somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিস্মৃতি অথবা এক সামাজিক পাপ : প্রসঙ্গ 'মৌমাছি'

০৯ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিস্মৃতি অথবা এক সামাজিক পাপ : প্রসঙ্গ 'মৌমাছি'
এন জুলফিকার

‘মতের ভিত্তি যে-জাতির যত শক্ত, সেই জাতিই তত বড়ো। উন্নতির পথ তাদের কাছেই খোলা।’ আজ থেকে ৭০ বছর আগে ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ২৭ শ্রাবণ এক খোলা চিঠিতে ‘আনন্দমেলা’-র কচি-কাঁচাদের তেমনই জানিয়েছিলেন তিনি। ছোটদের মতের ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য তাঁর চিšতার অবধি ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের সঙ্গে মানুষের সত্যিকারের পরিচয় গড়ে তোলা সম্ভব ভাবের আদান প্রদানের মধ্য দিয়েই। চোখ-কান খোলা রেখে মনকে সবল করে সঠিক মাত্রায় বেঁধে ফেলতে পারলে সব গলদ, ভেল্কি, ধাপ্পাবাজি আপনাতেই ধরা পড়ে যাবে। আর তাহলেই খাপছাড়া, ধ্বংসাত্মক মতের বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আদর্শ চলার পথ খুঁজে নিতে অসুবিধা হবে না। ছোটদের আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য এমনটাই ভাবতেন তিনি। চাইতেন ভারতবর্ষের সব শিশু-কিশোর চারিত্রিক দৃঢ়তায়, মানসিক সুস্থতায় একজোট হয়ে গড়ে তুলুক এক আদর্শ দেশ, যেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান পাবে জাতির স্বার্থ। তার জন্য শুধু লেখাপড়া নিয়ে ব্য¯ত থাকলে হবে না, হতে হবে সংঘবদ্ধ। তাহলেই সবাই মিলে ভোগ করতে পারব সত্যিকারের সুখ ও স্বাধীনতা। আর তাই লেখা ও বই প্রকাশকে অনেকখানি দূরে সরিয়ে রেখে তিনি গড়ে তুললেন ‘মণিমেলা’। ছোটদের এ এক মহাসংঘ, যেখানে তারা নিজেরাই নেতা হয়ে আপন বিচার-বুদ্ধি দিয়ে গড়ে তুলবে তাদের আদর্শ সমাজ। এমন ভাবনাকে যিনি ছোটদের স্বপ্ন ও কাজের মধ্যে চারিয়ে দিতে পেরেছিলেন তিনি বিমল ঘোষ। বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে যিনি ‘মৌমাছি’ নামেই সমধিক পরিচিত।
বিমল ঘোষের জন্ম ১৯১০ সালের ১৮ মার্চ (বাংলা ৪ চৈত্র, ১৩১৬ বঙ্গাব্দ)। সেই হিসাবে গত বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে গেল। যিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে ছোটদের চরিত্র গঠন ও আগামীর আদর্শ নাগরিক হিসাবে তাঁদের গড়ে তোলার কাজে আজন্ম নিয়োজিত রইলেন, জন্মশতবর্ষে তিনি উপেক্ষা ছাড়া আর কী-ই বা পেলেন? ‘বাঙালি বিস্মৃত জাতি’ এই আপ্তবাক্যকে আবারও প্রমাণ করে আমরা তাঁকে ভুলে গিয়ে মোচ্ছবে মেতে রইলাম। কিন্তু সবাই কি তাঁকে ভুলেছে ? বইমেলায় প্রায় প্রতি বছর শিশু সাহিত্য সংসদের স্টলে ঢুঁ মেরে চেঙা-বেঙা সিরিজের ‘চালাক-বোকা’, ‘পিকনিক’, ‘নাকাল নেংটি’ বই তিনটি নিয়ে শিশুদের উন্মাদনা দেখে মনে হয়েছে, সবাই তাঁকে ভোলেনি।
আসলে আমরা বড়রা আমাদের নিজেদের স্বার্থের জগৎ নিয়ে এত মত্ত থাকি যে শিশুদের মনের কাছাকাছি আজ আর পৌঁছুতে পারি না। বলা ভালো অধিকাংশ মানুষ সেই চেষ্টাই করেন না। ‘বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের রিয়্যালিটি শো শিশুদের মাথা খাচ্ছে’-- পথে-ঘাটে এমন মšতব্য আকছার শোনা যায়। তার জন্যই নাকি শিশুরা আর গল্পের বই-এ মেতে ওঠে না। যাঁরা এমন কথা বলেন, বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন, তাঁদের কাছে একটি প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছে হয়-- আপনারা কি স্কুলপাঠ্য বইয়ের বাইরে তাদের অন্য বই পড়তে উৎসাহিত করেন? খুঁজে খুঁজে কিনে কি দেন সেই সব বই যা তাদের মানসগঠনে সহায়ক হবে? জানি এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সবাই ‘হ্যাঁ’ বলবেন। বা¯তবে চিত্রটা কিন্তু অনেকাংশে অন্য রকম। আসলে এই ভুবনায়নের দিনে আমরা সবাই জিততে চাই। এখন আর ঝশু রং ঃযব ষরসরঃ নয়, তাকে ছাড়িয়ে আরো আরো অনেক দূরে আমাদের লক্ষ্যপথের সীমা। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছোনোর তাগিদে আমরা টের-ই পাই না, কখন যেন আমাদের সšতানের শৈশবকে হত্যা করে ফেলেছি।
