গাজীপুর থেকে বরিশাল যাওয়ার জন্য এসেছে। কয়েকজনের কাছে শুনেছে, সদরঘাট এলে লঞ্চে বরিশাল যাওয়া যায়।
আমি জুয়েলকে জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি গাজীপুরে কী করতা?’ বলল, গাজীপুরে একটা হোটেলে কাজ করত। ঠিকমতো বেতন ও খাবার পেত না। বলল, ‘আমি পালাইয়া চইলা আইছি, আমার ভালো লাগে না, আমি বাবা-মার কাছে যাইতে চাই!’
বাবা-মা সম্পর্কে কিছুই বলতে পারল না জুয়েল। শুধু বলল, বাবা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে শুঁটকি বিক্রি করত।
.
জুয়েলের সঙ্গে আরও কথা হয়। জানতে পারি, ছয়–সাত বছর বয়সে সে বরিশাল থেকে হারিয়ে যায়। সেখানে তার মামা তরমুজ বিক্রি করত। তারপর কীভাবে ঢাকায় এসেছে জানে না। গাজীপুর এলাকায় এক মামা তাকে এক হোটেলে কাজে লাগিয়ে দেয়। সেই মামার নাম শাহাবুদ্দিন। তবে তিনি জুয়েলের আপন মামা নন। মামা গাজীপুরে জুতার দোকানে কাজ করেন।
.
জুয়েলকে প্রশ্ন করি, ‘এত দিন পর তোমার বাবা-মার কাছে যাইতে মন চাইল!’ জুয়েল উত্তর দেয় না। শুধু তাকিয়ে থাকে।
.
হকার রনি অনেক আশা নিয়ে বলেন, ‘ভাই, আপাতত ও আমার কাছে থাকব। আমার ফোন নম্বরটা রাখেন। ওর বিষয়ে কোনো খোঁজখবর হইলে আমাকে ফোন দিয়েন।’
.
আমি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিই। ফিরে যেতে যেতে রনির দিকে আরও একবার তাকাই। অসহায় দৃষ্টিতে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪০