নানির কাছে হাড় মানতে হলো সাবার। ওঝা ডেকে আমার নাভী থেকে কিভাবে যেন তাবিজ,কয়লা , লাল কাগজ ( যা কুফরি কালাম পরিচিত ) আস্তে আস্তে বেড় করতে থাকলেন। ভয়ে আমি কুঁকড়ে গিয়েছি, আম্মার চোখে পানি " হায় আমার ছেলেটা কার এমন কি ক্ষতি করলো ? আল্লাহ আমার ছেলেটাকে রেখে যাও, খান জাহান আলীর দরগার কালা পাহাড় আর ধলা পাহাড় কে জোড়া মুরগী খাওয়াবো " । কুমিরের কথা শুনে ঐ অবস্থায়ও আমার মুখে হাসি ফুটলো ।
ছোট বেলায় কি এক অসুখের কারনে আমার পেট ফুলে থাকতো। ছোট শহরের নারায়ন ডাক্তার , ছাবেদ আলী ডাক্তার বা রফিক ডাক্তার ফেল করার পরে - নানির এই ওঝা ডাকা। আম্মার মানতের জন্য তিন দিনের মধ্যে বাগেরহাট খান জাহান আলী ( রা: ) এর মাজার। বিশাল দিঘী দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। টুপি পড়া পান চিবাতে থাকা খাদেমগন এসে ওখান থেকে কেনা মুরগী নিয়ে গেলেন, কুমিরকে দিবেন তারা। কুমির দেখাবেন , তাদের অনুসরন করে দিঘীর এক কোনায় গেলাম, দেখলাম কুমীর। কিন্তু জীবিত কিনা বুঝতে পারলাম না। কালাপাহাড় আর ধলাপাহাড় বলে চিৎকার দিবে , দিঘী থেকে উঠে আসবে জীবিত কুমির- এমনটা আর দেখা হলো না।
১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে পারিবারিক বিপর্যয়। মেঝ ভাই বাকশাল এর জেলা কমিটির শ্রম সম্পাদক হওয়ায়, পলাতক। জাসদ করে এমন ৩ বড় ভাইও পলাতক। আমি ক্লাস এইটের ছাত্র। থানার ওসি হারুন ভাইয়ের সাথে আমাদের পরিবারের বন্ধুত্ব। দুপুরের দিকে হারুন ভাবি বাসায় এসে আম্মাকে বললেন যে এখনি আমাকে নিয়ে যেন দুরে কোথাও চলে যান। হারুন ভাই এই খবরটা ভাবিকে দিয়ে আমাদের বাসায় পাঠিয়েছেন। আমাকে নাকি গ্রেফতারের জন্য চাপ , ভাবি বাসায় যাবার পরে পুলিশ আসবে আমাকে গ্রেফতার করতে। আমরা সবাই হতভম্ব। আমাকে গ্রেফতার ? এই বালক বয়সে ? ভাবির কথায় ঐ মুহুর্তে আম্মা বাসায় থাকা আমার এক চাচাতো ভাইকে নিয়ে আবার বাগেরহাট মাজারের উদ্দেশে যাত্রা। আবার মানত । আবার দিঘী থেকে উঠে আসা কুমির দেখতে না পারা।
হযরত খান জাহান আলী ( রা এর মাজার
মাজারের বিশাল দিঘী
এরপর চিড়িয়াখানায় কুমির দেখা। জীবিত না মৃত বুঝা যায় না।
গত ২৭ জানুয়ারি মোংলা পিকনিকে যাবার পথে মোংলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিটিকে অনুরোধ করালাম , কাছাকাছি সুন্দরবনের কোন পয়েন্টে যেতে পারি কিনা তার ব্যবস্থা করতে। উনি একটি বেশ ভালো লঞ্চের ব্যবস্থা করে দিলেন। ওনাকেও সপরিবারে আমন্ত্রণ জানাতে রাজি হলেন।
ঐ যে সুন্দরবন দেখা যাচ্ছে , আমার ছেলেদের মুখে হাসি, উত্তেজনা
লঞ্চ থেকে নামলাম করমজল। ড: মিজান ভাই বললেন , এখানে এমন একজন আছেন যার কথা কুমির এবং হরিণ শুনে। উনি ডাকলে কুমির এবং হরিণ চলে আসে। খুঁজে বেড় করলেন সেই লোককে , নাম রউফ সাহেব। আমাদের উত্তেজনার শেষ নেই। চলে গেলাম কুমিরের পুকুরে।
ডাকদিলেন রউফ সাহেব " রোমিও জুলিয়েট কোথায় তোমারা আসো এখানে, দেখবো তোমাকে "। অপেক্ষা অপেক্ষা , কুমির আসেনা। কেউ একজন বললেন " দূর কিসের কুমির ? "
রউফ সাহেব বললেন " একজন মানুষকে ডাকলেও তো বেড় হতে ১০ মিনিট লাগে "। এরপর বেশ রাগ হয়ে " রোমিও জুলিয়েট কি হলো তোমাদের ? ডাকছি শুনছো না , আসো তারাতারি "
পানিতে হালকা কম্পন - এই যে এসে গিয়েছে
" রোমিও , জুলিয়েট কোথায় ? একা কেন ? সামনে আসো জুলিয়েট "
" থামো এখন "
" হা করো "
" জুলিয়েট , তুমি কি করছো ? আসো তারাতারি। লজ্জা পেলে নাকি ?"
আবার সামান্য কম্পন পানিতে। কিছুটা লজ্জিত জুলিয়েট , শুধু মুখটা তুলে আছে পানি থেকে। জুলিয়েট আর তার পুরো লজ্জা কাটাতে পারেনি। নিজকে তিনি আর সম্পূর্ন ভাবে দেখান নি ।
পানি থেকে উঠে আসা কুমির দর্শন হলো জীবনের এতটা বছর পারি দেয়ার পরে। এতটাই মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখছিলাম যে ভিডিও করতেও ভুলে গিয়েছিলাম। শুধু ছবি তুলেছি। আমার ছেলেরাও এভাবে কুমির দেখে এতই উত্তেজিত যে , কুমিরের কাছ থেকে ওদেরকে আর সরাতে পারিনি। সময় ছিল না বেশি। তাই ডাক দিয়ে সুন্দরবনের হরিন দেখার সময় আর পাইনি। তবে তা দেখতে যাবো খুব শীঘ্র ।
যিনি কুমির ডেকে আমাদেরকে দেখিয়েছেন, তিনি হলে রউফ সাহেব। সম্ভবত ষ্টেশন অফিসার পদে আছেন।
অ:ক: শিরোনামে জিসান নামটা ইচ্ছে করে দিলাম। এই নামটা ব্যবহার করলে , সরাসরি বা আভাসে ইঙ্গিতে কেউ লিখলেও নাকি সামুতে হিট হওয়া যায়। দেখি আমি হিট হতে পারি কিনা ?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২৭