আমরা, এই নব্যবাঙালিরা শিশুকিশোরদের জন্য তেমন করে না ভাবলেও বিমল ঘোষ ভাবতেন। আর ভাবতেন বলেই তাঁর লেখা অসংখ্য বইয়ে তিনি ছোটদের জন্য সৃষ্টি করলেন এমন এক অনন্য ভুবন যেখানে মায়াবী জগতের সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে, তাদের সাথে মজার খেলায় মত্ত হয়েও ছোটরা একই সঙ্গে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে এক প্রবহমান শক্তি-প্রাচীর। নিছকই আজগুবি কোনো কিছুকে মৌমাছি শিশু-মনে লালন করতে দিতে চাইতেন না। চল্লিশের দশকে সেনোলা রেকর্ড কোম্পানি থেকে তাঁর একটি নাটক ‘সোনার বাংলা’-র গ্রামাফোন রেকর্ড দু’ খন্ডে প্রকাশিত হয়। ভ্রমণ ও শিক্ষামূলক এই নাটকে তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ছোটদের দেশাত্মবোধের কথা শুনিয়েছেন। ওই নাটকেই তিনি স্পষ্টভাষায় ছোটদের ভূতুড়ে গল্প পড়তে নিষেধ করেছেন। কেননা তাতে ক্ষতিকর দিক ছাড়া, ছোটদের ভীতু করা ছাড়া গঠনমূলক কিছু নেই বলে তিনি মনে করতেন। তিনি চাইতেন ছোটরা অল্প বয়স থেকেই মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হয়ে উঠুক। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সেই সমাজের যেখানে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ থাকবে না। তাঁর অধিকাংশ লেখাতে তাই আমরা ছোটদের ভবিষ্যতের সুনাগরিক হওয়ার প্রত্যাশার ইঙ্গিত লক্ষ করি।
এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে পড়বে জসীমউদ্দীন-এর কথা। তিনিও চাইতেন সেই সুবিন্যস্ত সমাজব্যবস্থা যেখানে কোনো ধনবৈষম্য থাকবে না। মৌমাছির মতো জসীমউদ্দীন-ও সেই ইচ্ছাকে, সেই অঙ্গীকারকে তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে শিশুমনের গভীরে চারিয়ে দিতে চেয়েছেন। তাই নিছক মনোরঞ্জনের জন্য লেখা নয়, বিমল ঘোষ ও কবি জসীমউদ্দীন শিশুদের আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য তাঁদের লেখনীকে ব্যবহার করেছেন। আগামী পৃথিবীর নাগরিকদের তাঁরা সম্পূর্ণ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। এই প্রসঙ্গে জসীমউদ্দীন-এর একটি কবিতা উদ্ধৃত করার লোভ সামলানো গেল না। ‘খোকার আকাক্সক্ষা’ কবিতায় জসীমউদ্দীন লিখেছেন --
সবার সুখে হাসব আমি, কাঁদব সবার দুখে,
নিজের খাবার বিলিয়ে দেব অনাহারীর মুখে।
আমার বাড়ির ফুলবাগিচা ফুল সকলের হবে,
আমার ঘরে মাটির প্রদীপ আলোক দিবে সবে।
এই একই রকম ভাবনার শরিক মৌমাছিও। আনন্দমেলা-র পাতায় ২২ ভাদ্র, ১৩৪৮-এ লেখা ‘মৌমাছির চিঠি’তে ছোটদের উদ্দেশে তিনি লিখছেন ---
তোমাদের মধ্যে অনেকেই যে বড়লোকের ছেলে-মেয়ে সে-খবর আমি জানি...। যদি তোমাদের ওই ঐশ্বর্য দিয়ে তোমাদের আত্মীয় বন্ধু, পাড়াপড়শিদের দুঃখের কিছুমাত্র লাঘব করতে না-পারো, তবে সে-ঐশ্বর্যের গর্ব সত্যিকারের মানুষের মনকে লজ্জাই দেয়। তাই মনে করিয়ে দিচ্ছি তোমরা... দেশের দুঃখ-দুর্দশা দূর করবার ব্রত নিয়েছ। কাজেই যাদের এই দুর্দিনেও ভালো ভালো দামি পোষাক জামাকাপড় কেনবার সামর্থ আছে, তারা যেন সেই সামর্থকে কাজে লাগায় -- অপরের সাহায্যে অপরের সেবায়। ...অনায়াসে কম দামি জুতো বা শাড়ি কিনে বাকি পয়সা দিয়ে নিজের গরীব জ্ঞাতি, আত্মীয় বা বন্ধুদের কিছু কিছু কাপড় জামা কিনে দিতে পারো এই পুজোর সময়। মনে রেখো এ-দেশে আজও যারা গরীব, চাষী, মজুর, কুলি তারাই দেশের প্রকৃত শক্তি। (মৌমাছির চিঠি, মৌমাছি রচনাসমগ্র, পৃষ্ঠা- ৫৮৫)
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে আনন্দবাজার পত্রিকার সুরেশচন্দ্র মজুমদার ও প্রফুল্লকুমার সরকারের ডাকে তিনি ১৯৩৯ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দিয়েছিলেন। এর কিছু দিন পর, ১৯৪০-এর ১৫ এপ্রিল আনন্দবাজার পত্রিকার শেষ পাতায় ভারতীয় ভাষায় ছোটদের গল্প, কবিতা, ছড়া, ছবিতে সুসজ্জিত হয়ে প্রকাশিত হল একটি চমকপ্রদ চিরনতুন পাতা-- ‘আনন্দমেলা’। পরিচালক ‘মৌমাছি’ ছদ্মনামে বিমল ঘোষ। এর পর থেকে প্রতি সোমবার আনন্দের নানা পশরা সাজিয়ে এটা প্রকাশিত হত। আনন্দমেলা-র পরিচালক হিসাবে তিনি এত জনপ্রিয় হয়েছিলেন তাঁর কাছে ছোটদের হাজার হাজার চিঠি আসত আর সপ্তাহান্তে আনন্দমেলা-য় প্রকাশিত তাঁর ‘মৌমাছির চিঠি’ পড়ার জন্য ছোটোরাও মুখিয়ে থাকত।
