হায়রে মানুষ রঙিন মানুষ
------------------------------------তিন অক্ষরের এ শব্দটির সাথে সয়ং
সৃষ্টি কর্তা জড়িত । এর গবেষণা শেষ করার মত নয়। গেল এক মাসে দুজন মানুষের সাথে নতুন করে পরিচয় হলো । একজন মানুষ অন্য জন অমানুষ। যিনি মানুষ তার সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল ১৯৯৭সালে যখন আমি জার্মানীতে ছিলাম । আমি কাজ থেকে ঘরে ফিরছিলাম । তখন মধ্যরাত , দেখি একজন ঠান্ডা কাতর মানুষ রেল ষ্টেশনে বসে-বসে কাঁপছেন। তার কাছে দিয়ে যাবার সময় মনে হলো বাঙালী । জিজ্ঞেস করতেই তাঁর চোখ দিয়ে পানি পরে গেল। তারপর বললেন ,ভাই প্রথম বার বিদেশ কিছুই চিনি না । কোথায় যাব,কি ভাবে এজাইল করব কোন ধারণা নেই। কোন টাকা পয়সা নেই। সারাদিন ধরে ঘুরছি ,পেটে ক্ষুধা কিছুই খাওয়া হয়নি। মন বড় কষ্ট পেল তাঁর কথায়। আমি তাকে আমার বাসায় নিয়ে গেলাম । তিন দিন রাখলাম । তারপর ট্টেইন এর টিকেট করে উঠিয়ে দিলাম , যে শহরে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য যেতে হয়। ট্টেইনে এ উঠার সময় তাঁর হাতে তৎকালীন জার্মান মার্ক এর ৫০ মার্ক দিয়ে বললাম টাকাটা খরচ করবেন না। আপনি যেখানে যাচ্ছেন তাঁরাই আপনার
ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিবে। টাকাটা দিলাম, এটা দিয়ে ফুল কিনবেন এবং বার, রেষ্টুরেণ্টে গিয়ে ব্যবসা করবেন । এখন সরকার কাজের পারমিশান আর দিচ্ছে না । তাই এ সামান্য পুঁজি দিয়ে শুরু করবেন। তারপর আর যোগাযোগ ছিল না তাঁর সাথে। না থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক । তখন ,এখনকার মত যোগাযোগের এত সুযোগ সুবিধা ছিল না । আমরা সবাই ছিলাম ভাসমান। বহু বছর পর কিছু দিন আগে প্যারিস গাঁরদো নর্থ তে বাজার করতে গেলাম।
হটাত আমার পিছন থেকে একজন জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে আপনি জুয়েল ভাই না । আমি আমতা-আমতা করতে লাগলে তিনি তাঁর পরিচয় ও জার্মান কাহিনী বলেন। প্রথমেই বলেন ৫০ মার্ক এর কথা । এ দিয়ে তিনি নাকি ব্যবসা করে তাঁর মেয়েকে স্কুলে পড়িয়েছেন এবং পরিবার চালিয়েছেন। গল্পের ফাঁকে-ফাঁকে চোখ
মুছছেন। তাঁর গল্পে আমার ও মনটা ভরে গেল।
এইতো কিছু দিন আগে এমনি আরেক জনকে
ঘরে নিয়ে এলাম । একদিন, দু'রাত রাখলাম।
তার কথামত ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে এলাম । যাবার পর থেকে আজ অবধি একটা ফোন দিয়ে বলেও নি , কেমন আছে। উল্টো আমি তার পরিচিত একজন কে ফোন দিয়ে তার খুঁজ নিলাম।এই প্যারিস শহরে অপরিচিত কেউ কে একদিন রাখা তিন বেলা খাবার দেয়ার মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নেই । যারা করেন তাঁরা অবশ্যই ভাল মানুষ। যারা করেন না তাঁরা যে খারাপ মানুষ এ বলছি না । কারণ প্যারিস এ বসবাসরত শুধু বাঙালী না সকল জাতির জন্যই জীবন কঠিন ।এ কঠিনের ভীতর যারা করছেন আমি বলব তাঁরা অনেক ভাল মানুষ , এ জন্য যে নিজেরা কষ্ট করে অন্যের সেবা করছেন । কেন যে অমানুষ গুলো এমন হয়। হায়রে মানুষ রঙিন মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:১০