somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেখে এলাম মুসাফির

২৪ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অঙ্গার' সিনেমাটি দেখার বেশ খানিকটা সময় বাদে আবারও একটা দেশী সিনেমা দেখলাম 'মুসাফির'। এই মুসাফির নিয়ে প্রচন্ড আশাবাদী ছিলাম। কারণ ট্রেইলার দেখার পর থেকেই মাথা আউলা হয়ে গিয়েছিল। তাই এই ব্যাকুলতা থেকেই গত সপ্তাহে "মুসাফির" দেখে ফেললাম। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো চতুর্থ দিনেও ভিড় ঠেলে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়েছে। যা বাংলা ছবির জন্য নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। সিনেমায় যে আবার সেই সমারোহ ফিরে আসছে তারই নিদর্শন এটি।



এবার আসা যাক সিনেমার কাহিনীতে। ছবির শুরুতেই দেখা যায় সানি (আরেফিন শুভ) ১০ বছর ধরে জেল খাটছে তার প্রেমিকা মারিয়ার (প্রসূন আজাদ) বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। পুলিশের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে ড্রাগ চোরাচালান মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় তার প্রেমিকা। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সে ঐ বিশ্বাসঘাতিনী প্রাক্তন প্রেমিকাকে খুন করে প্রতিশোধ নিতে চায়। যার জন্য সে ১০ বছর জেলের অন্ধকারে কাটিয়েছে। এই দশ বছর সে জেলে নিজেকে একজন দক্ষ ফাইটার হিসাবে তৈরি করেছে। প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারই সাথে জেলে থাকা একজন ফাসির আসামির কাছ থেকে যে একসময় সিক্রেট সার্ভিস অফ বাংলাদেশের একজন এজেন্ট ছিল। মুক্তি পাওয়ার আগের দিন ওই এজেন্ট সানিকে বান্টি (হারুন রশিদ) নামে একজনের নাম্বার দেয় যেন জেল থেকে বেরিয়ে সে একটা কাজ পেয়ে যায়। বান্টির সাথে যোগাযোগ করার পরও সে মারিয়াকে খুঁজতে থাকে এবং জানতে পারে সে নাকি এক্সিডেন্টে মারা গেছে।



এবার বান্টির দেয়া কাজটি করতে গিয়ে সিক্রেট সার্ভিসের হাতে ধরা পড়ে সানি। সিক্রেট সার্ভিসের সহকারী প্রধান (মিশা সওদাগর) এক নারী এজেন্ট স্কীন সার্জন ডাঃ জারা মেহেজাবিনকে (মারজান জেনিফা) ধরে এনে দেয়ার শর্তে মুক্তি দেয়ার ওয়াদা করেন সানিকে। এবং এও জানায় জেলের ভেতরে তারা সানির উপর নজর রেখেছে। এবং এই দশ বছরের ট্রেনিং এর ফলাফল দেখার একরকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। কিন্তু ওদিকে ডাঃ জারাকে খুঁজতে গিয়েই সানি ফেঁসে যায় আরও বড় একটা জালে। জানতে পারে মারিয়া জীবিত আছে এবং সে নায়িকা ডাঃ জারার বোন। এবং মারিয়া তাবরেজের (টাইগার রবি) ধোকায় পরেই সানিকে জেলে ঢোকাতে বাধ্য হয়েছিল। ওদিকে আবার তাবরেজের ভাই ফাসির আসামি রনির চেহারা পরিবর্তন করেন স্কীন সার্জন ডাঃ জারা। তাই রনির সিক্রেট যেন ফাঁস না হয় সে জন্য ডাঃ জারাকে ধরতে তাবরেজও মরিয়া হয়ে ওঠে। এভাবেই সানি বাঁকে পড়ে হয়ে যায় মুসাফির!



সিনেমাটির সংক্ষিপ্ত স্টোরিলাইন বলে দিলাম। এবার সিনেমাটির অন্যদিক গুলোতে আসা যাক । আমার যেটা মনে হয়েছে এই সিনেমায় বাজেট কম ছিলো। কিন্তু এই সীমিত বাজেটেই আশিকুর রহমান যা দেখিয়েছেন তা কোটি টাকা খরচ করে অনন্ত জলিল বা ইফতেখার চৌধুরীও বানাতে পারবে কিনা সন্দেহ। সবচেয়ে বড় কথা হলো সিনেমার গল্পটি, এমন সিক্রেট এসপিওনাজ টাইপ সিনেমা আমার মনে হয় না আগে কখনও ঢালিউডে হয়েছে। কিছু জায়গায় সামান্য স্লো হয়ে গেলেও টানটান ভাবটা বজায় ছিল। বারবার বেশ কয়েকটা সারপ্রাইজ সহকারে সিনেমাটি এগিয়েছে।