আসলে শুধুই আনন্দদান বা তাৎক্ষণিক তৃপ্তির জন্য মৌমাছি কলম ধরেন নি। শিশুদের ভালোবেসে, জাতি গঠনের জন্য তাদের দায়িত্বসচেতন করার উদ্দেশ্যে তিনি আনন্দমেলার পাতায় নিয়মিত যে চিঠিগুলি লিখতেন তা পড়ে শিশুরা যাতে জ্ঞানার্জন করতে পারে সেজন্য তাঁর চেষ্টার অবধি ছিল না। শোনা যায় শিশুকিশোরদের চিঠির প্রশ্নের উত্তরে এই চিঠিগুলি লেখার সময় মাঝেমাঝে তিনি বিশেষজ্ঞদের সাহায্যও নিতেন। আর তাই সাহিত্য, জ্ঞানবিজ্ঞান, মজার খেলা, শিল্পচর্চা ইত্যাদি বিষয়গুলি আকর্ষনীয় ভাবে উপস্থাপনের জন্য আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শিশু-কিশোরদের কাছে ‘মৌমাছি’ এবং ‘আনন্দমেলা’ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

দুই
ছোটদের জন্য মৌমাছি প্রায় একশ চল্লিশটি বই লিখেছেন। যদিও তার অধিকাংশই আজ আর পাওয়া যায় না। শিশু সাহিত্য সংসদ(কলকাতা) প্রকাশিত তাঁর চেঙা বেঙা সিরিজের তিনটি বই(পিকনিক, নাকাল নেংটি, চালাক বোকা) এবং কার্তিক ঘোষ সম্পাদিত মৌমাছি রচনা সম্ভার (মায়ের বাঁশি-উপন্যাস, কয়েকটি কবিতা, দুটি রূপকথা ও অ্যাঙাচি ব্যাঙাচি, টুনটুনি আর ঝুনঝুনি, কালটু-গুলটু) ছাড়া আর কোনো বই পাওয়া যেত না। আশার কথা এই যে, তাঁর জন্মশতবর্ষকে স্মরণে রেখে ২০১০ সালে কলকাতার লালমাটি প্রকাশন নিমাই গরাই-এর সম্পাদনায় মৌমাছি রচনাসমগ্র ১ নামে অত্যন্ত শোভন একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। শোনা যাচ্ছে তাঁরা খন্ডে খন্ডে মৌমাছির অধিকাংশ লেখাই প্রকাশ করবেন। মৌমাছি রচনাসমগ্র ১-এ স্থান পেয়েছে-- গল্পগ্রন্থ : যে গল্পের শেষ নেই, নয়া যুগের রূপকথা, বাছা বাছা, কালটু গুলটু ; উপন্যাস : মায়ের বাঁশি, ঝড়ের পালক ; কার্টুন : রাজার রাজা(স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী) ; নাটক : কথামালা রাজকন্যে; এবং মৌমাছির চিঠি। দেরিতে হলেও মৌমাছি-র লেখা আবারও যে প্রকাশিত হচ্ছে এ এক সুলক্ষণ বইকি।
মৌমাছির লেখা প্রথম উপন্যাস এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘মায়ের বাঁশি’(১৯৫৮)। ছোট্ট ছেলে মিঠু ও তার আদরের কুকুর টমকে কেন্দ্র করে এ উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। বইটির নিবেদন অংশে মৌমাছি জানিয়েছিলেন, অশোককুমার সরকার এবং চিত্রপরিচালক পশুপতি চট্টোপাধ্যায়ের আগ্রহে তিনি এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন। দশ মাস ধরে আনন্দবাজার পত্রিকার আনন্দমেলা পাতায় এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে সিনেমা করার জন্য এটির চিত্ররূপ প্রকাশের স্বত্ব কেনে তখনকার বিখ্যাত ‘ডি-ল্যুক্স ফিল্মস’। অত্যন্ত গরীবের ছেলে বাবাহারা মিঠুর ব্যথা-সকরুণ জীবনের নানা দিক, তার হাসি-কান্না, জীবজন্তুর সঙ্গে তার সখ্যতা, তার অভিমান এই সব নিয়ে বিমল ঘোষ এমন এক নিটোল কিশোর উপন্যাস লিখেছেন যার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে গ্রামীণ জীবনের চালচিত্র। যেখানে সহজিয়া এক বালক তার সারল্য, মায়া দিয়ে সবার মন জয় করে নেয়।
কিন্তু তারই মাঝে মিঠুর জীবনকে কেন্দ্র করে ঘনীভূত দারিদ্র নামক সংকট এই উপন্যাসকে প্রায় সারাক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে। তবু এই উপন্যাস পাঠ করার সময় শিশুরা খুঁজে পাবে সেই প্রকৃতি, নগরায়নের চাপে এবং উদাসীনতায় বর্তমানের শিশুদের জীবন থেকে যা হারিয়ে গিয়েছে।
...মিঠু ঝোপজঙ্গলে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যেতেই ও ভালোবাসে। রকমারি বুনো ফুল আর লতা-পাতা নেড়েচেড়ে দেখে। ছিঁড়ে নিয়ে আসে। মাকে দেখায়, জিজ্ঞেস করে-- ‘এটার কী নাম? ওটার রং অমন কেন?’
ওই বাগানটাই ওর মনে রূপকথার মায়া-কানন। এ-গাছে, সে-গাছে উঠে, মিঠু ওখানেই খুঁজে বেড়িয়েছে সোনার ডালে হিরের ফুল। যা খুঁজেছে, তা পায়নি। খোঁজ পেয়েছে রকমারি পোকামাকড়, পাক-পাখালির ডিম, বাসার। দেখেছে পাখি-মার সঙ্গে পাখির ছানাদের ভাব-ভালোবাসা। দেখেছে তাদের উড়তে শেখা, হাওয়ায় ভাসা। (মায়ের বাাঁশি, মৌমাছি রচনাবলী ১, পৃ-২৪৭)
ভুবনায়নের যান্ত্রিকতায় প্রকৃতিপাঠের যে অমূল্য প্রবাহ আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে এবং এখনও যাচ্ছে এই উপন্যাসে মৌমাছি আমাদের কিছু সময়ের জন্য হলেও সেই অনাড়ম্বর অথচ মহার্ঘ গ্রাম-প্রকৃতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন। সেই সঙ্গে এই উপন্যাসটি পড়ে আমার আর একটি কথাও মনে হয়-- কিশোরদের জন্য লেখা উপন্যাসে মৌমাছি এত বিষাদের ছবি আঁকলেন কেন? তবে কি তিনি ছোটদের মানসিকভাবে শক্ত করার যে ব্রত গ্রহণ করেছিলেন এই উপন্যাসের পাঠকদের কাছে তারই পরীক্ষা নিলেন?
