somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিসানের কুমির দর্শন .......

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নানির কাছে হাড় মানতে হলো সাবার। ওঝা ডেকে আমার নাভী থেকে কিভাবে যেন তাবিজ,কয়লা , লাল কাগজ ( যা কুফরি কালাম পরিচিত ) আস্তে আস্তে বেড় করতে থাকলেন। ভয়ে আমি কুঁকড়ে গিয়েছি, আম্মার চোখে পানি " হায় আমার ছেলেটা কার এমন কি ক্ষতি করলো ? আল্লাহ আমার ছেলেটাকে রেখে যাও, খান জাহান আলীর দরগার কালা পাহাড় আর ধলা পাহাড় কে জোড়া মুরগী খাওয়াবো " । কুমিরের কথা শুনে ঐ অবস্থায়ও আমার মুখে হাসি ফুটলো ।
ছোট বেলায় কি এক অসুখের কারনে আমার পেট ফুলে থাকতো। ছোট শহরের নারায়ন ডাক্তার , ছাবেদ আলী ডাক্তার বা রফিক ডাক্তার ফেল করার পরে - নানির এই ওঝা ডাকা। আম্মার মানতের জন্য তিন দিনের মধ্যে বাগেরহাট খান জাহান আলী ( রা: ) এর মাজার। বিশাল দিঘী দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। টুপি পড়া পান চিবাতে থাকা খাদেমগন এসে ওখান থেকে কেনা মুরগী নিয়ে গেলেন, কুমিরকে দিবেন তারা। কুমির দেখাবেন , তাদের অনুসরন করে দিঘীর এক কোনায় গেলাম, দেখলাম কুমীর। কিন্তু জীবিত কিনা বুঝতে পারলাম না। কালাপাহাড় আর ধলাপাহাড় বলে চিৎকার দিবে , দিঘী থেকে উঠে আসবে জীবিত কুমির- এমনটা আর দেখা হলো না।
১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে পারিবারিক বিপর্যয়। মেঝ ভাই বাকশাল এর জেলা কমিটির শ্রম সম্পাদক হওয়ায়, পলাতক। জাসদ করে এমন ৩ বড় ভাইও পলাতক। আমি ক্লাস এইটের ছাত্র। থানার ওসি হারুন ভাইয়ের সাথে আমাদের পরিবারের বন্ধুত্ব। দুপুরের দিকে হারুন ভাবি বাসায় এসে আম্মাকে বললেন যে এখনি আমাকে নিয়ে যেন দুরে কোথাও চলে যান। হারুন ভাই এই খবরটা ভাবিকে দিয়ে আমাদের বাসায় পাঠিয়েছেন। আমাকে নাকি গ্রেফতারের জন্য চাপ , ভাবি বাসায় যাবার পরে পুলিশ আসবে আমাকে গ্রেফতার করতে। আমরা সবাই হতভম্ব। আমাকে গ্রেফতার ? এই বালক বয়সে ? ভাবির কথায় ঐ মুহুর্তে আম্মা বাসায় থাকা আমার এক চাচাতো ভাইকে নিয়ে আবার বাগেরহাট মাজারের উদ্দেশে যাত্রা। আবার মানত । আবার দিঘী থেকে উঠে আসা কুমির দেখতে না পারা।

হযরত খান জাহান আলী ( রা :) এর মাজার



মাজারের বিশাল দিঘী


এরপর চিড়িয়াখানায় কুমির দেখা। জীবিত না মৃত বুঝা যায় না।

গত ২৭ জানুয়ারি মোংলা পিকনিকে যাবার পথে মোংলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিটিকে অনুরোধ করালাম , কাছাকাছি সুন্দরবনের কোন পয়েন্টে যেতে পারি কিনা তার ব্যবস্থা করতে। উনি একটি বেশ ভালো লঞ্চের ব্যবস্থা করে দিলেন। ওনাকেও সপরিবারে আমন্ত্রণ জানাতে রাজি হলেন।

ঐ যে সুন্দরবন দেখা যাচ্ছে , আমার ছেলেদের মুখে হাসি, উত্তেজনা




লঞ্চ থেকে নামলাম করমজল। ড: মিজান ভাই বললেন , এখানে এমন একজন আছেন যার কথা কুমির এবং হরিণ শুনে। উনি ডাকলে কুমির এবং হরিণ চলে আসে। খুঁজে বেড় করলেন সেই লোককে , নাম রউফ সাহেব। আমাদের উত্তেজনার শেষ নেই। চলে গেলাম কুমিরের পুকুরে।
ডাকদিলেন রউফ সাহেব " রোমিও জুলিয়েট কোথায় তোমারা আসো এখানে, দেখবো তোমাকে "। অপেক্ষা অপেক্ষা , কুমির আসেনা। কেউ একজন বললেন " দূর কিসের কুমির ? "
রউফ সাহেব বললেন " একজন মানুষকে ডাকলেও তো বেড় হতে ১০ মিনিট লাগে "। এরপর বেশ রাগ হয়ে " রোমিও জুলিয়েট কি হলো তোমাদের ? ডাকছি শুনছো না , আসো তারাতারি "
পানিতে হালকা কম্পন - এই যে এসে গিয়েছে :)




" রোমিও , জুলিয়েট কোথায় ? একা কেন ? সামনে আসো জুলিয়েট
"




" থামো এখন "



" হা করো "



" জুলিয়েট , তুমি কি করছো ? আসো তারাতারি। লজ্জা পেলে নাকি ?"
আবার সামান্য কম্পন পানিতে। কিছুটা লজ্জিত জুলিয়েট , শুধু মুখটা তুলে আছে পানি থেকে। জুলিয়েট আর তার পুরো লজ্জা কাটাতে পারেনি। নিজকে তিনি আর সম্পূর্ন ভাবে দেখান নি ।




পানি থেকে উঠে আসা কুমির দর্শন হলো জীবনের এতটা বছর পারি দেয়ার পরে। এতটাই মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখছিলাম যে ভিডিও করতেও ভুলে গিয়েছিলাম। শুধু ছবি তুলেছি। আমার ছেলেরাও এভাবে কুমির দেখে এতই উত্তেজিত যে , কুমিরের কাছ থেকে ওদেরকে আর সরাতে পারিনি। সময় ছিল না বেশি। তাই ডাক দিয়ে সুন্দরবনের হরিন দেখার সময় আর পাইনি। তবে তা দেখতে যাবো খুব শীঘ্র ।

যিনি কুমির ডেকে আমাদেরকে দেখিয়েছেন, তিনি হলে রউফ সাহেব। সম্ভবত ষ্টেশন অফিসার পদে আছেন।






অ:ক: শিরোনামে জিসান নামটা ইচ্ছে করে দিলাম। এই নামটা ব্যবহার করলে , সরাসরি বা আভাসে ইঙ্গিতে কেউ লিখলেও নাকি সামুতে হিট হওয়া যায়। দেখি আমি হিট হতে পারি কিনা ? :)

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২৭
১১৮টি মন্তব্য ১১৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×