ছবির আর্টিস্টের মধ্যে সব থেকে দেখার মত জিনিস হল আরেফিন শুভর পরিবর্তন। আগে তার অভিনয়ে সামান্য অস্পষ্টতা ছিল এখন আর সেটা নেই । নাচে এবং অভিনয়ে বেশ পরিমিতিবোধ স্পষ্ট। ফিটনেস এবং ডেসিং লুকের জন্য আপাতত তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। মারজান জেনিফা পাকা অভিনেত্রীর মতই অভিনয় করে গেছেন। দেখে মনেই হয়নি এটি তার প্রথম ছবি। নিজের পুরোটা দিয়ে অভিনয় করার চেষ্টা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে অতি নাটকীয়তা না করলে আমি তার ওপর পুরোপুরি ক্রাশ খেতাম :) আরেকটি বিষয় হল নায়িকাকে উপজিব্য করেই যেহেতু ছবির কাহিনী লিখা সেখানে মারজানের আরেকটু স্কীলফুল অভিনয় করার প্রয়োজন ছিল। খল চরিত্রে মিশা সওদাগরের তুলনা তিনি নিজেই। সিক্রেট এজেন্টের এটিচিউট পুরোপুরিভাবে ক্যারি করতে পেরেছেন। আর টাইগার রবি ছিলেন পুরাই আগুণ। অভিনয় দক্ষতার বিচারে মিশা সওদাগরের প্রায় কাছে চলে এসেছে টাইগার রবি। মিশা সওদাগরের জন্য হেটস অফ। তবে ইলিয়াস কোবরার অহেতুক উপস্থিতি অনেককেই বিরক্ত করেছে। পরিচালক চাইলে দৃশ্যটুকু কেটে ছোট করে দিতে পারতেন। সিন্ডি রোলিং এর মত পোষ্টার গার্লকে আরেকটু সময় দেয়া যেত। তার স্ক্রিনটাইম ছোট হওয়াতে অভিনয় দেখানোর সুযোগই পাননি।স্রেফ এক একশন দৃশ্যেই পরিচালক তাকে মেরে ফেলেছেন। একই কথা বলব শিমুল খানের ব্যাপারেও। বেচারার ভ্রু নাচানোটা আরও কিছুক্ষণ দেখতে পারলে ভাল হত। তাকেও আরেকটু সময় দেয়া যেত। গুণী পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাসও ভালই অভিনয় করেছেন।





একশন মুভিতে ফাইটিংই সিনেমার প্রাণ। আরেফিন শুভর মুভিতে আবার মার্শাল আর্ট টাইপ ফাইটিং দেখে ভাল লেগেছে। ভাবতেই ভালো লাগছে যে আমরা রুবেলের আমলের মার্শাল আর্ট টাইপ ''ওয়াই ঢিসুমেট" এর যুগ পার করে আসতে পেরেছি। কিছু দৃশ্য দেখে পেছনের দর্শকদের বলতে শুনেছি এগুলো নাকি হলিউডি সিনেমার কাটপিস। তার মানে বুঝাই যাচ্ছে একশন দৃশ্যগুলো হলিউড লেভেলের হয়েছে। তা সত্ত্বেও ভিএফএক্স ত্রুটি বেশ ভালোমত চোখে পড়েছে যখন গোলাগুলির দৃশ্য হচ্ছিল। রক্ত ছিটছে কিন্তু কোন গুলির দাগ বা রক্ত দেখা যাচ্ছে না শরীরে। জাদু আজাদের সাথে ট্রেনের ছাদে ফাইটিং সিনও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। পুরো দৃশ্যটাতে লেইম কাজ হয়েছে।



কমেডি দৃশ্যগুলোতে দর্শকরা ফাটিয়ে হেসেছে। বান্টির সাথে আরেফিন শুভর কম্বিনেশনটা ছিল দুর্দান্ত। প্রথম কাজ হিসাবে অসাধারণ করেছেন বান্টি। দম ফাটিয়ে হাসিয়েছেন তিনি তার ডায়গল ডেলিভারি দিয়ে। তার এন্ট্রির অন্য অনেক দর্শক অপেক্ষা করেছে। তারা যখনই স্ক্রিনে এসেছেন তখনি হাসিয়েছেন সবাইকে।
ছবির সবগুলো গানই শ্রুতিমধুর। সুন্দর লোকেশন আর অন্থির কস্টিউমে শুভ-মারজানকে পুরো বোমবাস্টিং লেগেছে। তৌফিক ভাইয়ের র্যাপ সহ টাইটেল ট্র্যাকটি আমার পারসোনাল ফেবারিট। 'পথ জানা নেই' আর 'এসেছি মুসাফির হয়ে' গান দুটির প্রশংসা না করলে কিপ্টেমি হতে পারে। এক কথায় লোকেশনগুলো ছিল অনবদ্য।



মোট কথা আঁতশ কাঁচ নিয়ে বসে দেখার মত ছবি এটি নয়। তরুণ নির্মাতা হিসেবে যা করার চেষ্টা করেছেন পরিচালক-প্রযোজক। তাই সব মিলিয়ে আমি মুসাফিরকে দেব ১০ এর মধ্যে ৮।

★★★★★★★★★★ /★★★★★★★★

বাংলা ছবি নিয়ে আমরা সবাই আশাবাদী । জুবায়ের আলম এবং আশিকুর রহমানকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি ছবি উপহার দেয়ার জন্য। আমরা হয়ত আমাদের বাচ্চাকাচ্চাদের বলতে পারবো, জানো আমরা সালমান শাহ'র আমল পাইনি কিন্তু আরেফিন শুভর রাজত্ব দেখেছি।

"মৃত্যুপুরী" এবং "ঢাকা এ্যাটাক"এর জন্য অগ্রিম শুভ কামনা রইল মিষ্টার শুভ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:৪৬
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×