তবে ছোটদের কাছে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় বই চেঙা-বেঙা(১৯৫৬)। মজার ছবি ও গল্পের এ এক অনন্য বই। মৌমাছির লেখা গল্পে ছবি এঁকেছিলেন শিল্পী ধীরেন বল। অবশ্য বর্তমানে যে সংস্করণ পাওয়া যায় তার ছবি এঁকেছেন প্রশান্ত মুখার্জি। ধবধবে সাদা এক ছোট্ট খরগোশ-- নাম তার চেঙা। আর সবুজ গা, থপথপে চলন যে ব্যাঙের তার নাম বেঙা। এই দুই বন্ধুর মজার কান্ডকারখানা নিয়ে তিনটি অ্যাডভেঞ্চারের গল্প লিখেছিলেন মৌমাছি-- পিকনিক, নাকাল নেংটি, চালাক বোকা। তিনটিই শিশুদের কাছে সমান জনপ্রিয়। এই গল্প সিরিজটি লেখার জন্য মৌমাছি সাহিত্য অকাদেমি কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
ছেচল্লিশের দাঙ্গা ও তৎপরবর্তী ঘটনাপরম্পরায় ঘরছাড়া মানুষের উদ্বাস্তু জীবন নিয়ে লেখা বিমল ঘোষের ‘ঝড়ের পালক’ একটি অসাধারণ উপন্যাস। এই উপন্যাসে সময়সচেতন লেখক ভারতবর্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়পর্বকে অত্যন্ত নিপুণভাবে এঁকেছেন। দশ বছরের ছোট্ট বালক দুখু, তার বোন ছ’বছরের লখু এবং তাদের ঠাকুমাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসের মূল কাঠামো। ছোট্ট দুখুর চোখ দিয়ে মৌমাছি সেই সময়কার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, খুন, লুঠতরাজ, অগ্নিকান্ডের ছবি আমাদের প্রত্যক্ষ করান--
সে চোখ বুজেই স্পষ্ট দেখছে--- তার বুড়ি ঠাকুরমা রাতের গহন আঁধারে একটা জলমরা নদী পেরুচ্ছে হাঁটুর কাপড় তুলে দুখুকে কাঁধে চড়িয়ে। তাদের চারপাশে নাচছে লকলকে আগুনের শিখা। ঘরবাড়ি পুড়ছে দাউ দাউ করে। আকাশে বাতাসে বুকভাঙা হাহাকার। ভয়-পাওয়ানো হিংসা মারামারির খুনচাপা বীভৎস চিৎকার। (ঝড়ের পালক, মৌমাছি রচনাবলী ১, পৃ-৩৬৪)
ইতিহাসের এক ট্র্যাজিক অধ্যায়ের সামনে বিমল ঘোষ আমাদের দাঁড় করিয়ে দেন। ১৯৫৯ সালে যখন এটি প্রকাশিত হয় পশ্চিমবঙ্গে তখন আর এক ট্র্যাজিক অধ্যায়। সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই তখন খাদ্য আন্দোলনের ঢেউ। ব্যাপক আইন অমান্য, ভুখা মিছিল, গ্রেপ্তার, ছাত্র ধর্মঘট-- সব মিলিয়ে রাজ্যে তখন এক টালমাটাল পরিস্থিতি। এমনই সময়ে প্রকাশিত হয় ‘ঝড়ের পালক’।
দাঙ্গাবিধ্বস্ত সময়ে ছোট্ট দুখু ওরফে সুখরঞ্জন ও লখু ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের বাবা-মার কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বৃদ্ধা ঠাকুমার সাথে এসে আশ্রয় নেয় সরকারি উদ্বাস্তু ক্যাম্পে। এখান থেকে তাদের জীবন বিচিত্র খাতে বইতে থাকে। যে জীবনে পর্বতপ্রমাণ কষ্ট। যে জীবন নিরুপায় মানুষকে ভিখারি, চোর কিংবা মাস্তান বানিয়ে দেয়। পরে ঘটনা-পরম্পরায় দুখু তার বাবা-মাকে ফিরে পায়। এই উপন্যাসে মেকি উদ্বাস্তুদরদী ভোটপ্রার্থী রায়বাহাদুর মোহন সিংহের যেমন দেখা মেলে, তেমনি পাই সহৃদয় উদ্বাস্তু-ক্যাম্প সুপারিনটেন্ডেন্ট নাগ সাহেব এবং ¯েœহশীলা রায়বাহাদুর-গিন্নিকে। একদা জমিদারগৃহিনী সময়ের ফেরে কীভাবে ভিখারি হয়ে ওঠে(বলা ভালো ভিখারি হতে চায়) তারই করুণ চিত্র এই উপন্যাসে এঁকেছেন মৌমাছি--
দুখুর ঠাকুরমার মাথাতেও ফন্দি ঘোরে।... ছোটে এখানে সেখানে। স্টেশনে যায়, সন্ধ্যার অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে। ডেলি প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে পয়সা চাইবার মতলবেই যায়। হাত পেতে চাইতে পারে না আর পাঁচজন উদ্বাস্তুর মতো।... না চাইতে পেরে ফিরে আসে।...
অনেক দিন পরে চোখে ভেসে উঠল স্বর্গবাসী জমিদার-স্বামীর পাকানো চোখ দুটো। ছুটে গিয়ে দাঁড়ালো স্টেশনের বাইরে একগলা ঘোমটা টেনে ফটকের ধারে। টলতে টলতে অন্ধকার রাস্তার একটা গাছের আড়ালে গিয়ে বুড়ি হাউ-হাউ করে কেঁদে উঠল।
রায়বাহাদুর-গিন্নি শহর থেকে ফিরছিলেন। ...তিনি কান্না শুনে বুড়ির কাছে এগিয়ে গেলেন। বললেন, ‘কী হয়েছে গা ? কাঁদছ কেন অমন করে ?’
