এন জুলফিকার
দমকা হাওয়ার সাথে ভেসে এলো ভুঁইচাঁপা, শিউলি-প্রহর। চূর্ণ নক্ষত্র থেকে সহসাই উড়ে এলো তোমার আঁচল। মাঝখানে পোড়োবাড়ি। রাশি রাশি ধুলো আর নীরব প্রহর জুড়ে নেই কোনো পদছাপ। এখানে জমিয়ে রাখা নুনের পাহাড় কারা যেন বহুদিন লুঠ করে গেছে। রং-চটা জানালার পাল্লার ফাঁক দিয়ে সহসাই ঢুকে পড়ে জোনাকির আলো। দপদপে। যেন কান্নাও থমকে আছে দূরে। আর দখিনা বাতাস বেয়ে প্রাগৈতিহাসিক কোনও ঋণ সকল ঘুলঘুলি ছুঁয়ে পাক খায়। চিনে নেয় বেহিসাবি প্রণয়-সকাল...
বিদ্যুত-চমকের মতো এইসব ছবি আমার অ্যালবামে ভরে ওঠে। যত্নে টিকিয়ে রাখা নৌকাটি দোল খায়। কোনও মাঝিমাল্লা নেই। আলতা পায়ের ছাপ বহুদিন পড়েনি পাটায়। রাত বাড়ে। উন্মুখ কারও মুখ ঝর্ণাজলে ভেসে ওঠে দূরে। আর আমাদের জোড়াছবি টলমল করে। ধাক্কায় ভেঙে যায় জলের অতল। আমি সহসাই ঋজু হই। গহিন আকাশ থেকে কে যেন ছড়িয়ে দেয় আলো। নিষ্কম্প। এ কি আমারই প্রভা ? দন্ড-প্রহর জুড়ে আকাশের দিকে মুখ। প্রশ্নেই ভরে ওঠে ভিতর-বাহির।
ক্রমশ গুহার মাঝে ঢুকে পড়ি, একা। চৌদিকে অক্ষৌহিণী। আকাশ ও পাতাল ছাড়া পালাবার পথ নেই। কতদিন শূন্য ঝুলি। মুখোসের সজ্জাও লোকালয়ে এসেছি ফেলে। অতএব আলোর কথা ভাবি। তীব্র আলোর ছটা। চৌদিক ভেসে যাক আলোয়-আলোয়।
এসব তুমিও জানো। বাতাসে প্রাসাদ গড়ি আমি। প্রাকৃত শিকড়গুলো আচমকা খুলে ফেলে দোল খাই, নেচে উঠি তার-সপ্তকে। এই সব নির্মোহ, স্পন্দনভোর সবুজ কলোনি বেয়ে ঘুরপাক খেলে সহসাই ভেসে আসে নূপুরের ধ্বনি। অন্ধকারের সকল জন্মরহস্য প্রবল ধাক্কায় খুলে যায়। স্নানের ঘাটে ঘাটে উন্মুখ গোপিনীর উলুধ্বনি ছুঁয়ে জেগে ওঠে জলসিঁড়ি। সিঁড়িতে পায়ের পাতা, গ্রাস করে জল। থ্যাঁতলানো চাঁদ আর কবিতার খাতা নিয়ে তুমি ঠায় বসে থাকো। দু’হাতে আঁকড়ে রাখো দেহজ-প্রবাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:৩২