বুড়ি আরো জোরে কেঁদে উঠল। ছেলেমানুষের মতো বলল-- ‘ভিক্ষা করনের লাইগ্যা রোজই আইতে আছি। পারতে আছি না মা।’
(ঝড়ের পালক, মৌমাছি রচনাবলী ১, পৃ-৩৬৬-৬৭)
মূল্যবোধের অবক্ষয় ও কিছু মানুষের উসকানিতে এক বিপুল সংখ্যক মানুষ কীভাবে অসহায় ও বিপন্ন হয়ে ওঠে এ উপন্যাস তারই এক দলিল।
উপন্যাসের পাশাপাশি ছোটদের উপযোগী অনেক গল্পও লিখেছেন বিমল ঘোষ। কিন্তু প্রতিটি গল্পেই তিনি তাদের জন্য কিছু না কিছু বার্তা রেখেছেন যা তাদের মানসগঠনে সহায়ক হতে পারে। এমনই দুটি গল্পগ্রন্থ ‘যে গল্পের শেষ নেই’(১৯৪২) এবং ‘নয়া যুগের রূপকথা’(১৯৪৭)। ‘যে গল্পের শেষ নেই’ গ্রন্থে মোট আটটি গল্প আছে। গল্পগুলি হল-- যে গল্পের শেষ নেই, মরণ-জয়ী, আনন্দ-উৎসব, পাগলা মোনা, এদের তোরা চিনলি না, দেশের মাটি, ব্ল্যাক-আউট, এই কি শেষ। এই গল্পগ্রন্থটি যখন প্রকাশিত হয় বিশ্বযুদ্ধের রণহুঙ্কারে সারা পৃথিবী তখন কাঁপছে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সামিল হয়েছে দেশের মানুষ। জাপানি বোমাতঙ্কে প্রায় সবারই তখন বুক দুরুদুরু। দেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয়দের মনে তখন নিঃশেষে প্রাণ দান করার তীব্র ব্যাকুলতা। এমনই এক সন্ধিক্ষণে প্রকাশিত হয়েছিল ‘যে গল্পের শেষ নেই’। যে কোনও সমাজ ও দেশসচেতন লেখকের লেখায় তখন স্বাধীনতার বার্তা কম বেশি উঠে আসছে। রূপকার্থে মৌমাছি এই গ্রন্থে লিখলেন তেমনই কিছু গল্প। ‘যে গল্পের শেষ নেই’-এ মূল চরিত্র রাজার কন্যা ভারতী। ছোট্ট কিশোর চঞ্চল অত্যাচারী রাজাকে তার মুখের উপর শুনিয়ে দিয়েছিল তাদের দাবি, চেয়েছিল স্বাধীনতা। সেই অপরাধে শূলে চড়িয়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলে ভারতী আর চুপ করে থাকতে পারেনি। সে চায় পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচন করতে। চায় অত্যাচারী রাজার বিরুদ্ধে প্রজাদের একজোট করতে। রাজা জানতে পেরে তাকে বনে নির্বাসন দেয়। সেখানে সে প্রার্থনারত অবস্থায় দেবতার দেখা পায়। দেবতার কাছে সে স্বাধীনতা অর্জন করার তেজ ও শক্তি চাইলে দেবতা বলেন--
তোমার লক্ষ সন্তান যদি সমস্ত অন্তর দিয়ে তাদের স্বাধীনতা কামনা করে, শক্তি, প্রেম-ভালোবাসার করে যদি যোগ্য পূজা, তবেই হবে তোমার সফল-স্বপ্ন, পাবে তারা মানুষের অধিকার।
(‘যে গল্পের শেষ নেই’, মৌমাছি রচনাবলী ১, পৃ-২৬)

আবার ‘মরণ-জয়ী’ গল্পে পাই বিদ্রোহী শিল্পী চিরঞ্জীবকে, যে তার গড়া মূর্তির মধ্য দিয়ে মজুরদের উজ্জীবিত করে রক্তচোষা কারখানা-মালিকের প্রাসাদোপম বাড়িকে গুঁড়িয়ে দেয়। যদিও মজুররা তাদের স্বাধীনতার বীর চিরঞ্জীবকে বা তার মাকে আর কোথাও খুঁজে পায় না। যে চারটি মূর্তি এঁকে সে সাধারণ মানুষকে অত্যাচারী মালিকের বিরুদ্ধে একজোট করে তার প্রথমটিতে দেখা গেল-- মজুরদের ছেলেমেয়েরা সব পাঠশালায় পড়াশুনা করছে। তার নীচে লেখা-- ‘এদের ভালো করে খেতে দাও, লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করো, তবে তো ঘুচবে দুঃখ।’ দ্বিতীয়টিতে ছিল-- হাতে মদের বোতল ধরা এক মজুরের ছবি, যাকে একটি প্রকান্ড সাপ জড়িয়ে ধরেছে। নীচে লেখা-- ‘নেশা ভাং ছেড়ে মানুষের মতো মানুষ হও, নইলে তোমাদের কে বাঁচাবে?’ তৃতীয় ছবিতে তিনজন মানুষ মিলে একটা প্রকান্ড ভারি জিনিস মাথার উপর তুলে ধরেছে। কিন্তু এত পরিশ্রমেও তাদের মুখে ক্লান্তির কোনও ছাপ নেই। তার নীচে লেখা-- ‘সবাই এক হও, দেখবে কোনো জিনিসই ভারি নয়’। চতুর্থ ছবিতে দেখা যাচ্ছে-- একটা প্রকান্ড কারখানায় কাজ করছে উজ্জ্বল একদল মজুর, যাদের চোখে-মুখে আনন্দ ও গৌরবের দীপ্তি। নীচে লেখা-- ‘নিজেদের কারখানা গড়ে নিজেরাই চালাও, পরের পেট ভরালে তো নিজের পেট ভরবে না।’ এই গল্পের মধ্য দিয়ে প্রায় নিঃশব্দেই মৌমাছি ছোট-বড় সবার জন্য কিছু অসাধারণ বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন যা তৎকালীন সময়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ছিল। বর্তমান সময়ের নিরিখেও তা প্রাসঙ্গিক বইকি।
গল্পগ্রন্থ ‘নয়া যুগের রূপকথা’-র ‘মাটির পাথর’ গল্পে মৌমাছি দেখিয়েছেন এক উচ্চাকাক্সক্ষী, উদ্ধত কলাগাছ কীভাবে গ্রামকে অবহেলা করে, গ্রামের সকলের আদর, ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে জৌলুশের মোহে শহরে গিয়ে মৃত্যুর প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। মৌমাছির প্রায় সব লেখাতেই আমরা এমনই কিছু ‘মেসেজ’ পাই যা ছোটদের চরিত্র ও মানস গঠনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে।
সুন্দর কিছু ছড়া-কবিতাও লিখেছিলেন মৌমাছি। যদিও তাঁর ছড়ার বই ‘মৌ-মিছরি-মন্ডা’ প্রকাশিত হয়েছিল তার মৃত্যুর অনেক পরে ১৩৯০ বঙ্গাব্দে। কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি যে সব ছড়া-কবিতা লিখতেন তা প্রায় সর্বাংশেই কৌতুকদীপ্ত ও রসোত্তীর্ণ। ‘যদি হয়!’ কবিতায় তিনি লিখছেন--
কুমড়ো যদি ধুমড়ো দেহে জ্যান্ত হয়ে নড়ে,/ ঝুড়ির থেকে লাফিয়ে উঠে আমার ঘাড়ে পড়ে।/ শশা যদি মশাল জ্বেলে ডাকাত হয়ে ওঠে,/ মায়ের গায়ের গয়না নিয়ে পুকুরপাড়ে ছোটে।/ বেগুন যদি আগুন পোয়ায় উনুন ধারে বসে,/ তেল নিয়ে তার কালো দেহে মালিশ করে কষে।/ লঙ্কা যদি ডঙ্কা বাজায় করতালটি পেটে,/ ল্যাজ করে তার বোঁটাটিকে এগিয়ে আসে হেঁটে।/ খাটে শুয়ে আমি ভাবি এসব যদি হয়!/ এমন সময় টিক্টিকিটা ঠিক ঠিক ঠিক কয়।
(মৌমাছি রচনা সম্ভার, পৃ- ১৪৫)
গল্প-কবিতা-উপন্যাসের পাশাপাশি মৌমাছি ছোটদের জন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক রচনা করেছিলেন। শুধু নাটক লেখা নয়, ছোটদের দিয়ে তিনি সেগুলি মঞ্চে অভিনয়ও করিয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রধান দুটি নাটক হল-- ‘পুতুলের দেশ’ এবং ‘যারা মানুষ নয়’। ‘পুতুলের দেশ’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। এই রূপক নাটকটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। ভারতবর্ষের দেশনায়কদের অনুসরণে এই নাটকটির প্রধান প্রধান চরিত্র নির্মিত হয়েছিল। প্রায় এক বছর ধরে রঙমহলে এটি নিয়মিত অভিনীত হয়েছিল। ছোটদের দিয়ে এই নাটক মঞ্চে নিয়মিত অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মৌমাছি এদেশে ‘শিশু রঙ্গমঞ্চ আন্দোলন(চিলড্রেন্স থিয়েটার)’-এর গোড়াপত্তন করেন।
শিশুদের দ্বারা অভিনীত মৌমাছির আর একটি মঞ্চসফল নাটক ‘যারা মানুষ নয়’। শিল্পী সমর দে চিত্রিত এটি একটি মুখোশ নাটক। এটি প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মৌমাছি-র পরিচালনায় এই নাটকটি দু’ মাসেরও বেশি সময় ধরে রঙমহলে মঞ্চস্থ হয়েছিল। স্বাধীন ভারতের তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, ডা. বিধানচন্দ্র রায়, ড. হরেন্দ্র কুমার মুখোপাধ্যায়, ড. প্রফুল্ল ঘোষ, শরৎচন্দ্র বসু প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই নাটকের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে মৌমাছিকে ছোটদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসাবে অভিহিত করেছিলেন।
রূপকথার গল্প নিয়ে মৌমাছি-র আর একটি নাটক ‘মায়াময়ূর’ বিশ্বরূপা রঙ্গমঞ্চে সাত মাস ধরে নিয়মিত অভিনীত হয়েছিল। সুন্দর পোষাক, মঞ্চ, আলো-- সবটার পিছনে অনেক টাকা খরচ করে পেশাদারি ঢঙে এটি মঞ্চস্থ হত। এই নাটকগুলি বইবাজারে আজ আর পাওয়া যায় না। তবে কি যে বিষয়গুলি নিয়ে এই নাটকগুলি লেখা হয়েছিল বর্তমানে তার প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে গিয়েছে? নাকি প্রকাশকের অবহেলায় তা পাঠকের নাগালের বাইরে? এর উত্তর ভাবিকালের পাঠকদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভালো।

তিন
মৌমাছি সম্পর্কে এত কিছু লেখার পরও যে বিষয়ের উল্লেখ না করলে তাঁর সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলা হয় না তা হল ‘মণিমেলা’ প্রসঙ্গ। এই মণিমেলা-র জন্য বেশি সময় দেবেন বলে বিমল ঘোষ তাঁর লেখায় পরিপূর্ণ মনোনিবেশ করেন নি। রাজনৈতিক হানাহানি, চক্রান্ত, কোন্দল থেকে শিশুমনকে বিযুক্ত রেখে তিনি তাদের আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তাই সারা দেশজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘মণিমেলা’। ছোটদের চারিত্রিক ও মানসিক গঠনকে আরো বিকশিত করার জন্য বড়দের তত্ত্বাবধানে ছোটদের নেতৃত্বে গঠিত সংগঠন এই ‘মণিমেলা’। আর তাঁর লেখায় তিনি শিশুমনে গেঁথে দিলেন প্রকৃতি ও প্রাণীজগৎকে আপন করে নেওয়ার মন্ত্র। ‘মণিমেলা’ প্রসঙ্গে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভগীরথ যেমন সগর বংশের ছেলেদের উদ্ধারের জন্য গঙ্গাকে এনেছিলেন, মৌমাছিও তেমনি ছোটোদের মঙ্গলের জন্য মণিমেলার কর্মধারার মধ্যে দিয়ে তাদের প্রাণশক্তিকে কল্যাণের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের সমস্ত কিশোর-কিশোরী এই আদর্শকে গ্রহণ করবে।’
মণিমেলা-র উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে একটি সভায় বিমল ঘোষ বলেছিলেন,
আমাদের দেশে স্কুল বা কলেজীয় শিক্ষার নামে যে শিক্ষা চলছে তাতে প্রাণপ্রাচুর্যের অভাবে শিশু বা কিশোর সত্তা তার মনের খোরাক পায় না। এটা সবাই আজ উপলব্ধি করেন যে, এই শিক্ষা শিশু ও কিশোরদের ছন্দহীন বিকৃত রুচিসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করতে সাহায্য করছে মাত্র-- এ অবস্থার পরিবর্তন মণিমেলাকেই করতে হবে। (দেশমণিকার মৌমাছি, পৃ-৬৮)
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী শিক্ষাবিজ্ঞানী না হলেও মৌমাছি প্রকৃতঅর্থেই ছিলেন এক আধুনিকমনস্ক শিক্ষাবিজ্ঞানী যিনি তাঁর ভাবনা ও কর্মকে শিশুকল্যাণে যুগপৎ মিলিয়েছিলেন।
১৯৪৭ সালের ১৭ ফেব্র“য়ারি আনন্দমেলা-য় মৌমাছি ‘মণিমেলা’ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন। আনন্দমেলা-র এক একজন সদস্য এক একজন মণি। তারা যে সঙ্ঘে এসে মিলিত হবে তাই-ই মণিমেলা। মণিমেলা সারা দেশে, এমনকি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেও এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে এর সদস্যসংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মণিমেলা যখন প্রথম গড়ে ওঠে তখন সারা ভারতে শিশু-কিশোর সংগঠন বা আন্দোলন বলে কিছু ছিল না। এ বিষয়ে সারা ভারতে তিনিই পথিকৃৎ। এ কথা বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে মৌমাছি ছিলেন প্রাক-স্বাধীনতা ও স্বাধীনোত্তর ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিশু-কিশোর সংগঠক। অথচ তাঁর কোনও সঠিক মূল্যায়নই করল না আমাদের এই দুর্ভাগা দেশ।
মণিমেলাকে একটি সুশৃঙ্খল সংগঠনে পরিণত করার জন্য মৌমাছি তাদের কিছু নিয়মের নিগড়ে বাঁধতে চেয়েছিলেন। ‘মণি’দের অবশ্যপালনীয় বারোটি নিয়ম ছিল এ রকম--
১. ‘মণি’ হবে বিশ্বাসের ঠাঁই। ২. ‘মণি’র আনুগত্য চাই। ৩. ‘মণি’ দেবে সেবা শত। ৪. ‘মণি’ হবে ন¤্র নত। ৫. ‘মণি’ হবে বন্ধু সবার। ৬. ‘মণি’র রবে দয়া অপার। ৭. ‘মণি’ সর্বদাই বাধ্য থাকে। ৮. ‘মণি’ মনকে খুশিই রাখে। ৯. ‘মণি’ বে-হিসাবী নয়। ১০. ‘মণি’ সাফসুতোর রয়। ১১. ‘মণি’ রাখে সাহস শক্তি। ১২. ‘মণি’র থাকে শ্রদ্ধা ভক্তি।
প্রাক্তন এক মণি’র কাছে শুনেছি, মণিমেলা-র প্রতিটি কেন্দ্রে প্রেয়ার হত, অনুষ্ঠানের কার্যবিবরণী মৌমাছিকে লিখে পাঠাতে হত। সে সব দেখে তিনি মণিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে নেতৃত্বের ধারণাকে জাগ্রত করার জন্য তিনি প্রতিটি মণিমেলার যোগ্য ‘মণি’কে ‘মধ্যমণি’ নামে অভিহিত করলেন, যে কিনা নিরপেক্ষ ভাবে দক্ষতার সঙ্গে এই দলকে নেতৃত্ব দেবে। সংঘের প্রতিটি মণি-ই মধ্যমণি হওয়ার স্বপ্ন দেখত। নিয়মানুবর্তিতা ও সত্যবাদিতার নিগড়ে নিজেকে পরিশীলিত করে তোলার এই উন্মাদনা অপূর্ব দক্ষতায় শিশুদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন তিনি। মৌমাছির এই সব কর্মকান্ডে মুগ্ধ সুখলতা রাও লিখলেন, ‘মৌমাছি ভারতের ভবিষ্যৎ সমাজ গড়ে তুলেছেন।’ আর প্রমথনাথ বিশী লিখলেন, ‘মৌমাছি-র মধুচক্রটির কর্মীর দল সংখ্যায় যেমন হাজার হাজার, কাজকর্মেও তেমনি তাদের নানামুখী কৃতিত্ব।’
প্রতি বছর সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বার্ষিক নিখিল ভারত মণিমেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হত। সেখানে সারা ভারত ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে মণিমেলার প্রতিনিধিরা যোগ দিতেন। মণিমেলার সাফল্যে উৎফুল্ল মৌমাছি-র পরিকল্পনায় ১৯৪৮ সালের বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশিত হল মণিমেলা সংগঠনের মুখপত্র ‘মণিমুকুর’। সম্পাদনার দায়িত্ব পেলেন মৌমাছির চিরসঙ্গী বুদ্ধভূতুম(নির্মল চৌধুরী)। কিশোর সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ডা. অরুণ ভট্টাচার্য। এই সম্মেলনের পাঁচ দিন ধরে ‘মণিবার্তা’ নামে একটি শিশুদের দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হল। বাংলা ভাষায় এটি প্রথম শিশু-দৈনিক সংবাদপত্র।
ভারতবর্ষের শিক্ষাবিপ্লবের অন্যতম নায়ক ছিলেন মৌমাছি। মণিমেলার বিভিন্ন সম্মেলনে তিনি যে সারদীপ্ত বক্তব্য রাখতেন তা পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার প্রসারে কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়েছে। স্কুল প্রসঙ্গে তিনি ১৯৪৮ সালে কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন--
ইস্কুল বলতে শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বোঝায় না, শিক্ষার ধারাকেও নয়। কিংবা অভিজ্ঞতাকে উত্তরপুরুষে সঞ্চারিত করবার প্রেরণাকেও নয়। ইস্কুল হচ্ছে সংগঠিত কার্যনিয়ামক প্রথা অর্থাৎ ঙৎমধহরংবফ ৎবমঁষধঃবফ রহংঃরঃঁঃরড়হ। এই ব্যবস্থার তিনটি স্তর; প্রথম-- প্রথা, দ্বিতীয়-- কার্য নিয়ন্ত্রণ, তৃতীয়-- সংগঠন। তিনটি স্তরের কোন্টি কোন্ সময়ে আসছে, সে কথা অনুধাবন করে চলতে পারলেই তা থেকেই হবে আধুনিক শিক্ষার প্রস্তুতি!
(দেশমণিকার মৌমাছি, পৃ. ৬২)
মৌমাছি তাঁর শিল্পীসত্তা দিয়ে অনুভব করেছিলেন, ছোটবেলা থেকে শিশুদের মধ্যে পড়াশুনার পাশাপাশি শিল্পচেতনা জাগিয়ে তুলতে পারলে তারা ভবিষ্যতে সুনাগরিক হবার সুযোগ পাবে। তাই মৌমাছি মণিমেলার কর্মসূচির মধ্যে শিল্পকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন, শিক্ষামূলক শিল্পচর্চা শিশু ও কিশোরদের সুস্থ, সরল ও আনন্দময় জীবনের সন্ধান দেবে এবং নিয়মানুবর্তিতা ও নম্র হতে সাহায্য করবে।
শিশুদের চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে তিনি ‘মণি পাঠাগার’কে মণিমেলা কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় হিসাবে স্থান দিয়েছিলেন। প্রাক্তনদের কাছে মৌমাছি প্রায়ই বলতেন--
তোরা ভাবিস না, একদিন সবাই বুঝতে পারবে ‘মৌমাছি’ কেন ‘মণিমেলা’র মধ্যে দিয়ে দেশের শিশু ও কিশোরদের গড়ার এই আয়োজন করেছিল। সেদিন হয়ত আমি এই পৃথিবীতে থাকব না। তবুও আমি তোদের বলছি--দেখবি-- আমার প্রতিদিনের ইচ্ছা, ভাবনা ও জীবনীশক্তির মধ্যে দিয়েই জেগে উঠবে আমার দেশের তরুণদল। সেদিনই সার্থক হবে আমাদের এই ‘মণিমেলা’ গড়া। (দেশমণিকার মৌমাছি, পৃ. ৭৯)
আমাদের দুর্ভাগ্য, মৌমাছি-র সেই সাধের মণিমেলার আজ আর কোনো অস্তিত্ব নেই।

চার
স্মৃতিচারণে স্বপনবুড়ো(অখিল নিয়োগী) লিখেছিলেন, ‘মৌমাছি যে কত বড়ো শিশুদরদী ও সংগঠক তা সবাই হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন সেদিন, যেদিন ও পৃথিবীতে থাকবে না। তখনই তাঁর পূর্ণ মূল্যায়ন হবে।’ কিন্তু সত্যিই কি তা ঘটেছে? যিনি সারাজীবন শিশুকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করলেন তাঁর জন্মশতবর্ষে তাঁকে নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও প্রচারমাধ্যম এত নীরব কেন? পরাধীন ভারতবর্ষের অগণিত শিশু-কিশোর তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সারা দেশজুড়ে অসংখ্য মণিমেলা কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল। দেশের এই অসংখ্য মানুষ যাঁরা তাঁর লেখা ও কাজকে প্রশংসা ও নিজ নিজ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, তাঁরাও কি ভেবেছিলেন তাঁদের উত্তরসূরিদের কাছে মৌমাছি এতখানি অবহেলিত হবেন? তবে কি তাঁর রচনা প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে? মৌমাছি-র পরিকল্পনায় প্রকাশিত ‘আনন্দমেলা’ দেখে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ৮ বৈশাখ চোদ্দ লাইনের এক আশীর্বাণীতে তিনি লিখেছিলেন--
মূর্ত্ত তোরা বসন্তকাল মানবলোকে,
সদ্য নবীন মাধুরীকে আনলি চোখে।
পুরানোকে ঝরিয়ে দেওয়ার মন্ত্র সাধা,
সরিয়ে দিলি জীবনপথের জীর্ণ বাধা।
ফুল ফোটানোর আনন্দগান এলি শিখে,
কোথা থেকে ডাক দিয়েছিস মৌমাছিকে ?
চঞ্চল ঐ নাচের ঘায়ে তরুণ তোরা
উচ্ছলিয়া দিলি ধরার পাগলা-ঝোরা। ...
জীবনপথের জীর্ণ বাধা সরিয়ে যিনি ফুল ফোটানোর আনন্দগান শিখিয়েছিলেন সেই শিক্ষানায়ক-পরিচালক মৌমাছি থেকে আমরা আর কতদিন বিযুক্ত হয়ে থাকব? এখন সময় হয়েছে জীর্ণপাতার খাঁজে ভাঁজে তিনি যে সব মণিমুক্তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গিয়েছেন তাকে নতুন করে আবিষ্কার করার। আমাদের পাপ স্খালনের জন্য অবিলম্বে একটি ট্রাস্ট গড়া দরকার যাতে নিযুক্ত গবেষকরা মৌমাছির সকল লেখা তন্নতন্ন করে
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×